বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে প্রতিনিয়ত চলছে গরু চোরাচালান এবং মাদক চালানের রমরমা ব্যবসা। 


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৪, ২০২২, ৬:৩৩ অপরাহ্ন / ৩৬২
বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে প্রতিনিয়ত চলছে গরু চোরাচালান এবং মাদক চালানের রমরমা ব্যবসা। 

বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে প্রতিনিয়ত চলছে গরু চোরাচালান এবং মাদক চালানের রমরমা ব্যবসা। 

মোঃ এমরান বান্দরবান, জেলা প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বিভাগ-

বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন হয়ে প্রতিনিয়ত বের হচ্ছে গরু চোরাচালান এবং মাদক চালান।
বড় বড় সিন্ডিকেটের হাত ধরেই বের হচ্ছে এসব অবৈধ চালান গুলো। এর সাথে জড়িত রয়েছে অনেক বড় বড় রাখব বোয়াল এবং সেই সাথে অনেক রক্ষক এর দেখা’ও মিলেছে। ফাঁসিয়াখালীর ০৭ নং ওয়ার্ডের শামুক ছড়া ও মিরিঞ্জা হয়ে রাত ১২টার পর থেকে ভোর ৫ ঘটিকার মধ্যে প্রতিনিয়ত শত শত গরু বের হচ্ছে। আলীকদম কলরাঝিরি হয়ে এসে ফাঁসিয়াখালীর কমলা বাগান হয়ে ০৯ নং ওয়ার্ডের, কাঁঠাল ছড়া ত্রিপুরা পাড়া অতিক্রম করে বড় পাড়া-ছোট পাড়া ও কালির ঝিরি হয়ে প্রতিনিয়ত বের হচ্ছে গরু, দিনের বেলায় যেমন তেমন রাত ১২টার পর থেকে শুরু গরু চোরাচালান এবং মাদক চালানের রমরমা ব্যবসা।
১ নং ওয়ার্ডের সাপের গারা,গয়াল মারা হয়ে ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের হারগাজা অতিক্রম করে ডুলহাজারা এবং মালুমঘাট হয়েও প্রতিনিয়ত বের হচ্ছে গরু ও মাদক চোরাচালান। অভিযোগ উঠেছে, চোরাকারবারিরা রাতের আঁধারেই পাহাড় থেকে গরু গুলো বের করার সময় চাষিদের বিভিন্ন রকমের শাকসবজির খেত নষ্ট করে ফেলতেছে।
চাষিরা আরো বলেন, শত শত গরু যদি একসাথে আমাদের খেতের উপর দিয়ে নিয়ে যায় তাহলে আমাদের খেত গুলো একেবারে নষ্ট হয়ে যায়, আমরা লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ করতেছি, কিন্তু এই অবৈধ গরু চোরাচালানের কারণে আদের লক্ষ লক্ষ টাকা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব বিষয়ে কৃষকরা প্রতিবাদ করার কারণে অনেক কৃষকের শরীরে হাত দিয়েছে গরু সিন্ডিকেটরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মুরুব্বি বলেন, আমাদের বাড়িতে মেয়ে ও মা-বোন আছে, প্রতিনিয়ত রাতের আঁধারেই বিভিন্ন সিন্ডিকেট অবৈধ ভাবে গরুর চালান নিয়ে যাচ্ছে, তাঁরা একসাথে ২০-৩০ জন করে লোক থাকে, আমরা রাত হলে ঘুমাতে পারিনা, অনেকের হাতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র’ও থাকে, আমাদের, মা-বোন ও মেয়েদের নিরাপত্তা কে দিবে?
এলাকার মুরুব্বি ও শত শত মানুষ তাদের জানমাল, মা-বোন ও মেয়েদের নিরাপত্তা চান, তাঁরা বলেন আমরা প্রশাসনের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি, এবং সেই সাথে আমরা গরু চোরাচালান ও মাদক চালান বন্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এসব চোরাচালান ও মাদক চালানের সাথে জড়িত আছে ০৩ নং ফাঁসিয়াখালীর অনেক বড় বড় রাখব বোয়াল। সেই সাথে আরো রয়েছে ১৫ থেকে ২০ সদস্য বিশিষ্ট প্রায় ৫০টির ও অধিক সিন্ডিকেটের দল।
গরু ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানতে পারি, তাঁরা গরু গুলো পাহাড় দিয়ে আনার সময় বিভিন্ন সিন্ডিকেট তাঁদের গরু গুলো আটক করে লক্ষ লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করেন, এক অসহায় গরু ব্যবসায়ী বলেন, আমি আলীকদম থেকে ৫টি দেশী গরু কিনেছি, গরুর লাইন বন্ধ থাকার কারণে আমি গরু গুলো আলীকদম থেকে গাড়িতে করে আনতে পারিনি, শেষ পর্যন্ত আলীকদম থেকে পাহাড় দিয়ে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, পাহাড় হয়ে দীর্ঘ দুইদিন হেঁটে ইয়াংছা কাঁঠাল ছড়া পর্যন্ত খুব সুন্দর ভাবেই এসেছি, কেউ কোন ধরনের সমস্যা করেনি, ইয়াংছা কাঁঠাল ছড়া, ত্রিপুরা পাড়া আসার পর থেকে শুরু হয়েছে যত ধরনের সমস্যা, কয়েকজন সিন্ডিকেট গিয়ে আমার গরু গুলো আটক করে, এবং সেই সাথে আমার পাঁচটি গরু থেকে ৫০ হাজার টাকা গরুর মুক্তিপন দাবী করে, শেষ পর্যন্ত আমি তাদেরকে কিছু টাকা দিয়ে গরু গুলো উদ্ধার করি।
উল্লেখ্য গত (২২ ডিসেম্বর) পুলিশ ও বিজিবির যৌথ অভিযানে ৩১টি বিদেশি গরু আটক করা হয়, সেই গরু গুলো গতকাল বিকেলে নিলামের মাধ্যমে ২৬ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়ে বিক্রি করা হয়। আজ রাত ৩ ঘটিকার দিকে কালির ঝিরি নামক স্থান থেকে চোরাচালানে ৩৫ টি গরু গাড়িতে করে চকরিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে জানতে পারি, ফাঁসিয়াখালীর বিভিন্ন পাহাড়ের ভিতর এখনো হাজার হাজার গরু রয়েছে, গরু গুলো প্রতি রাতেই বের করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এবিষয়ে লামা থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ শহিদুল ইসলাম কে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে চাইলে, ওনি কল রিসিভ না করার কারণে ওনার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।