“বরিশালে শতকোটি টাকার মালিক সার্ভেয়ার মোতালেবের নাম দুদকে”


প্রকাশের সময় : নভেম্বর ১৬, ২০২২, ৯:০০ অপরাহ্ন / ৫৯১
“বরিশালে শতকোটি টাকার মালিক সার্ভেয়ার মোতালেবের নাম দুদকে”

“বরিশালে শতকোটি টাকার মালিক সার্ভেয়ার মোতালেবের নাম দুদকে”
রমজান আহম্মেদ (রঞ্জু), বরিশাল ব্যুরো চীফ –
বরিশাল : বিরোধপূর্ণ জমির সন্ধান পেলে নিজেই তদ্বির করে নিয়ে নেন পাওয়ার অব এ্যাটর্নি। এরপরে
প্রভাবশালীদের নিয়ে সেই জমি দখলে নেন। আর এভাবে নাম-বেনামে শতকোটি টাকার সম্পত্তি গড়ে তুলেছেন
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে চাকুরিচ্যুত একজন সার্ভেয়ারের। শুধু পাওয়ার অব এ্যাটর্নি নিয়ে ক্ষন্ত থাকেন
না। হামলা-মামলার মত ধারাবাবিক কাজও তিনি করেন জমি দখলে নিতে। এভাবে শতকোটি টাকার মালিক বনে
যাওয়া সার্ভেয়ারের নাম উঠেছে দুর্নীতি দমন কমিশনে। অভিযুক্ত ওই সার্ভেয়ার বরিশাল মেট্রোপলিটন
এয়ারপোর্ট থানার বাঘিয়া এলাকার বাসিন্দা এম.এ মোতালেব হাওলাদার। যদিও তিনি দাবী করেছেন, তার
বিরুদ্ধে উত্থাপতি অভিযোগ সত্য নয়। বরংছ তার (এমএ মোতালেব হাওলাদার) জমি প্রতিপক্ষ দখলে নিতে
বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দিচ্ছে। ওয়ারিশসূত্রে জমি পেয়েছেন কাশিপুর এলাকার বাসিন্দা সাবেক ইউপি সদস্য
আব্দুল কাদের। কিন্তু পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া সেই জমিও দখলে নিতে পারছেন না সার্ভেয়ার মোতালেবের কারনে।
তিনি বলেন, মোতালেবের সাথে আমাদের জমির বিরোধ ৩ একর ৪০ শতাংশ নিয়ে। এই জমি আমরা ওয়ারিশসূত্রে
পেয়েছি। কিন্তু সে ১৯৬০/৬১ সালের একটি নিলামে পেয়েছেন মর্মে জমি তাঁর দাবী করে আসছেন। এ নিয়ে মামলা
চলছে। অথচ সে যে নিলামের দাবী করছেন জেলা প্রশাসনের রেজিস্ট্রি অফিসে নিলামের ওই আদেশ নামা বা
আদৌ নিলাম হয়েছে বলে কোন তথ্য নেই। একটি ভ‚য়া নিলাম তৈরী করে জমি তার দাবী করছেন। তিনি বলেন, শুধু
আমি নয় কাশিপুর এলাকায় এভাবে অনেক লোকের জমি প্রতারণা করে নিজের নামে নিয়েছেন। অনেক প্রতিষ্ঠিত
ব্যক্তি আজ পথে বসেছেন মোতালেবের গ্রাসে পড়ে। সাবেক এই জনপ্রতিনিধি বলেন, সে (মোতালেব)
সার্ভেয়ার। এজন্য বরিশালের আশপাশের সকল জমির খবর জানেন। যেখানে গিয়ে দেখেন জমি মূল্যবান সেখানেই
নিজে কায়দা-কাÐ করে ঢুকে বিরোধ তৈরী করেন। আর জমির মালিক দুর্বল হলে সেই জমি নিজের নামে লিখে
নেন। আলেকান্দার বাসিন্দা সৈয়দ সাবের হোসেন বাবু বলেন, আমি প্রাবাসে ছিলাম। ৩০ বছর পর দেশে এসে
আমার পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া জমিরও দখলে যেতে পারছিলাম না। মোতালেব কোথা থেকে জমির পাওয়ার অব
এ্যাটর্নি নিয়ে আমাকে মামলায় জড়িয়ে দিল। এখন নিজের জমির জন্য তার সাথে লড়াই করতে হচ্ছে। তিনি
বলেন, মোতালেবের টার্গেট থাকে নগরীর কোন কোন স্থানে দামী জমি রয়েছে। দাবী জমির মালিক যদি বিদেশে
থাকে বা একটু দুর্বল হয় তাহলে জাল কাগজ তৈরী করে সেই জমি নিজের দাবী করেন। শুধু আলেকান্দা নয়,
নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সে জমির পাওয়ার অব এ্যাটর্নি নিয়ে মামলা চালিয়ে অনেকের নিজের জমিতেও যেতে
দিচ্ছেন না। মোতালেব হাওলাদারের হয়রানির শিকার হয়ে জমি হারাতে বসেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের ১৩
নম্বর ওয়ার্ডের মীরা বাড়ির বাসিন্দা ইসমাত সায়লা। পিতা অ্যাডভোকেট আবুল খায়ের মোঃ শফিউল্লাহ তাঁর ও
বোনের নামে যে জমি লিখে দিয়েছেন সেই জমিরও পাওয়ার অব এ্যাটর্নি নিয়ে দখলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন
মোতালেব হাওলাদার। এ ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনে ৭ আগস্ট অভিযোগ দিয়েছেন অসহায় ওই নারী।
অভিযোগটি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে দুদকসূত্রে জানা গেছে। সায়লা বলেন, আমার পিতা যে জমির
মালিক ছিলেন সেই জমি আমাদের দুই বোনের নামে লিখে দেন ২০১৭ সালে। অথচ মোতালেব সার্ভেয়ার ২০২২
সালের জুলাই মাসে সেই জমিতে তার নামে সাইনবোর্ড দিতে আসেন। সাথে অনেক গুন্ডা-সন্ত্রাসী নিয়ে আসেন।
সে এভাবেই নগরীর অনেক মানুষকে পথে বসিয়েছে। যেহেতু সে সার্ভেয়ার সেজন্য সে নগরী ও আশপাশের জমি
নিয়ে খুটিনাটি জানেন। আমরা জমির মালিক সকলেই নারী। আরা যেখানের জমির মালিক আমরা সেই জমির দাম
কয়েক কোটি টাকা। এই লোভে কোথাকার একটি পাওয়ার অব এ্যাটর্নি নিয়ে এসে দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, মোতালেব আমার ভাইকে গুম করারও হুমকি দিয়েছেন। আমরা পুরো পরিবার নিয়ে সবসময়ে
আতঙ্কের মধ্যে থাকি কখন সে সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে আমাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করে দেয়। তার দাবী,
স্থানীয় প্রশাসন তাদের কোন ধরণের সহায়তা করছেন না। আইনের আশ্রয় নিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না।
সৈয়দ বরকত হোসেন বলেন, মোতালেব হোসেনের লক্ষ্যই হচ্ছে দামী জমিতে তৃতীয় কোন পক্ষ দাড় করিয়ে
পাওয়ার অব এ্যাটর্নি নেওয়া। তারপর সেখানে তিনি সকল রকমের হামলা-মামলা করে দখলে নিতে চান। শুধু
আমি না, নগরীর অনেকেই সার্ভেয়ার মোতালেবের আতঙ্কে থাকেন। কখন সে সেই জমিতে গিয়ে দাবী করেন,
জমি তার। যদিও এসকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত সার্ভেয়ার এম.এ মোতালেব হোসেন। তিনি
বলেন, যারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন তারা আমার আত্মীয় নন। তবে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা

