“ডিমেনশিয়া /স্মৃতিভ্রংশ”- ডাঃ পীযুষ মজুমদার, এম.বি.বি.এস,বি.সি.এস এম,ডি, নিউরোমেডিসিন।
আমার চেম্বারের অভিজ্ঞতা থেকে:-
জনাব রশিদ তালুকদার দীর্ঘ ৩৬ বছর শিক্ষকতার জীবন থেকে অবসরে গেছেন প্রায় ১০ বছর। তার বাড়ির লোকজন বলছে গত তিন বছর ধরে তিনি জিনিস পত্র হারিয়ে ফেলছেন, টাকা পয়সার হিসাব তেমন মনে রাখতে পারছেন না। ইদানীং এই সমস্যা আরো বেশি প্রকট হয়েছে। সকালে কি খেয়েছেন তা দূপুর পেরোতেই বিকেলে ভুলে যান। এ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা কখনো হাসাহাসি আবার রাগারাগি ও করে। নিজের এ অবস্থায় তিনি বিমর্ষ হয়ে যান এবং খিটখিটে স্বভাবের হয়ে যাচ্ছেন।
….এই রোগটির নামই “ডিমেনশিয়া “যা সহজ ভাষায় স্মৃতিভ্রংশ বা চিত্তভ্রংশ বলে থাকে।
১। ডিমেনশিয়া কি?
(ক) এটি একটি “নিউরো সাইকিয়াট্রিক” রোগ যেখানে মস্তিষ্কের স্নায়ুক্ষয় বা দীর্ঘদিন স্নায়ুর অকার্যকারিতার জন্য আক্রান্ত ব্যাক্তির স্মৃতি, বুদ্ধি এমনকি ব্যাক্তিত্বও লোপ পায়। এটি একটি দীর্ঘ মেয়াদি ও ক্রমবর্ধমান রোগ।
২। কাদের হয়?
(ক) জরিপে দেখা গেছে ৬৫ বছরের বেশি ৫ শতাংশ ও ৮৫ বছরের বেশি লোকদের ২০ শতাংশ লোকেরা এই রোগে আক্রান্ত হয়। এছাড়াও যেকোনো বয়সে যেকোনো বয়সের লোক রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি বাংলাদেশে ২০১৫ সালে এই রোগের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৫ লাখ। যাহা ২০৩০ সালে বেড়ে এর সংখ্যা ৯ লাখ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
৩। এই রোগের কারণ কি?
(ক) কিছু ডিমেনশিয়া আছে যেটা ক্রমবর্ধমান এবং এদের সম্পূর্ণ রুপে ভালো করা যায় না। যেমন: আলঝেইমার’স রোগ, লিউ- বডি, ফ্রন্টোটেম্পোরাল, ভাস্কুলার ডিমেনশিয়া, পারকিনসন সিনড্রোম ইত্যাদি। এদের মধ্যে কিছু লোকের বংশগতভাবে ও হয়ে থাকে।
৪। সেকেন্ডারি ডিমেনশিয়া:
এই রোগের সম্পূর্ণভাবে নিরাময় সম্ভব।
(ক)পুষ্টিহীনতা:- শরীরে আয়রন, ফলিক এসিড, ভিটামিন বি১, বি৬, বি১২ এর স্বল্পতা, এলকোহল, নিকোটিন।
(খ) ইনফেকশন: এনসেফালাইটিস, সিফিলিস ও এইডস।
(গ) মেটাবলিক: ডায়বেটিস, থাইরয়েডের রোগ ও অন্যান্য হরমোন জনিত রোগ।
(ঘ)ডিপ্রেশন ও সিজোফ্রেনিয়া।
(ঙ) মস্তিষ্কের টিউমার ও আঘাতজনিত রোগ।
৫। রোগের লক্ষণ:
(ক) সাম্প্রতিক ঘটনা, নাম,চেহারা ভুলে যাওয়া।
(খ) অল্পসময়ের মধ্যে একই প্রশ্ন পুনরাবৃত্তি করা।
(গ) জিনিসপত্র হারিয়ে ফেলা বা ভুল স্থানে রাখা।
(ঘ) অনুভূতি ও ব্যাক্তিত্বের পরিবর্তন।
(ঙ) মনোযোগ নষ্ট হওয়া।
(চ) হারিয়ে যাওয়া।
(ছ) সরল সিদ্ধান্ত গ্রহণে কঠিন হয়ে যাওয়া
(জ) অনেক সময় নিকট আত্মীয়দের চিনতে না পারা।
৬। রোগ নির্নয় ও চিকিৎসা:-
(ক) বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব নয়। তবে দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর ক্রমবর্ধমান গতিকে রোধ করা যায়। এজন্য পারিবারিক ও সামাজিক জনসচেতনতা হওয়া দরকার।
৭। রোগ প্রতিরোধ:-
(ক) ডায়বেটিস, কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
(খ) অ্যালকোহল,ধুমপান পরিত্যাগ করা।
(গ)সবসময় ঘরে বসে না থেকে নিজের পছন্দের কাজ করা।সামাজিক কার্যক্রমে নিজেকে জড়িত রাখা।
(ঘ)বয়স অনুযায়ী সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা।
(ঙ) হরমোন জনিত রোগ ও পুষ্টিহীনতা নিয়ন্ত্রণ করা।
(চ) পরিবারের সদস্যদের এই রোগ সম্পর্কে অবিহিত করতে হবে এবং রোগীর প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠতে হবে।
(ছ)পারিবারিক ও সামাজিক জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :