চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের কানসাট ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চৌকিদার দিয়ে হতদরিদ্র মহিলাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
ফয়সাল আজম অপু, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সেফাউল মূলক ও তাঁর দুই চৌকিদারের বিরুদ্ধে ওই ইউপির একজন হতদরিদ্র মহিলাকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী জোবায়ের আহমেদ এর কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী জুলেখা বেগম (৫০) নামে এক হতদরিদ্র মহিলা। তিনি কানসাট ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের আব্বাস বাজার এলাকার মৃত আত্তার আলীর কন্যা।অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে ওই ভুক্তভোগী মহিলা জুলেখা বেগম বলেন, আমি একজন অসহায় অতি- হতদরিদ্র প্রকৃতির মহিলা। আমার স্বামী নাই, ছেলে নাই, ভাই নাই, সংসার চালানোর মতো কর্মক্ষম কেউ নাই। তাই অতি কষ্টে খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাই। আমার কষ্ট দেখে গত প্রায় দেড় মাস পূর্বে, ৫ নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ড সদস্য মোঃ আহসান আলী আমার বাড়ীতে গিয়ে আমার নিকট জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি চাই। আমি ওয়ার্ড সদস্যকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি প্রদান করি। ওয়ার্ড সদস্য আমাকে ১০ টাকা কেজি চাউলের কার্ড দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। আমি বিভিন্ন সময় কানসাট ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে সেফাউল মূলক চেয়ারম্যানের নিকট ১০ টাকা কেজি চাউলের কার্ড পাওয়ার অনুনয়-বিনয় করলে আমাকে কার্ড দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে থাকে। ইতিমধ্যে আমি জানতে পারি ১০ টাকা কেজির চাউল প্রাপ্তির কার্ডের তালিকায় আমার নাম আসে নাই। গত বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) বেলা ১১ টার সময় আমি চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে গিয়ে কান্নাকাটি করে তার নিকট ১০ টাকা কেজি চাউলের কার্ড চাই। এতে করে চেয়ারম্যান আমার উপর ক্ষীপ্ত হয়ে উঠে। এবং আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি- গালাজ করে। একপর্যায়ে অফিসের কলিংক বেল চাপলে নাজির হোসেন চৌকিদার ও কবির হোসেন চৌকিদার চেয়ারম্যানের অফিস কক্ষে উপস্থিত হয়। চেয়ারম্যানের হুকুমে নাজির চৌকিদার আমাকে চড় থাপ্পর তুলে এবং অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে অপমান অপদস্ত করে। চেয়ারম্যান সেফাউল মুলক হুকুম দেয় যে, এই মহিলাকে অফিস কক্ষ থেকে টেনে হেচড়ে বাহির করে দাও। হুকুম পাওয়া মাত্রই নাজির চৌকিদার ও কবির চৌকিদার আমার চুলের মুঠি ধরে মারধর করতে করতে টেনে হেচড়ে চেয়ারম্যানের অফিস থেকে বাহির করে দেয়। নাজির চৌকিদার আমার পরনের বস্ত্র টানা-হেচড়া করে শীলতা হানি ঘটায়। আমার কান্নাকাটি ও ঘটনার শোরগোল শুনে আশে পাশের লোকজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে আমাকে উদ্ধার করে। আসামীগণ আমাকে হুমকি প্রদান করে যে, যদি পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদে পা রাখিস তাহলে তোকে প্রানে শেষ করে ফেলবো। এই ঘটনার পর ইউএনও এবং ওসি স্যারের কাছে যাই। তারা লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। আমি অভিযোগ দিয়েছি, এ ঘটনার দৃষ্টান্ত মূলক বিচার চাই।
কানসাট ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ৫ নং ওয়ার্ড সদস্য আহসান আলী মুঠোফোনে বলেন, আমি জুলেখার নিকট এনআইডি কার্ড নিয়েছিলাম এটা ঠিক আছে। তবে এবিষয়ে চেয়ারম্যান এর নির্দেশে চৌকিদার মারধোর করেছে সেদিন ছিলাম না। তাই এবিষয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করতে চাই না বলে ফোন কেটে দেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, ইউপি চেয়ারম্যান মো. সেফাউল মূলক বলেন, আমি তার সাথে কোনো খারাপ আচরণ করি নাই। আমাকে বার বার বিরক্ত করার কারনে বাধ্য হয়ে চৌকিদারকে নির্দেশ দিয়েছি ওই মহিলাকে বাইরে বের করে দিতে। পুলিশের মধ্যেস্থতায় মহিলার সাথে মিমাংসার কথা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরী জোবায়ের আহমেদ অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হতদরিদ্র এক মহিলার অভিযোগ পেয়েছি, একজন অফিসারকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছি। তাছাড়া এটি ইউএনও মহদয়ের বিষয়, তিনিই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, কানসাট ইউপির এক হতদরিদ্র মহিলা, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মারধরের লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে যথাসময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফয়সাল আজম অপু
চাঁপাইনবাবগঞ্জ