“বিকাশ প্রতারণা করে রাজমিস্ত্রি দিনমজুর এখন কোটিপতি”


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২৭, ২০২২, ৫:৫০ অপরাহ্ন / ২৮৩
“বিকাশ প্রতারণা করে রাজমিস্ত্রি দিনমজুর এখন কোটিপতি”
“বিকাশ প্রতারণা করে রাজমিস্ত্রি দিনমজুর এখন কোটিপতি
শ্রীপুর, (মাগুরা) প্রতিনিধি –
মাগুরা শ্রীপুরে বিকাশ প্রতারণার মাধ্যমে ভ্যান চালক, দিনমজুর ও কৃষক থেকে হয়েছে কোটিপতি। উপজেলার মহেশপুর এখন বিকাশ চক্রের গ্রাম হিসেবে খ্যাত। সামাদ মণ্ডল, কামরুল মণ্ডল, ইলিয়াজ খাঁ, রিপন মণ্ডল, রসুল মণ্ডল, সুমন মণ্ডল, রিয়াজ, ফরিদ শেখ, আব্দুলাহসহ বেশ কয়েকজন মিলে গড়ে উঠেছে বিকাশ প্রতারক চক্র। এছাড়াও আশেপাশের সানবান্দা, মালাইনগর, আনন্দনগর, গোয়ালদা, চরগোয়ালদা গ্রামের শত শত যুবক এই চক্রের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। এই চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন স্পটে প্রতারণা করে আসছে। এদের অন্যতম প্রশ্রয়দাতা এলাকার দাউদ শেখ টিক্কা নামে এক ব্যক্তি। সে নিজে তার জামাই ইলিয়াস খাঁকে  দিয়ে এই প্রতারণার ব্যবসা করান। দাউদ শেখ কোর্টের মৌরি পরিচয় দিলেও মূলত তার সে ধরনের কোন পরিচয় পত্র নেই বলে জানাগেছে। এই দাউদ শেখ অরফে টিক্কার নামেও রয়েছে প্রতারণা ও মাদক মামলা। বিকাশ প্রতারণার এই  চক্রটি বিভিন্ন সময় প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের অনেকের নামে প্রতারণা মামলা হয়েছে, অনেকে জেল ও খেটেছে। এছাড়া উপজেলার বরিশাট, বরইচারা, চৌগাছি, চর-চৌগাছি, সোনাতুন্দীসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে বিকাশ প্রতারণার সক্রিয় সদস্যরা। দেশের বিভিন্ন এলাকায় লোক আছে এই চক্রের। প্রতিমাসে বেতন দেওয়া হয়। তারা বিভিন্ন এলাকার বিকাশের দোকান থেকে গোপনে টাকা লেনদেনের খাতার ছবি তুলে পাঠিয়ে দেয় এই চক্রের কাছে। পরে এ সকল নাম্বারে ফোন করে পাতা হয় প্রতারণার ফাঁদ।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শ্রীপুর উপজেলার দ্বারিয়াপুর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামে বিকাশ প্রতারক চক্রের সদস্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতারণার মাধ্যমে গাড়ি-বাড়ি করেছে, হয়েছে কোটিপতি। এক সময় যারা রাজমিস্ত্রি, দিনমজুরি, ভ্যান চালানো, খেয়া ঘাটে নৌকা চালাতো এ ব্যবসা করে এখন তারা কোটিপতি।
বিকাশ প্রতারক চক্রের প্রধান নেতৃত্বদানকারী   সামাদ মণ্ডল এক সময় রাজমিস্ত্রি কাজ করতো। সামাদ মণ্ডলের বাবা কেসমত মন্ডল (ফকির) পেশায় ছিল ভাঙ্গা নৌকা মেরামতকারী। কিন্তু তার ছেলে কোটিপতি হওয়াই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ সমাদ মণ্ডল গোয়ালদা বাজারের পাশে ২০ লক্ষ টাকা মূল্যে জমি কিনেছে। তিনি ৩৬ লক্ষ টাকার একটি হেক্সামিটার এবং ১৮ লক্ষ টাকায় একটি মাইক্রো গাড়ির মালিক। এছাড়াও অনেক সম্পত্তির মালিক সে। বিভিন্ন সম্পত্তির মালিকানা নিজের ও আত্নীয় স্বজনের নামে করেছে। তিনি ২০১৭ সালে সূত্রাপুর থানার একটি প্রতারণা মামলায় ৩ মাসের জেলও খেটেছে। কামরুল মণ্ডলের বাবা ওয়াজেদ মণ্ডল পেশায় একজন বাবুর্চি। বড় ছেলে কামরুল পেশায় বিকাশ প্রতারক। তার ছেলে এই ব্যবসা করে অনেক সম্পত্তির মালিক হয়েছে। বাড়ি – গাড়ি করেছে, জমি কিনেছে। এখন সে কোটিপতি। গোয়ালদা গ্রামের অরূপ বিশ্বাস তার বাবা অনেক আগে মারা গেছেন মা রাস্তায় মাটি কেটে সংসার চালান। এই অরুপ বিশ্বাস এখন এই বিকাশ প্রতারণার মাধ্যমে কোটিপতি। গোয়ালতোয়া গ্রামে ফোনি মোল্যা,সম্রাটসহ বেশ কয়েকজন বিকাশ প্রতারকের সক্রিয় গুরু সদস্য আছে বলে জানা গেছে। উপজেলার দ্বারিয়াপুর গ্রামের প্রতারিত হওয়া শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমার পারসোনাল বিকাশ নাম্বারে ২০ হাজার টাকা আসে। টাকা আসার সাথে সাথে ব্যালেন্স শূণ্য হয়ে যায়।
ঢাকার কাফরুল থানার পূর্ব শেওড়া পাড়ার বাসিন্দা ডা. নাজনীন রশীদ শিউলী মুঠোফোনে জানান, বিকাশ প্রতারক চক্র সুকৌশলে আমার পিন কোড নিয়ে আমার কাছ থেকে ৮৯ হাজার ৮ ‘শ ৫৬ টাকা ৭৩ পয়সা হাতিয়ে নিয়েছিল। এ বিষয়ে আমি কাফরুল থানায় একটি মামলা করি। এখনো টাকাটা পায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, প্রতারণার মাধ্যমে এই চক্রটি মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। হঠাৎ তাদের পরিবর্তন হওয়ায় এলাকায় তারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা আরো জানান মহেশপুর গ্রামের নাম ভাঙিয়ে এখন উপজেলার অনেক গ্রামেই এই ব্যবসা চলছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঐ এলাকায় গেলে প্রতারক চক্রের কারো সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে শ্রীপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাব্বারুল ইসলাম বলেন, শ্রীপুরে বিকাশ চক্রটি মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু এই বিষয়ে থানায় কেউ কোন লিখিত অভিযোগ করেনা। যার ফলে আমরা কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারিনা।
শ্রীপুর উপজেলা প্রতিনিধি