Dhaka ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“নিয়েছেন আশ্রয়প্রকল্প ঘর, থাকেন শহরে”

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:০৯:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০২২
  • ৩১২ Time View

“নিয়েছেন আশ্রয়প্রকল্প ঘর, থাকেন শহরে”
জসীমউদ্দীন ইতি ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি –
নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর, থাকেন শহরে ভাড়া বাসায় দেশের
অন্যান্য জেলার মতো ঠাকুরগাঁওয়েও মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ভূমিহীনদের
পাকা ঘর দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অনেকে এসব ঘর দখলে রাখলেও সেখানে
বসবাস করছেন না। নিজের নামে ঘর বরাদ্দ নিয়ে তারা থাকছেন জেলা শহরের ভাড়া
বাড়িতে।
সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্প
সরেজমিনে ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের
বরুনাগাঁও এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন একই ইউনিয়নের
চৌদ্দহাত কালিতলার বাসিন্দা আব্দুল মালেক। তিনি শহরের ফুড লাভার্স পয়েন্ট
হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করছেন। পরিবার নিয়ে
থাকেন শহরের হাজীপাড়ার একটি ভাড়া বাড়িতে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে তিনি
থাকেন না।
আব্দুল মালেক বলেন, ছেলেকে শহরের আমানতুল্লাহ স্কুলে ভর্তি করেছি। আশ্রয়ণ
প্রকল্পের ঘর শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় যাতায়াতে সমস্যা হয়। এজন্য ভাড়া
বাড়িতে থাকি।
একই অবস্থা ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়া হাসিবুল ইসলামের। তিনি থাকেন
জেলা শহরের সত্যপীর সেতুর পাশের একটি ভাড়া বাড়িতে। সদর উপজেলার রহিমানপুর
ইউনিয়ন পরিষদের আয়া আনজু বেগম পটুয়া পস্তমপুর আশ্রয়ণ কেন্দ্রে সরকারি ঘর
পেয়েছেন। তবে ঘর পাওয়ার এক বছর পেরিয়ে গেলেও থাকেন না সেই ঘরে। ঠাকুরগাঁও
রোডে কলোনীপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকছেন তিনি।
একই অবস্থা মোশারফ ও সাইদুলের। তারা পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকলেও দখলে
রেখেছেন সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর।
রহিমানপুর ইউনিয়নের পটুয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দখলে রাখা আনজু বেগম বলেন,
সরকারি ঘর আমার দখলে আছে। তবে ওখানে থাকা হয় না। ভাড়া বাসাতেই পরিবার
নিয়ে থাকছি।
সালান্দর ইউনিয়নের বরুনাগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত ৫০ বছর বয়সী
দিনমজুর বলেন, আমাদের মতো অনেক অসহায় লোক আছে, যাদের থাকার কোনো জায়গা
নেই। অথচ সরকারের এসব ঘর দখল করে আছেন যাদের বাড়ি আছে তারা। ঘর দখলে
নিলেও কখনো এসে থাকেননি তারা।
রহিমানপুর ইউনিয়নের পটুয়া পস্তমপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে থাকা ৩৫ বছর
বয়সী এক নারী বলেন, প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে এখানে বসবাস করছি। তারা
মাঝেমধ্যে এখানে এসে ঘর দেখে যান, কিন্তু থাকেন না। যদি তারা না থাকেন
তাহলে দখলে না রেখে অসহায় মানুষদের এখানে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া উচিত।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার সাবেক কমিশনার একেএম শফিউল এনাম পারভেজ  বলেন, ভূমিহীন
ও গৃহহীনদের জন্য সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহারের উদ্যোগটি মহৎ। তবে
ঘর দখল করে যারা সেখানে বসবাস করছেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ
করা উচিত। আরও যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন আছে, তাদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা
করে দেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে সালান্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে এলাহী মুকুট চৌধুরী
বলেন, ঘর দখলে রেখেছেন, কিন্তু থাকেন না- বিষয়টি আমি অবগত নই। যদি এমন
হয়ে থাকে, তাহলে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করব।
সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হান্নান ইসলাম হান্নু
বলেন, টাকা দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নেওয়া যেমন অপরাধ, তেমনি ঘর নিয়ে
সেখানে না থাকাও অপরাধ। ঘর দখলে রেখে ভাড়া বাড়িতে থাকার কোনো সুযোগ নেই।
এ রকম কোনো অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো.
শামসুজ্জামান বলেন, সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভূমিহীন ও গৃহহীন
মানুষদের থাকার জন্য দেওয়া হয়েছে, দখলে রাখার জন্য নয়। কেউ যদি না থাকে
আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান  বলেন, এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে
থাকলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। বিষয়টি অবগত হলাম।
খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৯৫৩ জনকে
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে আরও ৭৫৫ জনকে ঘর
দেওয়া হবে।
জসীমউদ্দীন ইতি
০১৭৫১০৭৯৮২৩
ঠাকুরগাঁও

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

শেরপুর হাইও‌য়ে পু‌লিশ ক‌্যাম্প প‌রিদর্শন কর‌লেন পু‌লিশ সুপার!

