ঠাকুরগাঁওয়ে কালেক্টরেট পাবলিক স্কুলে ব্যতিক্রমি পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে ।


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১৮, ২০২৩, ৮:৩৫ অপরাহ্ন / ৪০৪
ঠাকুরগাঁওয়ে কালেক্টরেট পাবলিক স্কুলে ব্যতিক্রমি পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
 
ঠাকুরগাঁওয়ে কালেক্টরেট পাবলিক স্কুলে ব্যতিক্রমি পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি-
বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে ঠাকুরগাঁও কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে স্কুল প্রাঙ্গণে পিঠা উৎসব হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার লক্ষে ও নতুন প্রজন্মেকে পিঠার সাথে পরিচিত করার জন্য এ আয়োজন। বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে দুপরে স্কুলের বিভিন্ন শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে এই পিঠা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। তৃতীয় শ্রেণি থেকে শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণির প্রায় ১ হাজার শিক্ষার্থী অশংগ্রহণ করেন। প্রথমবারের মতো এমন পিঠা উৎসবে সম্পৃক্ত হতে পেরে আনন্দ-উল্লাসে মেতে উঠেন শিক্ষার্থীরা। দেখা যায়, এই উৎসবকে ঘিরে স্কুল মাঠে ৫০টিরও বেশি স্টলে সাজানো হয় বিভিন্ন প্রকার পিঠা। স্টল গুলোতে মুখরোচক বিভিন্ন ধরণের অন্তত ২০-২৫ আইটেমের পিঠা শোভা পায়। এসব পিঠা বাড়ি থেকে অভিভাবকগণের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা তৈরি করে আনেন। শিক্ষার্থীদের তৈরি এসব পিঠার স্টলে পরিদর্শন করেন ঠাকুরগাঁও  জেলা প্রশাসক মো. মাহবুবুর রহমান। বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার স্নেহা বলেন, আর আগে এক সঙ্গে এতো ধরনের পিঠা কখনও দেখা ও খাওয়া হয়নি। স্কুলে এমন আয়োজনের জন্য আজকে আমরা এতোগুলো নানা ধরনের পিঠার সঙ্গে পরিচিত হতে ও খেতে এবং স্বাদ নিতে পারলাম। প্রত্যাশা করি এ ধরনের আয়োজন যেন প্রতিবছর অব্যাহত থাকবে। অভিভাবক ফাহমিদা আক্তার বলেন, এমন উদ্যোগ নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। কারণ আজকে এমন আয়োজন করা হয়েছে বলেই আমরা সন্তান নতুন নতুন পিঠা দেখতে ও জানতে পারছে। বাসায় যদিও আমরা শীতের সময় নানা ধরনের পিঠা বানিয়ে খেয়ে থাকি তা মাত্র দুই এক প্রকার। আর পিঠা উৎসবে এখানে অন্তত ২০-২৫ আইটেমের পিঠা দেখতে পারছি। তাই এই স্কুলের মতো অন্যান্য স্কুলেও এমন আয়োজন করা উচিত।  ঠাকুরগাঁও কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোতালেব হোসেন ঢাকা মেইলকে বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় ও সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো এ স্কুলে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়।  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন আয়োজন বর্তমান ছেলেমেয়েদের জন্য একটি বড় শিক্ষা বলে মনে করেন জেলা মহিলা কল্যাণ ক্লাব ও মহিলা ক্রিড়া সংস্থার সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌসি। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, নতুন প্রজন্ম এখনো অনেকে পিঠা সম্পর্কে জানে না। তাই আমাদের বাঙালির সংস্কৃতি পিঠা সম্পর্কে বাস্তব শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যেই এই পিঠা উৎসবের আয়োজন। এমন আয়োজন ভবিষ্যতে থাকবেও বলে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক জানান। তিনি আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু পিঠা উৎসব নয়, নবান্ন, বসন্ত, বর্ষবরণসহ আমাদের বাঙালি জাতির যেসব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য রয়েছে সেগুলোকে চর্চা করা উচিত ও প্রয়োজন। তাহলে নতুন প্রজন্ম এগুলো সম্পর্কে জানতে পারবে। আগে আমরা যা দেখেছি ও জেনেছি, তা এই প্রজন্মকে জানানোর জন্য এসব আয়োজন করা প্রয়োজন।
