“যে গ্রামে মাচাং ঘর বানিয়ে ৬০ পরিবারের বসবাস”


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২০, ২০২২, ৮:৪১ অপরাহ্ন / ৬২৯
“যে গ্রামে মাচাং ঘর বানিয়ে ৬০ পরিবারের বসবাস”

“যে গ্রামে মাচাং ঘর বানিয়ে ৬০ পরিবারের বসবাস”
মোঃ ইব্রাহিম শেখ চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ

রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলার ১ নম্বর ঘিলাছড়ি ইউপির সীমান্তবর্তী একটি দুর্গম পাহাড়ি
জনপদ ‘মিতিঙ্গাছড়ি’। এই গ্রামে বাঁশের তৈরি মাচাং ঘর বানিয়ে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের প্রায় ৬০ পরিবারের বসবাস করছেন। সবগুলো পরিবারের সংসার চলে পাহাড়ে জুমচাষ করে এবং পাহাড়ি কলাসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি বিক্রি করে।
রাজস্থলী সদর উপজেলা থেকেই প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে এ গ্রামটি। পাহাড়ি গ্রাম নিয়ে প্রতিষ্ঠিত দুর্গম মিতিঙ্গাছড়ি জনপদ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাঙ্গামাটির রাজস্থলী উপজেলা থেকে বিলাইছড়ি উপজেলার পারুয়া পর্যন্ত একটি সীমান্তবর্তী সড়ক
নিমার্ণাধীন রয়েছে। রাজস্থলী থেকে প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে দুর্গম মিতিঙ্গাছড়ি গ্রামটি। উঁচু নিচু পাহাড় বেয়ে
যেতে হয় এ গ্রামে। যেতে প্রায় ঘণ্টা খানেক সময় লাগে। পাহাড়ের ঢালে ঢালে বাঁশের তৈরি মাচাং ঘর বানিয়ে বসবাস
করছেন, ত্রিপুরা সম্প্রাদয়ের মানুষ। জানা গেছে, বর্তমান আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় পিছিয়ে রয়েছে এই দুর্গম গ্রামটি। খাওয়ার পানির একমাত্র ভরসা পাহাড়ি ঝিরি-ছড়া এবং সবাই পাহাড়ে জুম চাষ করে এবং পাহাড়ি ফলমূল খেয়ে এবং বেচা-কেনা করে জীবন জীবিকা নির্বাহ। জানা গেছে, কেউ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের কাঁধে করে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ ফুট উপরে এসে মূল সড়ক থেকে গাড়ি করে রাজস্থলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। মিতিঙ্গাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা ভাগ্যরাম ত্রিপুরা জানান, এখানকার একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা হলো উঁচু-নিচু পাহাড় বেয়ে যাতায়াত করা। তাদের উৎপাদিত ফসল বা ফলমূল কাঁধে করে ৪০০ থেকে ৫০০ ফুট উঁচু পাহাড় বেয়ে বাজারে নিতে খুবই কষ্ট হয়। এগুলো বেচা-বিক্রি করে তাদের কোনো রকম সংসার চলে।
একই গ্রামের বাসিন্দা জয়মনি ত্রিপুরা জানান, এ দুর্গম গ্রামে মানুষের একমাত্র আয়ের উৎস জুম চাষ করা এবং পাশাপাশি
বিভিন্ন শাক-সবজি রোপণ করা। তবে গ্রামটি বেশ দুর্গম হওয়ায় খাওয়ার পানির অভাব থাকে। ছড়া এবং ঝিরি থেকে
মানুষ পানি পান করে। ফলে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয় এ গ্রামের মানুষ।
রাজস্থলী উপজেলার ১ নম্বর ঘিলাছড়ি ইউপির সদস্য জয়োরাম ত্রিপুরা জানান, খাওয়ার পানি সংকটে প্রতিনিয়িত এ গ্রামে
রোগ বালাই লেগেই থাকে। কোনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং কমিউনিটি সেন্টার না থাকায় রোগীদের নিয়ে হিমশিম খেতে হয়।
রোগীদের নিয়ে উঠতে হয় প্রায় ৪০০ ফুট উঁচুতে।
রাজস্থলী উপজেলার ১ নম্বর ঘিলাছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রবার্ট ত্রিপুরা জানান, মিতিঙ্গাছড়ি গ্রামটি বেশ দুর্গম। তাদের
খাওয়ার পানি পান করতে হয় ছড়া বা ঝিরি থেকে এবং বর্ষাকালে ছড়ার পানিও ঘোলাটে হয়ে গেলে পানি পান করা খুবই
কষ্ট সাধ্য হয়। এই পানি পান করলে ডায়ারিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগ সৃষ্টি হয় তাদের মাঝে।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী জানান, উন্নয়নের ক্ষেত্রে, স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ও প্রাথমিক
শিক্ষার ক্ষেত্রে পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রধান্য দিয়ে থাকেন। আর এ অঞ্চলে যদি এসব সমস্যা থাকে তাহলে তিনি বিশেষভাবে
গুরুত্ব সহকারে দেখবেন।

