মেহেরপুরে যুব মহিলা লীগের উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ২১, ২০২৩, ৫:৫৩ অপরাহ্ন / ৫৭৬
মেহেরপুরে যুব মহিলা লীগের উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মেহেরপুরে যুব মহিলা লীগের উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মাজিদ আল মামুন, মেহেরপুর-
সরকারের সাফল্য ও জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে মেহেরপুর জেলা যুব মহিলা লীগের উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি), দুপুরের দিকে মেহেরপুর সদর উপজেলার গোপালপুর স্কুল মাঠে এ উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, শ্যামপুর ইউনিয়ন যুব মহিলা লীগের সভাপতি ফজিলা খাতুন।
বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন এমপি’র পত্নী ও বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য সৈয়দা মোনালিসা ইসলাম।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, শ্যামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতিন, সদর উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি ও সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান লতিফুন্নেসা লতা প্রমুখ।
প্রধান অতিথি সৈয়দা মোনালিসা ইসলাম তিনার বক্তব্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ছেন এবং এই মেহেরপুরের সকল উন্নয়ন করছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে মেহেরপুরের উন্নয়নের কাজ করছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি।
তিনি বলেন, আপনারা উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করবেন। এ সময় যুব মহিলা লীগের হাজারো নেতাকর্মীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
মাজিদ আল মামুন
মেহেরপুর প্রতিনিধি
০১৯১৫-৩৫১৪৯৮
মেহেরপুরে সেতু নির্মাণের ১০ মাস পরেও কমেনি ভোগান্তি।
মাজিদ আল মামুন, মেহেরপুরঃ
মেহেরপুরে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার ১০ মাস পার হলেও সংযোগ সড়ক না হওয়াই প্রায় ৯ কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে ২ জেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষকে। ফলে চরম ভোগান্তির মধ‍্যে পড়েছে দু’টি জেলার মানুষ।
সেতুটির আশেপাশের বাসিন্দারা বলছেন, দীর্ঘ ভোগান্তির পর সেতু পেলাম কিন্তু ১০ মাস অতিবাহিত হলেও পেলাম না সংযোগ সড়ক। এতে আমাদের ভোগান্তি কমেনি বরং পূর্বের বাঁশের তৈরি ফরাসই ভালো ছিলো।
সেতু নির্মাণকারী (এলজিইডি) এর দাবি সেতু নির্মাণের পূর্বে যারা জমি প্রদান করতে চেয়েছিল তারা এখন বিমুখ হওয়াই সংযোগ সড়কটি নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।
জমি প্রদান করতে চাওয়া মালিকদের দাবি, আমাদের জমি সেতুর জন‍্য লাগলে এখনি দিবো। তবে তার জন‍্য আমাদের জমির ন‍্যায‍্য মূল‍্য দিয়ে নিতে হবে।
সরোজমিনে দেখা যায়,  মাথাভাঙ্গা নদীর উপরে মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া এ ২ জেলার মানুষের জন‍্য তৈরী  (মধুগাড়ী-বেতবাড়ীয়া) সংযোগ সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ৯ মাস পূর্বে। সেতুটির কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পাশে সংযোগ সড়ক তৈরি হলেও সংযোগ সড়ক তৈরি হয়নি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা অংশে। যার ফলে সেতু নির্মাণ হলেও ভোগান্তি কমেনি দু’পাড়ের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের। ফলে চিকিৎসা সেবা কিংবা ফসলাদি নিয়ে এপারের মানুষকে ওপারে যেতে হলে ৯ কিলোমিটার  ঘুরে আসতে হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা এলজিইডি অফিসের তথ‍্যমতে, মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলাধীন (২০১৯-২০২০) অর্থ বছরে বামুন্দী এইচডি হতে প্রাগপুর জিসি ভায়া মধুগাড়ী ঘাট সড়কের মাথাভাঙ্গা নদীর উপর ১০১০০ মিটার চেইনেজে ৭৫ মিটার দীর্ঘ (PASC) গার্ডার ব্রীজ নির্মাণ করে, গাংনী উপজেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী (এলজিইডি) এবং এই সেতুটির ব‍্যায় ভার ধরা হয় ৭,২৯,৩২,৯৭৯.৭২৪ টাকা।