মোঃ মজিবর রহমান শেখ
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,
০১৭১৭৫৯০৪৪৪
ঠাকুরগাঁওয়ে রানীশংকৈলে বরই চাষে কৃষকের ভাগ্য বদল ।
মোঃ মজিবর রহমান শেখ, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি-
ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলায় বরই (কুল) চাষ করে ভাগ্যে বদলেছে কৃষকের। শীতের সুস্বাদু ফল বরই। দেশে এখন টক-মিষ্টি, দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন জাতের বরই চাষ হচ্ছে। বলছিলাম ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ করনাইট গ্রামের কৃষক আমানুল্লাহ আমান এর কথা‌। গত দুই বছর আগে টিভিতে কৃষি দিবানিশিতে বরই চাষের উপর একটি প্রতিবেদন দেখে তিনি নিজেও বরই চাষে উদ্বুদ্ধ হন। সেই সুবাদে আমান তার পাঁচ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে কাশ্মীরি আপেল কুল ও বল সুন্দরী কুলের ৪৩০ টি চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেন। চারা রোপণের ৬ মাস পরেই ফুল আসতে শুরু করে। বর্তমানে তার গাছে গাছে দুলছে থোকা থোকা বরই। এমন দৃশ্য যেন চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মত। দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই আসছেন তার বরই বাগান দেখার জন্য । এমন উদ্যোগে এখন তার বাগানে কাজ করে ছয় থেকে সাতটি পরিবার চলছে। রফিকুল ইসলাম নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, আমান ভাই যে বাগানটি করেছে এটি তার ভালো একটি উদ্যোগ। আমি মাঝে মাঝেই তার বাগান দেখার জন্য আসি। এবার গতবছরের তুলনায় বরই এর ফলন বেশি ভালো হয়েছে। এর আগে আমাদের এলাকায় এমন ভাবে চাষ হতো না। কিন্তু ইদানিং কিছু কিছু জায়গায় চাষ হওয়া শুরু হয়েছে। আমিও পরিকল্পনা করছি আমার কিছু পতিত জমি আছে সেখানে বরই ও মাল্টা চাষাবাদ করার। কৃষক আমানুল্লাহ আমান জানান, টিভিতে প্রতিবেদন দেখে আমারও ইচ্ছে জাগে বরই চাষ করার। আমার আরো অন্যান্য চাষাবাদ রয়েছে। চাষের আগ্রহের জায়গা থেকে বাড়ির পাশে ৫ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জায়গা থেকে বরই চারা সংগ্রহ করে রোপণ করি। গতবারের থেকে এবার বরইয়ের ফলন বেশি ভালো হয়েছে। গত বছর এ বাগান থেকে আমি সব মিলিয়ে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার মতো বরই বিক্রয় করেছি। এবার যে ফলন হয়েছে আবহাওয়া যদি অনুকূলে থাকে তাহলে গত বছরের থেকে বেশি লাভবান হতে পারবো । সব থেকে বড় বিষয় হলো আমি আমার চিন্তাধারায় সফল হতে পেরেছি। আমি একটা কথায় বলবো যাদের পতিত জমি আছে সেসব জমি ফেলে না রেখে আপনারা বরই, মালটা, কমলা ও ড্রাগনসহ আধুনিক এ চাষাবাদের মাধ্যমে একজন ভালো উদ্যোক্তা হতে পারেন। এতে করে দেখা যাবে দেশে ফলের ঘাটতি, ভিটামিনের অভাব পূরণ ও বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। রানীশংকৈল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সঞ্জয় দেবনাথ জানান, দিন দিন উপজেলায় চাষ বাড়ছে। উপজেলায় ৮ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে। যারা আগ্রহী হচ্ছে তাদের নানাভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। চারা সংগ্রহের বিষয়েও তাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দেওয়ায় চাষ দিনদিন বাড়ছে।
