“খুলনায় ডাউনলোড করা অতিথি পাখির ডাক বাজিয়ে চলছে পাখি শিকার।”
মোঃ শামীম হোসেন – খুলনা
প্রতিবছরই শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে পরিযায়ী পাখিরা আসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জলাশয়ে। মূলত নভেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ-এপ্রিল মাস পর্যন্ত অবস্থান করে এসব পাখি। শীত শেষ হলে আবার ফিরে যায় তারা। এবছরও ব্যতিক্রম ঘটেনি। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নড়াইলসহ খুলনা, বাগেরহাট ও আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিল ও জলাশয়গুলোতে দল বেঁধে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখিরা। পানি কমে আসা জলাশয়গুলোতে খাবারের সন্ধানে অতিথি পাখির সঙ্গে আসছে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন পাখিও। আর এই সুযোগে ফাঁদ পেতে নির্বিচারে পাখি নিধন করছে অসাধু শিকারিরা। অন্যান্য বছরের মতো এবারও মাছে বিষ দেওয়ার পাশাপাশি প্রযুক্তির ফাঁদ পেতে অভিনব কৌশলে পাখি শিকার করছে তারা।
প্রতি বছর প্রচণ্ড শীতের প্রকোপ থেকে আত্মরক্ষার্থে সুদূর হিমালয়, সাইবেরিয়াসহ শীত প্রধান অঞ্চল থেকে অতিথি পাখি এ অঞ্চলে আসে। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে বালি হাঁস, জলপিপি, কোম্বডাক, সরালী, কাস্তে চাড়া, পাতাড়ি হাঁস, কাদা খোচা, ডংকুর, হুরহুর, খয়রা ও সোনা রিজিয়া অন্যতম। স্থানীয় পেশাদার শিকারিরা আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিবছরেই মেতে ওঠে পাখি নিধনে। এতে করে কমতে থাকে অতিথি পাখির সংখ্যা। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, আশির দশকে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির অতিথি পাখি আসতো। বর্তমানে এ সংখ্যা নেমে ৬০ থেকে ৭০ চলে এসেছে। এবছর শীতের আগেভাগেই নড়াইলের চাঁচুড়ী বিল, ইছামতি বিল, কাড়ার বিল, নলামারা বিল, তালবাড়িয়া বিল, পাচুড়িয়া বিল, গোপালপুর-বগুড়ার বিল হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠছে। হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে খুলনার ৯টি উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়ও। এই অঞ্চল জুড়ে বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় খাল-বিল, জলাশয় ও চিংড়ি ঘের রয়েছে। মূলত এসব জলাশয়ে শীত মৌসুমে অল্প পানিতে মাছ শিকারের জন্য প্রচুর পরিমাণে পাখি আসে। বিদেশি পাখিদের সঙ্গে থাকে- বালি হাঁস, কালকোচ, কায়েম, ডুঙ্কর, পানকৌড়ি, পাতাড়ি হাঁস, হাঁস ডিঙ্গি, কাদা খোঁচা, খয়রা, চেগা, কাচিচোরা, মদনটাক, শামুখখোলা ও বকসহ নানা প্রজাতির পাখি। সন্ধ্যা নামতেই বিভিন্ন প্রজাতির এসব পাখি দল বেঁধে এসব এলাকায় গিয়ে খাদ্য সংগ্রহে নেমে পড়ে। আর সেখানে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকে শিকারি চক্র। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপকূলীয় খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে শিকারিরা রাতে অবাধে পাখি নিধন করে আসছে। শিকারিরা রাতে জলাশয়ের পাশে ফাঁদ পেতে রেখে ধানক্ষেতে বসে পাখির ডাকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাঁশি বাজায়। এতে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক পাখিই সেখানে উড়ে এসে শিকারির ফাঁদে পড়ে আটকে যায়। দাকোপ উপজেলার সুতারখালী গ্রামের এক শিকারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তালপাতার সঙ্গে স্কচটেপ জড়িয়ে মোটর সাইকেলের হাইড্রোলিকের কভারের এক মাথায় সুপারগ্লু লাগিয়ে রাবারের সাহায্যে তৈরি করা হয় অভিনব এই বাঁশি। এ ছাড়াও শিকারিরা নাইলনের সুতা দিয়ে তৈরি ছোট-বড় ফাঁদ পাখির চলার পথে পেতে রাখে। রাতে পাখিরা যখন উড়ে বেড়ায়, তখন ওই ফাঁদে শত