দৌলতপুর উপজেলার আদাবাড়ীয়া মাধ‍্যমিক বিদ‍্যালয়ের শিক্ষিকা ফেরদৌসী আক্তার জানান, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গাংনী ও দৌলতপুর এ ২ উপজেলার শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে। মাথাভাঙ্গা নদীর উপরে ব্রীজটি নির্মাণ হওয়াতে শিক্ষার্থীরা সুবিধা পাবে এবং ২ জেলার মানুষের মধ‍্যে যোগাযোগ ব‍্যবস্থা আরো ভালো হবে। তবে হঠাৎ ঘুরতে গিয়ে দেখলাম ব্রীজে উঠে ব্রীজ থেকে আর নেমে যাওয়ার কোন সড়ক নেই। চরম ভোগান্তিতে আছে এই এলাকার মানুষ। আমাদের দিকের সংযোগ বেশ আগেই হয়ে গেছে।
দৌলতপুর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের মুরগি ব‍্যবসায়ী রমজান আলী জানান, আমি নদীর এপারে গাংনী উপজেলায় প্রায় ৪০ বছর ধরে হাঁস, মুরগি ও কবুতর বেচাকেনা করতে আসি। ব্রীজ হওয়ার আগে কখনও বাঁশের তৈরি ফরাসে, আবার নদীতে পানি বেশি হলে, তখন আসতাম নৌকাতে। এখন ব্রীজ হয়ে পড়ে গেছি বড় বিপদে। ঐ উচুতে সাইকেলে মুরগির ঝাকা নিয়ে ওঠা যায় না। তাই এদিকে আসার সময় ৮ মাইল রাস্তা ঘুরে এসেছি। এখন মুরগির ঝাকা বাদে শুধু সাইকেল নিয়ে ১ ব্যক্তির সহযোগিতায় ঠেলে এপারে আসলাম। ২৫ মিনিটের পথ অথচ মুরগি নিয়ে যেতে সময় লাগলো এক ঘন্টারও বেশি।
গাংনী উপজেলার সবজি চাষী মোমিনুল হক জানান, মাথাভাঙ্গা  নদীর এপাশ-ওপাশ দু’দিকেই আমাদের জমি রয়েছে। এসব জমিতে সবজি চাষ করি এবং দৌলতপুর ও গাংনী এ ২ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে তা বিক্রি করি। যখন নদীতে ব্রীজ ছিলো না। তখন নৌকা অথবা বাঁশের তৈরি ফরাসের উপরে যাতায়াত করতাম। এখন তাও পারছি না। সবজি বোঝাই  ভ‍্যান গাড়ি ৮ কিলোমিটার ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে হচ্ছে। এতে খরচ ও ভোগান্তি দু’টোই বাড়ছে। তাই খুব দ্রুত সংযোগ সড়কটির কাজ সম্পন্ন হওয়া দরকার।
৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা জমেলা খাতুন জানান, আমার বাপের বাড়ি গাংনী থানার বেতবাড়ীয়া গ্রামে আর শশুর বাড়ি ওপারের দৌলতপুর থানার মধুগাড়ী গ্রামে। আমি আগে নদীতে নৌকায় পার হইতুক। আজ আমার ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াইতে এইছি। নতুন ব্রীজে রাস্তা নাই। তাছাড়া মাটি থেকে খুব উইচু। আমাকে এক ছেলে হাত ধইরি নামি দি গেলো। আমি বুইড়ু মানুষ এতো উইচুতে উঠতে পারি নাকি।
সেতু তৈরির সময় জমি দিতে চাওয়া জমির মালিক জামিরুল ইসলাম জানান, আমাদের এলাকার মাথাভাঙ্গা নদীর উপরে যে ব্রীজটি নির্মাণ হয়েছে। এ ব্রীজের নিচ দিয়ে আমাদের শরীকানা ৪০ বিঘা জমি রয়েছে। ব্রীজটি হলে মানুষের ভোগান্তি কমে যাওয়ার পাশাপাশি আমাদের জমিগুলোর মাণ বেড়ে যাবে। তাই আমরা ব্রীজের জন‍্য জমি দিতে ইচ্ছুক। তবে আমাদের জমির যে ন‍্যায‍্য বাজার মূল‍্য তা আমাদের দিতে হবে।
গাংনী উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ফয়সাল আহমেদ জানান, সেতু নির্মাণের পূর্বে স্থানীয়দের সাথে আলাপ আলোচনা করেই কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। তবে বতর্মান সময়ে সেতুর কাজ শেষ করে, সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে গেলে যারা জমি প্রদান করতে চেয়েছিলেন তারা বতর্মানে আপত্তি জানাচ্ছেন। তারা প্রচলিত বাজার মূল‍্যের চেয়ে দ্বিগুণ দাম চাচ্ছেন। তাই আমরা (এলজিইডি) পক্ষ থেকে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি, ভূমি অধিগ্রহণের জন‍্য।
মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস‍্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকন এমপি জানান, মাথাভাঙ্গা নদীর উপর দিয়ে বাঁশের তৈরি অস্থায়ী সাঁকোতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতো কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলার লক্ষাধিক মানুষ। এখানকার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো, একটি সেতু এবং সেতু নির্মাণের জন‍্য সে সময় স্থানীয় জমি দাতারা জমি দিতেও সম্মত হয়েছিলো। তবে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরে তারা এখন বেকে বসেছে যা কারোর কাম‍্য নয়।
মাজিদ আল মামুন
মেহেরপুর প্রতিনিধি
০১৯১৫৩৫১৪৯৮