মোংলায় ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন: ফাঁটল ধরেছে আশপাশের জমি ও বাড়িঘরে, ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে আশপাশের জমি ও বসত ঘরবাড়ী।
মোঃ শামীম হোসেন- খুলনা-
মোংলায় সরকারী খালে আত্মঘাতী ড্রেজার বসিয়ে ভূগর্ভস্থ বালু উত্তোলন করায় ফাঁটল ধরে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে আশপাশের জমি ও বসত ঘরবাড়ী। এনিয়ে সেখানে মঙ্গলবার দুপুরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন ভুক্তভোগী গ্রামবাসী। এদিকে সরকারী খালে আত্মঘাতী ড্রেজার বসানো ও আশপাশের লোকজনের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও তারা কোন প্রকার ব্যবস্থা না নেয়ায় জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগী গ্রামবাসী জানান, উপজেলার সুন্দরবন ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশতলা বাজার সংলগ্ন সরকারী পুটিমারী খালে (এক সময়ের নদী) আত্মঘাতী ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছেন সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বর জোছনা বেগমের ভাগ্নে মানিক। আর মানিককে সরকারী খাল থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছেন সুন্দরবন ইউপি চেয়ারম্যান একরাম ইজারদার। বেআইনিভাবে বালু উত্তোলণের বিষয়ে ড্রেজার মালিক মানিক বলেন, আমাকে চেয়ারম্যান একরাম ইজারদার খাল থেকে বালু উত্তোলন করে রাস্তায় দেয়ার জন্য বলেছেন, তার কথা মতই কাজ করছি। সুন্দরবন ইউপি চেয়ারম্যান একরাম ইজারদার বলেন, সরকারী খাল থেকে বালু উত্তোলনও করা যাবে, আর উত্তোলিত বালু রাস্তায়ও দেয়া যাবে। রাস্তায় মুলত কেনা ধুলা বালু (শুকনো ঝরঝরে বালু) দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে খালের কাঁদা মাটি। এনিয়ে ক্ষোভ রয়েছে স্থানীয়দের মাঝেও। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো: জাফর রানা বলেন, উত্তর বাঁশতলায় ২৭শ ফুট (১ কিলোমিটার) ইটের সোলিং রাস্তা সংস্কারের জন্য ৯/১০ মেট্টিক টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আর ওই রাস্তায় কেনা বালু দিতে হবে, আত্মঘাতী ড্রেজারের মাটি দেয়ার কথা না। এমন করছে আমার জানা নেই, এমন কাজ করা হলে খতিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাস্তার ঠিকাদার শহিদুল ফকির বলেন, আমাকে চেয়ারম্যান একরাম ইজারদার ও পিআইও জাফর রানা যেভাবে বলেছেন আমি সেভাবেই কাজ করাচ্ছি। ভুক্তভোগী গ্রামবাসী আলমগীর শেখ, মালেকা বেগম, মাহিরা বেগমসহ আরো নারী-পুরুষ অভিযোগ করে বলেন, আত্মঘাতী ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় খালের পাড়ের জমি ও বাড়ীঘরের মধ্যে ফাঁটল ধরেছে। এর প্রতিবাদে গ্রামবাসী মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। কিন্তু তারপরও প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় বহাল তবিয়তে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের কাজ। মুলত চেয়ারম্যানের দাপটের কাছে অনেকটা অসহায় স্থানীয় প্রশাসনের কর্তারা বলেও অভিযোগ গ্রামবাসীর। প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়ার বক্তব্য শুধু মুখে মুখেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: হাবিবুর রহমান বলেন, সরকারী খালে আত্মঘাতী ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন যা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে করা হচ্ছে। সরেজমিন দেখে অতিসত্বর ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশ বলেন, বিষয়টি আমি দেখছি।

উকরি বিলে সারস, গাঙচিল, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখি অবাধ ওড়াওড়ি, তাদের কলকাকলিতে মুখর হয় পুরো বিল।
মোঃ শামীম হোসেন – খুলনা
প্রতি বছর শীতের শুরুতেই দূরদুরান্ত থেকে পাখিগুলো আসে আশ্রয় ও খাদ্যের আশায়। তাদের কলকাকলিতে মুখর হয় পুরো বিল। বিস্তীর্ণ জলরাশির মাঝে কচুরিপানা, শাপলা, শালুক আর পদ্ম পাতা। সেসবের ফাঁকে ফাঁকে বসা বক, রাঙা ময়ূরী, ছোট স্বরালী, সারস, গাঙচিল, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখি। কখনও জলকেলি, কখনও মুক্ত আকাশে ওড়াওড়ি, আবার কখনও মাছ শিকারের জন্য ওত পেতে থাকা। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখির এমন বিচরণ চোখে পড়বে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী উকড়ি বিলে। প্রতি বছর শীতের শুরুতেই দূরদুরান্ত থেকে পাখিগুলো আসে আশ্রয় ও খাদ্যের আশায়। তাদের কলকাকলিতে মুখর হয় পুরো এলাকা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উকড়ি বিলের চারপাশে শাপলা আর পদ্ম পাতা জন্মেছে অনেক আগে, যেগুলোতে নিরাপদ আশ্রয় গড়ে তুলেছে পাখিরা। দিনভর বিলের বিভিন্ন প্রান্তে শামুক, মাছ শিকার করে তারা। পাখিদের এ মেলা দেখতে প্রতিদিন বিলে ভিড় করেন অনেকে, যাদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে নৌকার। বিলসংলগ্ন করিঞ্চা গ্রামের করিম শেখ বলেন, ‘আমাদের বিলে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাজার হাজার পাখি উড়ে বেড়ায়। দেখতে অনেক ভালো লাগে। ‘শাপলা পাতার ফাঁকে ফাঁকে হাজার হাজার পাখি বসে থাকে; সারা দিন বিলে ঘুরে বেড়ায়।’ একই গ্রামের তাজরুল হোসেন বলেন, ‘এখানে বিলের পাখি দেখতে অনেকেই আসে। আগে পাখি শিকার করতে মানুষ আসত, কিন্তু এখন বিলের ইজারাদার কবীর হোসেনের কঠোরতার কারণে কেউ এটা করতে পারে না। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির লোকজনও পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান করে। কোনো উৎপাত না থাকায় এখানে পাখিদের নিরাপদ আশ্রয় তৈরি হয়েছে।’ ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর থেকে পাখি দেখতে আসা লিটন হাওলাদার বলেন, পাখির প্রতি আমার আলাদা একটি ভালোবাসা কাজ করে। এখানে প্রচুর পরিমাণ দেশি-বিদেশি পাখি আছে শুনে দেখতে এসেছি। ‘খুব ভালো লাগছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখে। এখানে পাখি দেখার জন্য নৌকার ব্যবস্থাও আছে।’ বিলের ইজারাদার কবীর হোসেন বলেন, ‘করিঞ্চা গ্রামের এই বিলের আয়তন প্রায় ২২৫ একর। এখানে পাখি রয়েছে ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির। পাখির দেখভাল করার জন্য আমাদের এখানে যারা কাজ করে তাদের বলা হয়েছে। কেউ যেন উৎপাত না করতে পারে, সে জন্য আমরা সব সময় সচেতন থাকি। আসলে পাখির সঙ্গে আমাদের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। আগামীতে কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে, সে ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চাইলে যেন সঠিক সময়ে পাই।’
আপনার মতামত লিখুন :