মোঃ মজিবর রহমান শেখ
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি,
০১৭১৭৫৯০৪৪৪
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে নান্দনিক সজনে ফুল।
জসীমউদ্দীন ইতি ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি –
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার গাছে গাছে এখন শোভা পাচ্ছে নান্দনিক সজনে ফুল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সজনার ভাল ফলনের আশা করছেন সজনা চাষি ও সংশ্লিষ্ট কৃষি বিভাগ।
উপজেলায় প্রচুর সজনার গাছ রয়েছে। বহুগুণে গুণান্বিত যাদুকরি সবজি সজনা। ঔষধি গুণাগুণেভরা, সুস্বাদু, কোনো উৎপাদন খরচ নেই, অধিক লাভজনক এবং বাজারে ব্যাপক চাহিদা সম্পন্ন সবজি সজনা।
শীতের রিক্ততা কাটিয়ে এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে সজনা গাছ। মধু সংগ্রহে ব্যস্ত মৌমাছি আর সজনা ফুলে আকৃষ্ট হচ্ছে পথিক। পুষ্টিসমৃদ্ধ মৌসুমি সবজির মধ্যে সজনা অন্যতম, যা দেশের সর্বত্রই পাওয়া যায়। ড্রামস্টিক, মরিঙ্গাসহ দেশে-বিদেশে সজনা বহু নামে পরিচিত হলেও বাংলাদেশে সজনা নামেই পরিচিত। সজনার বহুবিধ ঔষুধি গুণাগুণ রয়েছে।
পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে সজনাতে আ্যানিমিয়া, জয়েন্ট পেইন, ক্যান্সার, কোষ্টকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, ডায়রিয়া, হার্ডপেইন, ব্লাডপেসার, কিডনিতে পাথর ধ্বংস, মায়ের দুধ বৃদ্ধি করাসহ বিভিন্ন ঔষুধি গুণাগুণ রয়েছে। সজনা গাছকে প্রচলিত বিভিন্ন খাদ্য প্রজাতির মধ্যে সর্বোচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন উদ্ভিদ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বহুবিধ খাদ্যগুণ সম্পন্ন হওয়ার দক্ষিণ আফ্রিকায় সজনা গাছকে যাদুক গাছ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এক বেসরকারি সংস্থা নবলোকের প্রকাশিত ‘নিউট্রিশন ফ্যাকটর অফ মরিঙ্গা লিপ’ এ উল্লেখ করা হয়েছে সজনার পাশাপাশি সজনা পাতা পুষ্টি ঘাটতি পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এতে দুধের চেয়েও বেশি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, জিংক বিদ্যমান। শরীরে কোলস্টরলের মাত্রা ঠিক রাখে, হজমের সাহায্য করে, শরীরে পুষ্টি ও শক্তি যোগায়, বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে এবং সজনার গুড়ার পেষ্ট ত্বকের জন্য উপকারী ও লিভার এবং কিডনি সচারাচর দু’ধরণের হয়ে থাকে। মৌসুমি জাতের বেশিরভাগ আবাদ হয়ে থাকে।
এসব নানাবিধ গুণের কারণে প্রতিবছর দেশে প্রায় সবস্থানে প্রচুর পরিমাণে সজনার চারা ও ডাল রোপন করা হয়। একক কোনো চাষাবাদ কোথাও না হলেও প্রতিটি অঞ্চলে অন্যান্য ফসল আবাদের অনুপযোগী যেমন ক্ষেতের আইল, ঘরের বাঁধ এবং রাস্তার দু’পাশ দিয়ে মৌসুমি সজনার আবাদ রয়েছে।
সজনা চাষে সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করতে সব রকম পরামর্শ দিয়ে আসছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। হরিপুর উপজেলার ৬ ইউনিয়নে সজনার চাষ হয়। চলিত মৌসুমে প্রতিটি গাছ ফুলে ফুলে ভরে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার রুবেল হোসেন  জানান, পুষ্টিগুণের দিক থেকে সজনা অত্যন্ত উপকারী একটি সবজি। সজনা লবণ সহিষ্ন একটি ফসল। অন্যান্য সবজির ক্ষেত্রে পরিচর্যার প্রয়োজন হলেও অনেকটা পরিচর্যাও প্রয়োজন ছাড়াই সজনার উৎপাদন সম্ভব। সজনা অল্প দিনেই খাওয়ার উপযোগী হয় এবং বাজারজাত করা যায়। খেতে সু-স্বাদু ও বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকায় সবজির আবাদ অত্যন্ত লাভজনক।
জসীমউদ্দীন ইতি
০১৭৫১০৭৯৮২৩
ঠাকুরগাঁও