রাজশাহী বাঘার একজন সফল বীজ উদ্যোক্তা মোঃ এনামুল হকের গল্প।


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৫, ২০২৩, ৪:৪৬ অপরাহ্ন / ৬০৫
রাজশাহী বাঘার একজন সফল বীজ উদ্যোক্তা মোঃ এনামুল হকের গল্প।

রাজশাহী বাঘার একজন সফল বীজ উদ্যোক্তা মোঃ এনামুল হকের গল্প।
আবুল হাশেম, রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চন্ডীপুর গ্রামের উচ্চ শিক্ষিত কৃষক মোঃ এনামুল হক৷ তৎকালীন সময়ে বিএ (অনার্স) পাশ করে চাকরির পিছনে না ঘুরে পৈত্রিক জমি জমা দেখাশোনা করে কৃষি কাজ নিয়েই ব্যস্ত থাকেন তিনি সবসময়। একমাত্র ছেলে সিয়াম আহম্মেদকে পড়াচ্ছেন ঝিনাইদহের শেখ কামাল টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটিতে।
সংসারের আয়ের উপার্জন শুধুমাত্র কৃষি কাজ। কিন্ত প্রচলিত কৃষির বাহিরে তিনি বাণিজ্যিক কৃষির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে তিনি খরপোষের কৃষিকে নিয়ে যাচ্ছেন লাভজনক টেকসই রূপান্তরের বাণিজ্যিক কৃষির দিকে। স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন তিনি। বিভিন্ন এপস ব্যবহার করে কৃষি বিষয়ক বার্তা গ্রহণ, বালাই ব্যবস্থাপনা, এমনকি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে নিয়মিত কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে রাখেন তিনি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ।
বীজ উদ্যোক্তা মোঃ এনামুলের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি গতানুগতিক কৃষি কাজ না করে কৃষিকে  নিয়েছেন বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে। আবাদ করেন সর্বশেষ উদ্ভাবিত নতুন নতুন জাতের ফসল। তার মূল উদ্দেশ্যই নতুন জাতের বীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণ করা। এতে করে একদিকে যেমন তিনি নতুন জাত সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখছেন, অন্যদিকে আর্থিকভাবেও অনেক লাভবান হচ্ছেন। সম্প্রতি রবি মৌসূমে তার জমিতে গেলে দেখা যায়, উচ্চফলনশীল ক্যানোলা টাইপ বারি সরিষা-১৮, বারি সরিষা-১৪, বিনা সরিষা-৯, বারি গম-৩৩ এর বীজ উৎপাদন প্লট। একই সাথে রোপণ চলছে বোরো মৌসুমের উচ্চ ফলনশীল জিংক সমৃদ্ধ ব্রি ধান-১০২, বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ ও বিনা ধান-২৫ (শেখ রাসেল ধান), বি ধ্রান-৯২, ব্রি ধান-৮১, ব্রি ধান-৬৩, ব্রাক ধান-২ এর বীজ উৎপাদন প্লটের চারা। এছাড়াও তিনি গত আমন মৌসুমে ব্রি ধান-৯০, ব্রি ধান-৭০, ব্রি ধান-৮৪  এবং আউশ মৌসুমে ব্রি ধান-৯৮, ব্রি ধান-৮২ এর বীজ উৎপাদন করেছেন।
এসব বীজ তিনি উপজেলা কৃষি অফিস,  বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং  কোম্পানি থেকে সংগ্রহ করেছেন।
পাট বীজ উৎপাদনের জন্য তিনি করেছিলেন বিজেআরআই তোষা পাট-৮ (রবি-১), বিএডিসি পাট-১ জাতের বীজ উৎপাদন প্লট। পাট বীজ উৎপাদন ও সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখার জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরে পাট অধিদপ্তর থেকে উপজেলার সেরা পাট চাষী হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন। অপ্রচলিত কন্দাল জাতীয় ফসল সম্প্রসারণের জন্য তিনি মাদ্রাজী ওলকপি, মেটে বা গাছ আলুর বীজ ( কন্দ) উৎপাদন করছেন। বীজ উৎপাদন ও বিক্রয়ের জন্য তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে বীজের ডিলারশীপ পেয়েছেন।
এ ব্যাপারে বীজ উদ্যোক্তা এনামুল বলেন, আমি প্রথম দিকে শুধু খাবারের জন্য জমি আবাদ করতাম। কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিসের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জানতে পারি, শুধু খাবার জন্য ধান না করে, যদি বীজের জন্য উৎপাদন করি তাহলে বেশি লাভবান হওয়া যায়। বীজ উৎপাদননের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম কানুন আছে, যা অনুসরণ করতে হয়। এ ব্যাপারে বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শফিউল্লাহ সুলতান মহোদয় আমাকে সার্বিক সহযোগিতা, পরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান করেন। তৎকালীন কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার কামরুল ইসলাম আমাকে নিয়মিত মাঠে এসে এ ব্যাপারে বুদ্ধি পরামর্শসহ প্রদান করেন। অন্যান্য কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ নিয়মিত মাঠে এসে পরামর্শ দেন। বাংলাদেশে ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট এর বৈজ্ঞানিকগণ ও জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিস থেকে অফিসারগণ মাঠ সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। বীজ শোধন, বিজাত বিছাই, বালাই দমন, বীজ সংরক্ষণসহ সার্বিক বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ মোতাবেক বীজ উৎপাদন করে থাকি।
ধানের পাশাপাশি আমি সরিষা, গম, পাটের বীজ, মেটে আলু, ওলকচুর কন্দ উৎপাদন করছি। বীজ উৎপাদন করে আমি প্রচলিত ফসল আবাদের তুলনায় প্রায় ৩-৪ গুণ বেশি লাভবান হচ্ছি। এ ছাড়াও প্রতি মৌসুমে আমার কাছ থেকে প্রতিবেশি প্রায় ২-৩ শ কৃষক বীজ নেয়।  গত বছর আমি সরকারীভাবে পাট অধিদপ্তরকে রবি-১ জাতের পাট বীজ,  বিএডিসিকে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ এর বীজ সরবরাহ করেছি। গত বছর বীজ উৎপাদন করে আনুমানিক প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন, ধান, গম, সরিষা, পাট, ওলের বীজ বিক্রয় করেছেন তিনি।
বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, কৃষক এনামুল একজন আদর্শ অগ্রগামী প্রগতিশীল কৃষক। “খোরপোষের কৃষিকে বাণিজ্যিক রূপদানে” এর বাস্তব উদাহরণ বীজ উদ্যোক্তা এই এনামুল। কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণে বীজ একটি অন্যতম প্রধান নিয়ামক। আর এই মহতী কাজের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সাধুবাদ জানাই এবং ভবিষ্যতে যে কোন সহযোগিতার জন্য কৃষি অফিস সবসময় তাঁর পাশে থাকবে।

ঝাড়ু হাতে রাজশাহীর রাস্তায় ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার।
আবুল হাশেম, রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান কার্যক্রম পরিচালনা করেছে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন। শনিবার বেলা ১১ টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারির পদ্মা লাইব্রেরী থেকে  তালাইমারি শহিদ মিনার পর্যন্ত পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম করা হয়েছে।
পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে রাজশাহীতে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার মনোজ কুমার নিজে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি রাস্তায় পড়ে থাকা বিভিন্ন ময়লা আবর্জনা ঝাড়ু দিয়ে নিজ হাতে পরিষ্কার করেন এবং সেগুলো রাস্তা থেকে বস্তায় ঢুকিয়ে ডাস্টবিনে ফেলে দেন।
পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বারিন্দ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করেন।