“পশ্চিম রেল মেডিকেলে ক্রয় খাতে ব্যাপক অনিয়ম, কোটি কোটি টাকা লুটপাট”


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২৭, ২০২২, ৬:০৯ অপরাহ্ন / ৩০৮
“পশ্চিম রেল মেডিকেলে ক্রয় খাতে ব্যাপক অনিয়ম, কোটি কোটি টাকা লুটপাট”
“পশ্চিম রেল মেডিকেলে ক্রয় খাতে ব্যাপক অনিয়ম, কোটি কোটি টাকা লুটপাট”
আবুল হাশেম, রাজশাহী ব‍্যুরোচীফঃ
চাকুরী বিধি লংঘন, ঠিকাদারি কাজে মালামাল গ্রহন না করে ৩৫% টাকা কমিশন গ্রহণ, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী দিয়ে ২ কোটি টাকা লোপাটসহ নানা অনিয়ম আর দূর্নীতির মহোৎসব চলছে পশ্চিম রেলওয়ে মেডিকেলে। এই দূর্নীতি দীর্ঘদিন যাবৎ চলমান আছে। প্রতিবার-ই দুর্নীতির মহোৎসব শেষে অবসরে চলে যাচ্ছেন সিএমও বৃন্দ। আবার ওষুধ চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়া কর্মচারিরাও এখনো আছেন বহালতবিয়তে। ওষুধ কেনার সময় নির্দিষ্ট ওষুধ কোম্পানির থেকেও নেওয়া হয় মোটা অংকের কমিশন। হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনায় আছে নয়ছয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে পশ্চিম (রাজশাহী) জোনের চিফ মেডিক্যাল অফিসার (সিএমও) ডাঃ সুজিৎ কুমার রায় চলতি বছরে অবসরে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে ফাঁস হয়ে যায় তাঁর কয়েক কোটি টাকা লোপাটের ঘটনা। রেলের বিভিন্ন সূত্র বলছে, সিএমও অবসরে গেলেও দুর্নীতির দায়ে ফেঁসে যেতে পারেন তার সফর সঙ্গীরা। ইতোমধ্যে তার দূর্নীতির সফর সঙ্গীরা ভিতু হয়ে তথ্য ফাঁস করছেন।
সুত্র বলছে, ডাঃ সুজিৎ কুমার রায় পাকশী ডিভিশনের ডিএমও থেকে পদোন্নতি পেয়ে ১৩ ডিসেম্বর ২০২০ সালে সিএমও (পশ্চিম) হিসেবে যোগদান করেন। সিএমও হিসেবে যোগদানের পর তিনি স্যানেটারী ইন্সপেক্টরের শূন্য পদে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব দেন চতুর্থ শ্রেণির জমাদার, ড্রেসার, খালাসিদের। চাকুরী বিধি লংঘন, মনোনীত ব্যক্তিদের দিয়ে কোটি কোটি টাকার মালামালের চাহিদা পত্রের বিপরীতে হাতিয়ে নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকা। লালমনিরহাট,  পাকশী এবং রাজশাহী ডিভিশনে শুধুমাত্র স্যানেটারী বিভাগ থেকেই হাতিয়ে নিয়েছেন ৬ কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, পাকশী ডিভিশনে ৫টি স্যানেটারী ইন্সপেক্টর পদ আছে। ৫ পদের বিপরীতে একজন স্যানেটারী ইন্সপেক্টর রয়েছেন। এছাড়া বাকী চারটিতে অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব হিসেবে দেওয়া আছে চতুর্থ শ্রেণির জমাদার, ড্রেসার ও খালাসি পদের চার ব্যক্তি যারা সিএমও সুজিতের চরিদারির বিশ্বস্ত সহযোগী। তারা হলে, রাজশাহীতে জুয়েল সরকার, ঈশ্বরদীতে আকরাম, খুলনায় অয়ন সরকার এবং পাকশীতে কর্মরত জগবন্ধু বিশ্বাস। বর্তমান সিএমও যখন পাকশীর ডিএমও ছিলেন, তখন থেকেই জগবন্ধু বিশ্বাস তাঁর আস্থাভাজন ছিলেন। সেই সুযোগে গত দুই বছরে প্রায় ২ কোটি টাকার উপরে মালামালের চাহিদা নেওয়া হয়েছে তার কাছ থেকেই। যদিও চাহিদা পত্রে একজন চতুর্থ শ্রেণির জামাদার স্বাক্ষর করার এখতিয়ার রাখেন না, তবুও শুধু মাত্র দূর্নীতির সফর সঙ্গী হিসেবে আস্থাভাজন জগবন্ধুকে বলির পাঁঠা বানিয়ে লোপাট করা হয়েছে সেই টাকা। মালামাল ক্রয়ের নামে হাত বদল হয়েছে টাকার। স্টোরে খাতা কলম ঠিক রাখলেও মালামাল নেই উল্লেখিত স্টোরগুলোতে। পাকশী ডিভিশনে অন্যান্য স্যানেটারী ইন্সপেক্টর পদে দ্বায়িত্ব পালনকারী চতুর্থ শ্রেণির কেউ তেমন উল্লেখ্য যোগ্য চাহিদা বা মালামাল ক্রয় না করলেও শুধুমাত্র পাকশী’র দ্বায়িত্বে থাকা জগবন্ধু বিশ্বাস  মালামাল ক্রয় করেছেন ২ কোটি টাকার।