“গৌরবের ৫৭ বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়”
মোঃ ইব্রাহিম শেখ চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ

প্রকৃতির কোলজুড়ে অবস্থিত দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয় (চবি)। আয়তনে দেশের সর্ববৃহৎ ২১শ একর ভূমির ওপর অবস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু
হয় ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর। পাহাড়ঘেরা, শাটলের এই ক্যাম্পাস আজ পা রেখেছে ৫৭ বছরে। সাফল্যের এক
দীর্ঘ যাত্রায় এ জ্ঞান মাতৃকা পেছনে ফেলে এসেছে ৫৬টি বছর।
শত বাঁধা আর প্রতিবন্ধকতাকে মাড়িয়ে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। ৪টি
বিভাগ আর ৮ জন শিক্ষক নিয়ে শুরু করা চবিতে বর্তমান বিভাগ রয়েছে ৪৮টি। ৯টি অনুষদ আর ছয়টি
ইনস্টিটিউটে বর্তমানে ২৬ হাজার ৬০৪ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধার জন্য
রয়েছে ১২টি হল।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করে। বোটানিক্যাল গার্ডেন, ঝুলন্ত ব্রিজ, ফরেস্ট্রি,
চালন্দা গিরিপথ, সুইচ গেট এবং ঝর্ণাসহ পুরো ক্যাম্পাস পাঠ্যসূচির সহচর বিনোদন কেন্দ্র পাহাড়ি আঁকাবাঁকা
পথে ছুটে চলছে শাটল ট্রেন।
শাটলের ক্যাম্পাস:সারা বিশ্বের সঙ্গে স্বতন্ত্রতা রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। শহর থেকে ক্যাম্পাসের দূরত্ব প্রায়
২২ কিলোমিটারের। তাই শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ১৯৮০ সালে চালু হয় শাটল ট্রেন। পৃথিবীর সব
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্রতা এখানেই। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকো বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য ছিল নিজস্ব ট্রেন। কিন্তু বর্তমানে তা বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ই পৃথিবীর
একমাত্র শাটল ট্রেনের বিশ্ববিদ্যালয়।
চবি জাদুঘর:১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ জাদুঘরে রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, কামরুল হাসানসহ বিখ্যাত
সব শিল্পীদের শিল্পকর্ম, যা সহজেই একজন শিল্পসচেতন ব্যক্তির মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম। রয়েছে বিভিন্ন ধরনের
প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। অষ্টম থেকে ১২শ শতাব্দীর কষ্টিপাথরের, কাঠের, কাদামাটির ও বিষ্ণু মূর্তিসহ প্রাচীন
জীবাশ্মের সংগ্রহ রয়েছে এ জাদুঘরে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ‘প্রাণিবিদ্যা জাদুঘর’ ও সমুদ্র
বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ‘সমুদ্র সম্পদ জাদুঘর’ রয়েছে।
গ্রন্থাগার:বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষাধিক বই ও ৪০ হাজার ই-বুকের বিরাট
এক সংগ্রহ। আছে বাংলা, সংস্কৃত, আরবি, ফারসী, উর্দু ভাষায় লিখিত সুপ্রাচীন সব পাণ্ডুলিপি। শেখ মুজিবুর
রহমানকে নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে লেখা বইয়ের সংগ্রহে রয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার।
স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্যসমূহ:চবিতে রয়েছে বেশকিছু স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য। তন্মধ্যে, জয় বাংলা ভাস্কর্য, কেন্দ্রীয় শহীদ
মিনার, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ, স্বাধীনতা স্মৃতি ম্যুরাল, স্মরণ স্মৃতিস্তম্ভ, মাস্টার দা সূর্যসেন স্মৃতিস্তম্ভ ও বঙ্গবন্ধু চত্বর
উল্লেখযোগ্য।চবির ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ একটি সড়ক। শাটল ট্রেন:১৯৮০ সালে চালু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এটি। বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে দুটি শাটল ট্রেন রয়েছে, যা বটতলি রেলওয়ে স্টেশন থেকে চবি রেলওয়ে স্টেশন এবং সেখান থেকে পুনরায় বটতলি রেলওয়ে স্টেশনে যাতায়াত করে। প্রতিটি ট্রেনেই ৯টি করে বগি যুক্ত রয়েছে।
জীববৈচিত্র্য:জীববৈচিত্র্যে অনন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়। রয়েছে হরিণ, সজারু ও বুনো শুকরসহ প্রায় ২০ প্রজাতির
স্তন্যপায়ী প্রাণী। এছাড়াও বিভিন্ন প্রজাতির সাপ, পাখি ও অস্তন্যপায়ী প্রাণীর বসবাস রয়েছে এই ক্যাম্পাসে।
৫৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল
মিলিয়ে ৫৬ বছর পার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে আমি আমার
সাধ্যমত চেষ্টা করে যাবো। আমার সুদক্ষ সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে পথ চলতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গুরু দায়িত্ব
রাষ্ট্রপতি আমার কাঁধে দিয়েছেন, তা সৎ ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবো। আর এ পথচলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী,
কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে একটি পরিবারের মতো এগিয়ে যেতে চাই।