“নিয়েছেন আশ্রয়প্রকল্প ঘর, থাকেন শহরে”

Update Time : ০৫:০৯:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ নভেম্বর ২০২২

“নিয়েছেন আশ্রয়প্রকল্প ঘর, থাকেন শহরে”
জসীমউদ্দীন ইতি ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি –
নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর, থাকেন শহরে ভাড়া বাসায় দেশের
অন্যান্য জেলার মতো ঠাকুরগাঁওয়েও মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে ভূমিহীনদের
পাকা ঘর দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অনেকে এসব ঘর দখলে রাখলেও সেখানে
বসবাস করছেন না। নিজের নামে ঘর বরাদ্দ নিয়ে তারা থাকছেন জেলা শহরের ভাড়া
বাড়িতে।
সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্প
সরেজমিনে ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়নের
বরুনাগাঁও এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন একই ইউনিয়নের
চৌদ্দহাত কালিতলার বাসিন্দা আব্দুল মালেক। তিনি শহরের ফুড লাভার্স পয়েন্ট
হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার হিসেবে চাকরি করছেন। পরিবার নিয়ে
থাকেন শহরের হাজীপাড়ার একটি ভাড়া বাড়িতে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে তিনি
থাকেন না।
আব্দুল মালেক বলেন, ছেলেকে শহরের আমানতুল্লাহ স্কুলে ভর্তি করেছি। আশ্রয়ণ
প্রকল্পের ঘর শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় যাতায়াতে সমস্যা হয়। এজন্য ভাড়া
বাড়িতে থাকি।
একই অবস্থা ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়া হাসিবুল ইসলামের। তিনি থাকেন
জেলা শহরের সত্যপীর সেতুর পাশের একটি ভাড়া বাড়িতে। সদর উপজেলার রহিমানপুর
ইউনিয়ন পরিষদের আয়া আনজু বেগম পটুয়া পস্তমপুর আশ্রয়ণ কেন্দ্রে সরকারি ঘর
পেয়েছেন। তবে ঘর পাওয়ার এক বছর পেরিয়ে গেলেও থাকেন না সেই ঘরে। ঠাকুরগাঁও
রোডে কলোনীপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকছেন তিনি।
একই অবস্থা মোশারফ ও সাইদুলের। তারা পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকলেও দখলে
রেখেছেন সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর।
রহিমানপুর ইউনিয়নের পটুয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দখলে রাখা আনজু বেগম বলেন,
সরকারি ঘর আমার দখলে আছে। তবে ওখানে থাকা হয় না। ভাড়া বাসাতেই পরিবার
নিয়ে থাকছি।
সালান্দর ইউনিয়নের বরুনাগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত ৫০ বছর বয়সী
দিনমজুর বলেন, আমাদের মতো অনেক অসহায় লোক আছে, যাদের থাকার কোনো জায়গা
নেই। অথচ সরকারের এসব ঘর দখল করে আছেন যাদের বাড়ি আছে তারা। ঘর দখলে
নিলেও কখনো এসে থাকেননি তারা।
রহিমানপুর ইউনিয়নের পটুয়া পস্তমপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে থাকা ৩৫ বছর
বয়সী এক নারী বলেন, প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে এখানে বসবাস করছি। তারা
মাঝেমধ্যে এখানে এসে ঘর দেখে যান, কিন্তু থাকেন না। যদি তারা না থাকেন
তাহলে দখলে না রেখে অসহায় মানুষদের এখানে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়া উচিত।
ঠাকুরগাঁও পৌরসভার সাবেক কমিশনার একেএম শফিউল এনাম পারভেজ  বলেন, ভূমিহীন
ও গৃহহীনদের জন্য সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহারের উদ্যোগটি মহৎ। তবে
ঘর দখল করে যারা সেখানে বসবাস করছেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ
করা উচিত। আরও যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন আছে, তাদের সেখানে থাকার ব্যবস্থা
করে দেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে সালান্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলে এলাহী মুকুট চৌধুরী
বলেন, ঘর দখলে রেখেছেন, কিন্তু থাকেন না- বিষয়টি আমি অবগত নই। যদি এমন
হয়ে থাকে, তাহলে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করব।
সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হান্নান ইসলাম হান্নু
বলেন, টাকা দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নেওয়া যেমন অপরাধ, তেমনি ঘর নিয়ে
সেখানে না থাকাও অপরাধ। ঘর দখলে রেখে ভাড়া বাড়িতে থাকার কোনো সুযোগ নেই।
এ রকম কোনো অভিযোগ পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো.
শামসুজ্জামান বলেন, সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ভূমিহীন ও গৃহহীন
মানুষদের থাকার জন্য দেওয়া হয়েছে, দখলে রাখার জন্য নয়। কেউ যদি না থাকে
আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান  বলেন, এ রকম কোনো ঘটনা ঘটে
থাকলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। বিষয়টি অবগত হলাম।
খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৯৫৩ জনকে
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর উপহার দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ে আরও ৭৫৫ জনকে ঘর
দেওয়া হবে।
জসীমউদ্দীন ইতি
০১৭৫১০৭৯৮২৩
ঠাকুরগাঁও