অপরদিকে লালমনিরহাট ডিভিশনে “একাই একশ” সিঃ স্যানেটারী ইন্সপেক্টর সারাফাত। তিনি একাই গত কয়েক বছরে প্রায় ৩০-৩৫ কোটি টাকার মালামাল ক্রয় করেছেন। এখানেও সিএমও সুজিৎ কুমার রায় এর আছে ৩৫% কমিশন। সিএমও রাজশাহী দপ্তরে তাঁর নিজস্ব ক্ষমতাবলে করেছেন কয়েক কোটি টাকার কাজ। ৫ লক্ষ টাকার চাহিদা পত্রের বিপরীতে ৫০ হাজার টাকা কমিশন ও মালামাল গ্রহণ না করে ৩৫% টাকা গ্রহণ। রেলের একটি সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, গত ৪ এপ্রিল ২০২২ ইং তারিখে জগবন্ধু’র চাহিদা পত্রের বিপরীতে পাকশী ডিভিশনের ডিএমও ডাঃ শাকিল আহমেদ চারটি চাহিদা পত্র প্রদান করেন। সেই চার চাহিদা পত্রে অ্যারোসল স্প্রে, হুইল ব্যারো, স্প্রে মেশিন, হ্যান্ড ওয়াশ, হারপিক লিক্যুইড, ভিম লিক্যুইড, ফুল ঝাড়ু, ডি অয়েল, ল্যাটিন বাকেট, গ্লাস ক্লিনার, বাশের টুকড়ি বাবদ ব্যয় ধরা হয়, ৪৫ লক্ষ  টাকা। যা শুধু মাত্র কাগজ আর কলমেই সীমাবদ্ধ।
৩ জানুয়ারি ২০২২ ইং তারিখের দুটি চাহিদা পত্রে ৩৩ লাখ ২৯ হাজার ৫০০ টাকার মালামাল ক্রয় দেখানো হয়। যেখানে হ্যান্ডওয়াশ, রাবার পাইপ, ড্যামফিক্স, ল্যাট্রিন ব্রাশ, সাবান, লাইজল ফ্লোর ক্লিনার, ফ্লোর সোয়াইব, তোয়ালে, বেড সীট, আসবাবপত্র, ক্রয়ের কথা বলা হয়েছে। মালামাল ক্রয়ে রয়েছে অসংগতি। দামেও রয়েছে হেরফের।
এছাড়াও গত ৯ জুন ২০২২ ইং তারিখে ১৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯২০ টাকা, ১৭ জুলাই-২০২২ ইং তারিখে ৩ লাখ ৮৯ হাজার টাকা, ১৯ ডিসেম্বর ২০২১ ইং তারিখে ২৫ লাখ, ১১ আগস্ট ২০২১ ইং তারিখে ১০ লাখ ২৮ হাজার ৩০০ টাকা, ১০ অক্টোবর ২০২১ ইং তারিখে ১২ লাখ ৫৫ হাজার ৩৫০ টাকা মালামাল ক্রয় করা হয়েছে। এমন বারবার একই মালামাল কেনা আর মালামাল গ্রহন না করে ঠিকাদারের কাছ থেকে ৩৫% কমিশন বানিজ্য এখন তুঙ্গে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রেল কর্মচারী জানান, অল্প সময়ের জন্য দ্বায়িত্ব পান সিএমও। এই অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট করার জন্য যে, যেমনভাবে পারে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি রেখে দূর্নীতি করেন। বর্তমান সিএমও জগবন্ধু বিশ্বাস এর মতো গুটিকয়েক অসাধু কর্মচারীকে বলির পাঁঠা বানিয়ে বাগিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। অডিট আপত্তিকে ম্যানেজ করেই চলে এই লোপাট। এর সঙ্গে পশ্চিম রেলের  সর্বোচ্চ কর্তাব্যক্তি নাকি প্রত্যাক্ষভাবে জড়িত। বিষয় গুলো দুদকের উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত হওয়া দরকার বলেও মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কথা বললে বাংলাদেশ রেলওয়ে (পশ্চিম) এর চীফ মেডিক্যাল অফিসার (সিএমও) সুজিৎ কুমার রায় বলেন,   লোকবল সংকট তাই অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। চাহিদা পত্রে আর কোন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী স্বাক্ষর করবে না ভবিষ্যতে।অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়ে এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ডিএমও সাহেবরা বিষয়গুলো দেখেন, আমি শুধু ফরোয়ার্ড করি। তিনি ডিএমও’ দের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
২য় পর্ব,,,,চলমান