“কমেছে মুরগি ও ডিমের দাম”
মোঃ ইব্রাহিম শেখ চট্টগ্রাম ব্যুরোঃ

এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিম ও মুরগির দাম কমেছে। তবে বেড়েছে বেশকিছু
ভোগ্যপণ্যের দাম।শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) চট্টগ্রাম নগরের কাজির দেউড়ি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৫০ কেজির
প্রতিবস্তা চালে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া চাল, ডাল, আটা, ময়দা, তেল, চিনি, ছোলার দামও
বেড়েছে। কমেছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম।
বাজারে শীতকালীন সবজি শিম ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পটল, করলা, বেগুন, লতির কেজি ৭০
থেকে ৮০ টাকা। ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিপিস ৮০ থেকে ৭০ টাকা, টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, দেশি আলু
বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা কেজি দরে।
সবজি বিক্রেতা লোকমান হোসেন বলেন, বাজারে নতুন শিম এসেছে। তাই দাম একটু বেশি। এর আগে পুরাতন
শিম বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকায়। অন্যান্য সবজির দাম আগের চেয়ে কমেছে।
বাজারে কমেছে পেঁয়াজের দামও। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায়, যা সপ্তাহখানেক
আগে ৫০ টাকা ছিল। আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি মানভেদে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। দেশি রসুন
কেজিতে ১০ টাকা কমে ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। চায়না আদা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ১৯০
টাকায়।
এ ছাড়া বাজারে ফার্মের ডিম প্রতি ডজন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হতো ১৩০ টাকায়।
ব্রয়লার মুরগি কেজি ১৬০ টাকা। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১৭০-১৮০ টাকায়। এছাড়াও সোনালি মুরগি
কেজিপ্রতি ২৯০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর আগে বিক্রি হয়েছে ৩২০ টাকায়। দেশি মুরগী ৪৭০ টাকা, গত
সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকায়।
বিক্রেতা মাঈনুদ্দীন বলেন, আগের চেয়ে ডিম ও মুরগির দাম কমেছে। ডিম ডজন প্রতি ১০ টাকা কমেছে।
সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে ডিম ও মুরগির দাম আরও কমার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি।