“জ্বালানি সংকটে দেশ,মিলছে না সমাধান”


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৬, ২০২২, ৩:৪৬ অপরাহ্ন / ৩৩৯
“জ্বালানি সংকটে দেশ,মিলছে না সমাধান”

জ্বালানি সংকটে দেশ,মিলছে না সমাধান

বিশেষ প্রতিনিধি, আজিজুল হক রতন সরকার।

কোনো দেশের অন্যতম প্রথম শক্তি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি।এর কোনোটির একটির সংকট দেখা দিলেই দেশের উন্নয়ন বাধাপ্রাপ্ত হয়। জীবনমানে নেমে আসে চরম অস্থিতিশীলতা।বর্তমানে জ্বালানি সংকট ও উচ্চম্যূলের প্রভাব গোটা বিশ্বেই দেখা যাচ্ছে বিদ্যুৎ বিভ্রাট। সত্য হচ্ছে স্টিভ হিলের আশঙ্কা। দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং নেপাল ইতোমধ্যে লোডশেডিং এ বাধ্য হচ্ছে। মে মাসে ভারতেও একই সমস্যা দেখা দেয়। দক্ষিণ এশিয়ার বাহিরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও লোডশেডিং হচ্ছে। এমনকি, জাপান তার নাগরিকদের এসির ব্যবহার কমাতে অনুরোধ করতে বাধ্য হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বেও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি নিয়ে জনমনে অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে, সরকার হিমশিম খাচ্ছে দাম নিয়ন্ত্রণে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে বেশ প্রশংসনীয় সফলতা অর্জন করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫০০০ মেগাওয়াট, যা দৈনন্দিন চাহিদা ১৩০০০-১৫০০০ মেগাওয়াটের তুলনায় অনেক বেশি।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় জুলাই মাস থেকে দেশের ডিজেলভিত্তিক  বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন স্থগিত রাখা হয়।ফলে জুন থেকে তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি বন্ধ রেখেছে সরকার।ফলে হুরহুর করে বেড়ে যায় তেল চালিত গাড়ি ভাড়া। ভোগান্তিতে পরে সাধারণ মানুষ। তারপরই গত ১৯ জুলাই থেকে দেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। সে দিন থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং শুরু হয়। যা পরে দুই ঘণ্টা করার ঘোষণা আসে।তবে বর্তমানে রাজধানী ঢাকায় ৬ ঘণ্টার সহ অন্যান্য জেলার বেশির ভাগ এলাকায় তিন থেকে চার ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে বলে জানা যায়।গ্রামাঞ্চলে এ লোডশেডিংয়ের সময় আরো বেশি বলে খবর পাওয়া গেছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, ভারত থেকে আমদানির বাইরে দেশে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১৯ হাজার ৫৩৭ মেগাওয়াট। দিনে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে সাড়ে ৯ হাজার থেকে সাড়ে ১২ হাজার মেগাওয়াট। আর এখন চাহিদা আছে ১২ হাজার থেকে সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত। বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন সক্ষমতার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কাজে লাগাতে পারছে না শিল্পকারখানা।
পিডিবির তথ্য বলছে, দেশে এখন মোট বিদ্যুৎকেন্দ্রের সংখ্যা ১৩৩। এর মধ্যে গ্যাসচালিত ৫৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১১ হাজার ১৭ মেগাওয়াট। উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৫ হাজার মেগাওয়াট। অর্ধেকের বেশি উৎপাদন ক্ষমতা অলস পড়ে থাকছে গ্যাসের অভাবে। ফার্নেস তেলচালিত ৫৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৫ হাজার ৫৪১ মেগাওয়াট এবং ১১টি ডিজেল কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৫১৫ মেগাওয়াট। সব মিলে জ্বালানি তেল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৭ হাজার মেগাওয়াটের বেশি হলেও দিনে গড়ে উৎপাদন হচ্ছে আড়াই থেকে ৪ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত।
জ্বালানি-সংকট নিয়ে ব্যবসায়ীরা ভয়ের মধ্যে আছেন বলে মন্তব্য করেন ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ব্যবসার প্রতিযোগিতা সক্ষমতার মূল উপাদান জ্বালানি। বর্তমানে জ্বালানি–সংকটের মধ্যে আমরা কীভাবে এগিয়ে যাব, সেটাই এখন বড় বিষয়। তবে জ্বালানি–সংকট কোন দিকে যাচ্ছে, তা নিয়ে আমাদের মধ্যে ভয় কাজ করছে।’
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা আমরা খুব একটা গুরুত্বসহকারে নিই না। প্রথাগত রাজনৈতিক ব্যবস্থায় অর্থনীতিবিদেরা আশঙ্কা প্রকাশে দক্ষ। তাঁরা দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বিরুদ্ধ মন্তব্য করেছিলেন। করোনায় পাঁচ লাখ মানুষ মারা যাবে বলেও শঙ্কা ছিল তাঁদের। যদিও বাস্তবে তা হয়নি। অবশ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ হবে কি না, জানি না।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পরিকল্পিতভাবেই এগোচ্ছে। পরিকল্পনায় কোনো দুর্বলতা নেই। তবে দারিদ্র্য বিমোচনে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে একটু সময় বেশি লাগবে। বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী  নসরুল হামিদ বলেন,বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়েক মাস ধরে বিল পাচ্ছে না। জ্বালানি তেলের দামও কমছে না বিশ্ববাজারে। ডলার সাশ্রয়ের কারণে এলএনজি আমদানি করা যাচ্ছে না। এতে করে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। তাই লোডশেডিং বন্ধ করা যায়নি। এটি আরও কিছুদিন চালু রাখতে হবে।
বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট যে কতটা খারাপের দিকে মোড় নিয়েছে, সে নিয়ে রাজনীতিবিদদের কথায় কিছুটা অবগত হওয়া যাচ্ছে।তবে বেশিরভাগ উচ্চ পর্যায়ের রাজনীতিবিদ বিষয়টি নিয়ে সঠিক কোনো কারণ বা সমাধান দিতে পারেননি।তবে বিশ্বের সামরিক বাহিনীগুলোও ঠিকই জানে জ্বালানি পরিস্থিতির আসল রূপ। এর মানে হচ্ছে, বিশ্ব একে-অপরের সঙ্গে কে কত বেশি এনার্জি সংগ্রহ করতে পারে তা নিয়ে ভবিষ্যতে প্রতিযোগিতায় নামতে পারে। এ ধরনের যুদ্ধসম পরিবেশে যদি তথ্যপ্রবাহও নিয়ন্ত্রণ করা হয়, তাতেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই। বিভিন্ন দেশের সরকার আর প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই ঠিক করে দেবেন সাধারণ নাগরিকেরা কী ধরনের তথ্য, দর্শন, ও আদর্শ নিয়ে জানতে পারবে। অপরদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে জীবন মান বেহাল দশায় পরিণত হচ্ছে।নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য সংসার চালানো দিন দিন কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।তাদের কাছে দেশ যেন এখন এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে, বেচেঁ থেকেও ক্রমশ হারিয়ে এর সমাধান নেই কারোর জানা।