‘শেরপুরে পশু ও মাছের খাদ্যের উপকরণে ভেজাল সয়লাব’


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২২, ২০২২, ৯:০৬ অপরাহ্ন / ৬৯২
‘শেরপুরে পশু ও মাছের খাদ্যের উপকরণে ভেজাল সয়লাব’
‘শেরপুরে পশু ও মাছের খাদ্যের উপকরণে ভেজাল সয়লাব’
মাসুম বিল্লাহ, শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি:
শেরপুরে পশু ও মাছের খাদ্য তৈরীর প্রধান উপকরণ ডিওআরবি ও রাইচ ব্রানে ভেজালে সয়লাব। প্রতিবছরের তুলনায় এর চাহিদা ও দাম দিগুন হওয়াই বেশি লাভের আশায় ভেজালের দিকে ঝুঁকে পরেছে উপজেলার অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা।ব্যবসায়িরা পশুখাদ্যের তৈরীর প্রধান উপাদান ডিওআরবি ও রাইচ ব্রানের সাথে মেশাচ্ছেন সিক্লি, বালি মাটি, টাইলসের ও
এক প্রকার সিরামিক্সের ধুলা। এতে করে কিছু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভবান হলেও প্রান্তিক খামারিরা ভেজাল উপাদানে তৈরী খাদ্য মাছ, মুরগি বা গবাদি পশুকে খাওনানোর ফলে রোগবালাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তেমনি অতিরিক্ত দামে ফিড কিনে ভালো খরচ করেও মাছ, মুরগী গাভীর গ্রোথ না হওয়ার ফলে গুনতে হচ্ছে বড় ধরনের লোকসান। যার ফলে দিন দিন মাছ, মুরগী
ও গরু পালন থেকে থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছে লোকসানের ভয়ে। এভাবে চলতে থাকলে বাড়বে বেকারের সংখ্যা, অন্যদিকে ঘাটতি হবে আমিষের
প্রাণিসম্পদ বিভাগের ওয়েব সাইট থেকে জানা যায়, দেশের জনসংখ্যার প্রায় ২০% প্রত্যক্ষ এবং ৫০% পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদ খাতের ওপর নির্ভরশীল। প্রাণিজ আমিষের প্রধান উৎস মাংস, দুধ ও ডিমের উৎপাদন বিগত তিন বছরে
যথাক্রমে প্রায় ৭%, ১৪% ও ১২% বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মাংস, দুধ ও ডিমের জন প্রতি প্রাপ্যতা বেড়েছে
যথাক্রমে ১২৬.২০ গ্রাম/দিন, ১৭৬.৬৩ মি.লি/দিন ও ১০৪.২৩ টি/বছর এ উন্নীত হয়েছে যা দেশের ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর
প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
চাহিদাপুরণে প্রাণী খাদ্য উৎস যথেষ্ট না হওয়ায় প্রক্রিয়াজাত ফিডের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি পায়। এতে দুধ বা মাংস
প্রাণিসম্পদ বিভাগের আইন: প্রাণিজ আমিষের ক্রমবর্ধমান
উৎপাদনের জন্য খাদ্যের বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের উপর নির্ভশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দেশে এখন অনেক ফিড মিল অর্থাৎ
পশুখাদ্যের শিল্প গড়ে উঠেছে। এজন্য পশুখাদ্যে প্রানিজ আমিষের উৎস হিসেবে ট্যানারির বর্জ্য ব্যবহার বন্ধের জন্য হাইকোর্টে ৬৯৩০/২০১০ নং রিট দায়ের হয়। হাইকোর্টে উক্ত রিটে পশুখাদ্য মান সুরক্ষার জন্য একটি গাইড লাইন প্রস্তুত করে আদেশ প্রদান করেন। সরকার নিরাপদ মৎস্য ও মাংস উৎপাদনে গুণগত ও মানসম্পন্ন ফিড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রিটের আদেশ বিবেচনা করে “ মৎস ও পশুখাদ্য আইন ২০১০ প্রণয়ন করে। প্রাণিসম্পদ সেক্টরের জন্য পশুখাদ্য বিধিমালা, ২০১৩ প্রণয়ন করে। গুণগতমানের ফিড উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এই আইন ও বিধিমালার আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে। শেরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রনবীরবালা ঘাটপার হতে শালফা পর্যন্ত প্রায় ৪/৫টি গোডাউনে পশুখাদ্যের তৈরীর উপাদান ডিওআরবিতে মেশানো হচ্ছে এক প্রকার সিরামিক্সের ধুলা যার ওজন পাথরের মত। এই ভেজাল ডিওআরবি মজুত করা হচ্ছে মজুমদার প্রডাক্টস ও ওয়েষ্টার্ন ওয়েল মিলের বস্তায় যা দন্ডনিয় অপরাধ। অন্যদিকে শেরুয়া বটতলা হতে ব্রাক-বটতলা পর্যন্ত প্রায় বেশ কয়েকটি
গোডাউন, তালতলা ফরেষ্ট হয়ে শেরুয়া বটতলা রোডের কয়েকটি গোডাউন, মির্জাপুর হতে খানপুর রোডে বিভিন্ন
গোডাউন, মির্জাপুর হতে রানীরহাট এলাকায় গোড়াউন এবং উপজেলার হাইওয়ে রোডের পাশে বিভিন্ন যায়গায় বেশ কয়েকটি গোডাউন, সাউদিয়া পার্করোডে কয়েকটি গোডাউনে একই চিত্র দেখা যায়। পশু খাদ্যের তৈরীর উপাদান ডিওআরবি ও রাইচব্রানে ভেজাল করে বিভিন্ন ফিডমিলে ও সাপ্লায়ারের কাছে বিক্রি হচ্ছে। আর এই ভেজাল পশুখাদ্যের তৈরীর উপাদান দিয়েই তৈরী হচ্ছে মাছ, মুরগি ও গরুর খাদ্য। এই খাদ্য প্রান্তিক খামারিরা মুরগি বা গবাদি পশুকে খাওয়ানোর ফলে
রোগবালাই বুদ্ধির পাশাপাশি কাংখিত ফল পাচ্ছেননা। ফলে মোটাতাজাকরণ সহ দুধ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দেবে। এবং খামারিরা বড় ধরণের লোকসানে পরবেন। তাই এখনই সময় এই সকল অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনেধরার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ি জানান, ডিওআরবি ও রাইচ ব্রানের বাজার বেশি হওয়াই ভেজালে সয়লাব শেরপুর উপজেলা তাই আমিও করছি। বাজার বেশি হওয়ায় এতে করে ১৫ মেট্রিক টন মালামালে ২০ হাজার থেকে ৫০হাজার টাকা পর্যন্ত
লাভবান হওয়া যায়। প্রাণি সম্পদ বিভাগের আইন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান আইন দিয়ে কি হবে? গত ২ মাস আগে অভিযান চালিয়ে দুই বা তিনটি গোডাউনে জরিমানা করেছে। প্রথমে গোডাউন ছিলগালা করা হয় লোকদেখানো কিছু জরিমানা করা হয়। এটা লোকদেখানো ছাড়া কিছুই নয়। কারণ জরিমানা করলেও কিছু লোকের ছত্রছায়ায় আবার গোডাউন খুলে পূর্বের ন্যায় শুরু করা হয় ভেজাল।
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাক্তার রায়হান পিএএ জানান এসব ভেজাল খাবারে পশু ফুডপয়জনে আক্রান্ত হয়।এতে খামারিরা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পেয়ে লোকসানে পড়েন।