“ঠাকুরগাঁও বুড়ির বাঁধে চলছে মাছ ধরা প্রতিযোগী উৎসব”
জসীম উদ্দীন ইতি
ঠাকুরগাঁওয়ের বড়ির বাঁধে মাছ ধরতে এসে মাছ না পেয়ে এ বছর অনেকে খালি হাতে
বাড়ি ফিরতে হয়েছে।বাঁধ ছেড়ে দেওয়ার পূর্বেই স্থানীয়রা রিং জাল,কারেন্টজাল
ও ঘুপসি জাল ফেলে আগেই মাছ শিকার করায় এ বছর মাছের শূন্যতা দেখা দিয়েছে।
প্রতিবছরের মতো এবারো বুধবার সকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ও আকচা
ইউনিয়নের শুক নদীর বুড়ির বাঁধে শুরু হয় মাছ ধরা উৎসব। মঙ্গলবার সন্ধায়
বাঁধের গেট খুলে দেয়ার পর তৈকেই শুরু হয় মাছ ধরা প্রতিযোগিতা।ঠাকুরগাঁও
পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা হতে আসেন অনেকে মাছ ধরতে।
কিন্তু সারারাত চেষ্টা করেও প্রত্যাশিত পরিমাণ মাছ ধরতে না পেরে অনেকে
ফিরে যান খালি হাতে।
বুধবারি সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, অসংখ্য মানুষ মাছ ধরতে ব্যস্ত। কারও
হাতে পলো,কারও হাতেফিকাজাল,কারও হাতে লাফিজাল,খেয়াজাল,টানাজাল। কেউবা
পানিতে নেমে আবার কেউবা কলার ভেলা বানিয়ে মাছ ধরার প্রানান্তকর চেষ্টা
করছেন।কিন্তু জালে তেমন মাছ ধরা পড়ছে না।বড় মাছের চাইতে দেশি মাছের
সংখ্যাই বেশি।এদের মধ্যে পুটি মাছ,টেংরা মাছ,পাপদা মাছ ,সাটি,টাকি
ইত্যাদিই বেশি।মাঝে মাঝে কারো জালে বড় মাছ ধরা পড়লেই সোরগোল পড়ছে
শিকারীদের মাঝে। আর যাদের মাছ ধরার সরঞ্জাম নেই তারাও বসে নেই। তারা খালি হাত দিয়ে কাঁদার
মধ্যে মাছ খুঁজছেন। অনেকে আবার দলবেঁধে এসছেন বন্ধু বান্ধব নিয়ে। তারা
স্বজনদের মাছ ধরায় উৎসাহ দিচ্ছেন উপর থেকে ।
১৯৮০ সালের দিকে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমির সেচ সুবিধার জন্য সদর
উপজেলার আচকা ও চিলারং ইউনিয়নের মাঝামাঝি এলাকায় শুক নদীর উপর একটি
জলকপাট (সুইস গেইট) নির্মাণ করা হয়। জল কপাটে আটকে থাকা সেই পানিতে
প্রতিবছর মৎস্য অধিদফতরের উদ্যোগে বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা ছাড়া হয়। আর
শীতের শুরুতেই বাঁধের পানি ছেড়ে দেওয়ার পর মাছ ধরার জন্য উন্মুক্ত করে
দেওয়া হয়। এভাবেই প্রতিবছর চলে বুড়ির বাঁধে মাছ ধরার উৎসব।
পন্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার বালিয়া লক্ষির থান এলাকা হতে আসেন চন্দ্র
মোহন । তিনি বলেন, গতবার এসেছিলাম।সেবার অনেক মাছ পেয়েছি।কিন্তু এ বছর
পুঁটি মাছ ছাড়া বড় কোন মাছ পাইনি।
পন্চগড়ের বোদা উপজেলা হতে আসেন বিশাল রহমান। তিনি বলেন, সকাল থেকেই মাছ
ধরছি। জাল নিয়ে আমরা কয়েকজন এসেছি। প্রত্যাশিত মাছ ধরা পড়ছে না। কারণ
স্থানীয় লোকজন রিং জাল ও কারেন্ট জাল দিয়ে আগেই সব মাছ সাবাড় করে ফেলেছে।
ঠাকুরগাঁও শহর শরিফুল ইসলাম মাছ কিনতে আসেন। তিনি বলেন, প্রতিবারের মতো
এবারো মাছ কিনতে এসেছি। কিন্তু দীর্ঘ ২ ঘন্টা অপেক্ষা করেও নদীর মাছ
কিনতে পারিনি।এ বছর যেসব মাছ বিক্রি হচ্ছে তার মধ্যে পুকুরের মাছই
বেশি।তার উপর দামও আকাশচুম্বি।শহরের থেকে এখানে প্রতি কেজিতে ৫০/১’শ টাকা
বেশি হাঁকছেন ব্যবসায়ীরা।
ঠাকুরগাঁও আকচা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুব্রত কুমার বর্মণ জানান, বুড়িরবাঁধ
মাছের অভয়ারন্য ।এখানে প্রতি বছর মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে মাছ অবমুক্ত
করা হয়। সে হিসেবে জালে অনেক মাছ পাওয়ার কথা।কিন্তু কিছু মাছ নিজ নিজ
জমিতে বেড়া দিয়ে মাছ আটকে রাখায় এবার মাছের পরিমান কম মনে হচ্ছে।
জসীমউদ্দীন ইতি
০১৭৫১০৭৯৮২৩
ঠাকুরগাঁও