আমার জমি জাল-জালিয়াতি করে দখলে নিতে চায়। এজন্য শুধু দুর্নীতি দমন কমিশনে নয় দেশের অনেক দফতরে
অভিযোগ দিয়েছেন। সেই অভিযোগের সূত্র ধরে আমাকে বরিশাল মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা অফিসে ডেকেছিল।
আমি সেখানে আমার জমির কাগজ দেখিয়ে এসেছি। পুলিশ কমিশনার স্যারের সাথে দেখা করে জমির কাগজ
দেখিয়ে এসেছি। এই সংঘবদ্ধ দলটি আমাকে হয়রানি করছে। প্রসঙ্গত, দেশের স্বনামধন্য একটি সিমেন্ট
উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে কিছুদিন সার্ভেয়ারের দায়িত্ব পালনের পর সেখান থেকে চাকুরিচ্যুত হন বলে জানা
গেছে এম.এ মোতালেব হাওলাদার।

“বরিশালে চুরির দায়ে তিন কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতন”
রমজান আহম্মেদ (রঞ্জু), বরিশাল ব্যুরো চীফ –
বরিশাল: বরিশালের আগৈলঝাড়ায় চুরির দায়ে তিন কিশোরকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে
স্থানীয়দের বিরুদ্ধে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই তিন কিশোরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে
যায়। আগৈলঝাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, সোমবার (১৪ নভেম্বর)
দুপুরে উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের মধ্যশিহিপাশা গ্রামের প্রবাসী মোকলেস সরদারের বাড়িতে
প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করতে যায় বরিশাল লঞ্চঘাটের পথ-কিশোর মামুন গাজী (২০), সাগর মিয়া
(১৮) ও তুহিন মিয়া (১৮)। তারা বোতলের পাশাপাশি ওই প্রবাসীর বাড়ির টিউওবয়েল চুরি করে। এ সময়
প্রবাসীর স্ত্রী লাকী বেগম টিউওবয়েলে পানি আনতে গিয়ে দেখেন টিউওবয়েল নেই। তিনি পথ
কিশোরদের দেখে চিৎকার দেন। তার চিৎকারে স্থানীয় নুর ইসলাম, ছালাম সরদার, আসিফ সরদারের
নেতৃত্বে ১০-১২ জনে মিলে ধাওয়া করে তাদের আটক করে সাবেক ইউপি সদস্য হানিফ সরদারের
বাড়ির সামনে রাস্তার পাশে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করেন। গাছে বাঁধা কিশোররা জানায়,
স্থানীয়রা তাদের গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেছেন। অনেক অনুনয়-বিনয় করলেও তাদের মন গলেনি।
এক পর্যায়ে স্থানীয়রা গৈলা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম টিটু তালুকদারকে সংবাদ দিলে তিনি
ঘটনাস্থলে গিয়ে থানা পুলিশকে খবর দেন। পরে থানার উপপরিদর্শক রমজান হোসেন ঘটনাস্থলে গিয়ে
গাছে বাঁধা তিন কিশোরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যান। গৈলা ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম টিটু
তালুকদার বলেন, পথ কিশোররা চুরি করলে তাদের পুলিশের কাছে দেওয়া যেত। তাদের গাছের সঙ্গে
বেঁধে নির্যাতন করা ঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া থানার উপ-পরিদর্শক রমজান হোসেন জানান,
গাছে বাঁধা অবস্থায় তিনজনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। প্রবাসীর পরিবার থেকে মামলা
করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মোবা: 01620849601
তারিখ: 15/11/22