“বাঘায় পেরিলার জমিতে মৌচাষ”
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ
রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায় নতুন তেল জাতীয় ফসল পেরিলার জমিতে মধু চাষ সবার নজর কেড়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, মনিগ্রাম ইউনিয়নের ভানুকর ব্লকে প্রায় ১ হেক্টর জমিতে তেল জাতীয় ফসল পেরিলার চাষ হচ্ছে। এছাড়াও আড়ানীতেও পেরিলা চাষ হচ্ছে। ইতোমধ্যে পেরিলাতে ফুল আসা শুরু হয়েছে। প্রতিটি গাছে মৌমাছির ব্যাপক আনাগোনা দেখা যাচ্ছে, চারিদিকে মৌ মৌ শব্দে মুখরিত হচ্ছে, ঠিক যেন সরিষার ফুলের মৌমাছির মত। পেরিলা ফুলে মৌমাছির আনাগোনা দেখে, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে পেরিলা কৃষক সাজদার, আফজাল,ফারুক তাদের জমিতে ১৫ টি মৌমাছি বাক্স স্থাপন করেছেন। আর এ ব্যাপারে আড়ানী ইউনিয়নের মৌচাষী আবু বক্কর সিদ্দিক মধু সংগ্রহে তাদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা স্বজন সরকার বলেন, খরিপ-২ মৌসূমে সচরাচর কোন তেল ফসলের আবাদ হয় না, আর এ সময় জমি পতিত থাকে। দেশের তেলের ঘাটতি পূরণকল্পে পতিত জমিতে নতুন তেল জাতীয় ফসল পেরিলার আবাদ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গতবছর থেকে উপজেলা কৃষি অফিস চেষ্টা করে যাচ্ছে। গতবছর প্রথমবারের মত পরীক্ষামূলকভাবে ১ বিঘা জমিতে চাষ করা হলেও, এ বছর তা ০১ হেক্টর জমিতে সম্প্রসারিত হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী প্রদান করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, সকালবেলা পেরিলা ফুলে প্রচুর মৌমাছি আসে, তাই ফুলের পরাগায়ন বৃদ্ধির জন্য মৌচাষী আবু বক্কর সিদ্দিকের সহায়তায় কৃষকদের জমিতে মৌবাক্স বসানো হয়। এতে করে একদিকে যেমন পরাগায়ন হয়ে ফলন বাড়বে অন্যদিকে মধু সংগ্রহ করে পুষ্টির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। মৌচাষী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, খরিফ-২ মৌসূমে কোন ফুল না থাকায় কলোনীর মৌমাছিদেরকে সাধারণত চিনির সিরা খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয়, কিন্তু এখন পেরিলার জমিতে মৌবাক্স স্থাপন করায় তাদের খাদ্যের সংস্থান হলো একদিকে আবার অন্যদিকে মধু সংগ্রহের ব্যবস্থাও হলো। যদি পেরিলার চাষ আরো ব্যাপক পরিসরে সম্প্রসারিত হয়, তা মৌশিল্পের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াবে। বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, পেরিলা একটি উচ্চ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ তেল। এতে প্রায় ৬০-৬৫% ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ এসেনশিয়াল এমাইনো এসিড রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আর পেরিলা থেকে যে মধু উৎপাদিত হবে, সেইটাও অন্য যে কোন ফুলের মধুর চেয়ে পুষ্টিকর হবে। তাই, পেরিলা চাষ সম্প্রসারণে উপজেলা কৃষি অফিস সবরকমের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
তানোর উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি অফিসার কামরুল ইসলাম, তিনি যখন বাঘা উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন, তখন তার উদ্যোগেই মূলত বাঘা উপজেলায় পেরিলা চাষ ১ম বারের মত সম্প্রসারণ শুরু হয়। পেরিলা চাষ সম্পর্কে এই কর্মকর্তা বলেন, পেরিলা অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি তেল ফসল। খরিফ-২ মৌসুমে রাজশাহী জেলার অনেক জমি পতিত থাকে বিশেষ করে ছোট ছোট আম,পেয়ারা, মাল্টা বাগানসমূহ। সেখানে খুব সহজেই পেরিলা আবাদ করে কৃষক লাভবান হতে পারবে। মধ্য জুলাই এ বীজ বপণ করে ২৫-৩০ দিনের চারা মধ্য আগস্টে মূল জমিতে রোপণ করতে হয়। লাগানোর মাত্র ০২ মাসের মধ্যেই ফসল সংগ্রহের উপযোগী হয়। যেহেতু অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের ১ম সপ্তাহে ফসল কাটা যায়, তাই রবি ফসলেও কোন ব্যাঘাত ঘটে না। বিঘা প্রতি ৪.০-৫.০ মণ ফলন পাওয়া যায়, বর্তমানে বাজারে পেরিলা বীজ ১৫০-২০০/- কেজি দরে বিক্রি হয়, সে হিসেবে বিঘা প্রতি প্রায় ২৫-৪০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। সেই তুলনায় উৎপাদন খরচ বিঘা প্রতি মাত্র ০৮-১০ হাজার টাকা। আবার মৌমাছি চাষ করে (বিঘা প্রতি ২ টি মৌবাক্স) ১৫ দিনে প্রায় ০৫ কেজি মধু আহরণ সম্ভব, সেই হিসেবে মধু থেকেও ২-৩ হাজার টাকা অতিরিক্ত আয় হবে। তাই, পেরিলা চাষ সম্প্রসারিত হলে দেশের তেলের ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি মৌচাষেরও একটা সম্ভবনা সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।