“মহাদেবপুরে চিকিৎসকের ভুলে মায়ের মৃত্যু নবজাত শিশু মৃত্যু শয্যায়”
নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি –
নওগাঁর মহাদেবপুরে প্রাইভেট ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ৩ দিন পার হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভুমিকা নিয়ে সচেতন মহল ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। উপজেলা শহরে দীর্ঘদিন ধরে ব্যঙ্গের ছাতার মতো গড়ে ওঠা
কয়েকটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় প্রায় দিন রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উদাসীনতায় এমন অকাল মৃত্যু ঘটছে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।গত ২১ অক্টোবর শুক্রবার বিকোলে এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলা শহরের তমিজ উদ্দীন ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড ক্লিনিকে। ক্লিনিক কতৃপক্ষ জানান, উপজেলার সফাপুর ইউনিয়নের চকগৌরী গ্রামের মাহমুদুল ইসলাম রনী তার ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মোসাঃ আঁখি আখতারকে (২২) এদিন বিকেলে ক্লিনিকে ভর্তি করায়।সূত্র মতে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ আলট্রাসহ সকল পরীক্ষা অন্তে সিজারের মাধ্যমে আঁখির গর্ভে থাকা কন্যা শিশু সন্তানকে দ্রুত বেড় করার জন্য তার পরিবারের সদস্যদের তাগিত দেয়। ক্লিনিক কতৃপক্ষের তোরজোরে কালক্ষেপ না করে বিকেল ৫ টার দিকে আঁখিকে সিজারের মাধ্যমে (অপারেশন) করা হয়।অভিযোগ রয়েছে ডাঃ মেরীনা আখতার ওই সিজার অপারেশন করার কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি এ সময় অনুপস্থিত ছিলেন।সূত্র মতে ডাঃ মেরীনা আখতারের অনুপস্থিতিতে ওই ক্লিনিকের জনৈক এক চিকিৎসক এ অপারেশন করেন। এক পর্যায়ে ওই চিকিৎসক আঁখির পেট কেটে একটি কন্যা সন্তান বেড় করেন। নবজাতক কন্যা সন্তানের কান্নার আওয়াজ শোনার আগেই হতভাগ্য মা আঁখি আখতার অপারেশন থ্রিয়েটারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। তাৎক্ষনিক এ মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতার রোষানল থেকে রক্ষা পেতে প্রায় ৩ ঘন্টা অপারেশন থ্রিয়েটারে রাত ৮ টা পর্যন্ত আঁখি আখতার ভালো আছে এ কথা বলে আটকে রাখে ক্লিনিক কতৃপক্ষ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়,রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ক্লিনিক কতৃপক্ষ ওই প্রসূতির পরিবারের লোকজনকে জানায় রোগীর অবস্থা ভালো নয়।তাকে দ্রুত রাজশাহী মোডিকেলে নেয়ার পরামর্শ দেন। এ সময় ক্লিনিক কতৃপক্ষ একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে তাদের এক সদস্যসহ আঁখির পরিবারের কয়েক সদস্য রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।উপজেলার সফাপুর বেহুলা তলা এলাকায় মাইক্রো পৌঁছলে সেখানে থাকা ক্লিনিক কতৃপক্ষের ওই ব্যাক্তি হটাৎ বলে ওঠেন আঁখি আখতারের পালস্ পাওয়া যাচ্ছে না।আঁখি আখতার মারা গেছে।এর আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আঁখির মৃত্যু হয়েছে কিনা পরীক্ষার জন্য নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক কোন মন্তব্য না করে তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ক্লিনিক মালিক ডাঃ সাজ্জাদ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন এ নিউজটি যেন না হয়, সেই জন্য স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে ম্যানেজ করা হয়েছে।এ সময় ওইসব সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করেন তিনি।ভুল চিকিৎসায় ওই প্রসূতির মৃত্যু হতে পারে দাবী করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ খোরশিদুল ইসলাম বলেন ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে ওঠা এসব ক্লিনিকে প্রায় এমন মৃত্যুর খবর শোনা যায়। ওই ক্লিনিকে প্রসূতি মৃত্যুর খবর শোনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান বলেন দ্রুত প্রয়োজনীয় তদন্ত করে ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ক্লিনিকে প্রসূতি মৃত্যুর খবর শুনেছেন দাবী করে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোজাফফর হোসেন বলেন,অভিযোগ না পাওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা জানান, সফাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শামসুল আলম বাচ্চুর উপস্থিতিতে প্রসূতি আঁখি আখতারের মৃত্যর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ৮৫ হাজার টাকায় আপোষ মিমাংসার অভিযোগ উঠেছে।
সুবীর দাস
নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি।
২২/১০/২২