শত পাখি আটকা পড়ে। আবার চোখে আলো ফেলে, কেঁচো দিয়ে বড়শি পেতে, কোচ মেরে ও কারেন্ট জাল পেতেও পাখি শিকার করে থাকে কিছু শিকারি। কেউ কেউ আবার মাছ ও ফড়িং দিয়ে ফাঁদ পেতে, কীট-পতঙ্গের সঙ্গে কীটনাশকের টোপ দিয়ে, খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে, বড়শি ও কারেন্ট জালের ফাঁদ পেতেও পাখি শিকার করে থাকে। এসব ফাঁদে এক-এক জন শিকারি এক রাতেই নিধন করে কয়েকশ অতিথি পাখি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এবছর শিকারি চক্র প্রযুক্তির সহায়তায় নিয়েও পাখি শিকার করছে। তারা অতিথি পাখিদের ডাক আগে থেকেই ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে পোর্টেবল সাউন্ড-বক্সে ঢুকিয়ে রাখে। যেখানে পাখিদের আনাগোনা বেশি সেসব বিল ও জলাশয়ের বৃহৎ এলাকা জুড়ে জালের ফাঁদ পাতে। আর মাঝখানে ওই পোর্টেবল সাউন্ড-বক্সে পাখির ডাক বাজানো শুরু করে। আর ওই ডাক শুনে সতীর্থদের নিরাপদ অবস্থান মনে করে শিকারির পাতা ফাঁদে নামতে শুরু করে পাখিরা। দাকোপের এলাকার কয়েকজন পাখি শিকারি সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি রাতেই ধানক্ষেতে বসে পাখির ডাকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাঁশি অথবা মোবাইল ফোনে রেকর্ড বাজিয়ে উড়ন্ত পাখিদের নিচে নামানো হয়। পরে ফাঁদে ফেলে পাখি শিকার করা হয়। এসব পাখি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দাকোপ উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. পরিতোষ কুমার রায় বলেন, তিনি তার দফতরের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ইউনিয়ন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
একই চিত্র পার্শ্ববর্তী রামপালেরও। উপজেলার কালেখারবের এলাকার এক পাখি শিকারি তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বীকার করেন, ৫ বছর ধরে তিনি পাখি ধরেন। প্রথমে শখের বসে ধরতেন। এখন বছরের প্রায় ৬ মাস এই পাখি বিক্রির করেই তার সংসার চলে। আকার ভেদে ৩০০ থেকে ১৫০০ টাকা পর্যন্ত একেকটি পাখি বিক্রি হয়। এই সময়টা ভালোই চলে তার। তবে একটু গোপনে করতে হয়। নড়াইলের আরেক পেশাদার পাখি শিকারি জানায়, বাজারে অতিথি পাখির চাহিদা খুব বেশি। ধরতে পারলে বিক্রিতে কোনও সমস্যা নেই। অনেকেই অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখেন। ফলে ভোর রাতেই পাখি তাদের বাড়িতে পৌঁছে যায়। কালেখারবেড় এলাকার মিকাইল শেখ বলেন, এলাকায় কিছু মানুষ রয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে বিষযুক্ত মাছ দিয়ে পাখি শিকার করে। স্থানীয় প্রভাবশালী ও অর্থবিত্তের মালিকরা এই পাখি কিনে থাকেন। অনেক সময় দূরদূরান্ত থেকেও মানুষ এসে পাখি কিনে নেয়। প্রতিদিন রাত ৮টার পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত চলে অভিনব কায়দায় পাখি নিধনের কর্মযজ্ঞ। শিকার করা পাখি নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি চড়ামূল্যে বিক্রিও করে তারা। রাতে শিকার করা এসব পাখি সূর্যের আলো ফোটার আগেই বিক্রি হয়ে যায়। অতিথি আপ্যায়নসহ ছোট ছোট ঘরোয়া অনুষ্ঠানে এই অতিথি পাখির বিশেষ কদর রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, বিষ দিয়ে শিকার করা এসব পাখি খাওয়ায় দেহে দীর্ঘস্থায়ী নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সেই সঙ্গে বিষযুক্ত মাছ খাওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে মরে পড়ে থাকা পাখিরা পরিবেশের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। বাগেরহাটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বিষ দিয়ে শিকার করা পাখি বা কোনও প্রাণি বার বার খেলে মানুষের শরীরে নানা ধরনের দীর্ঘস্থায়ী জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি কিডনি, লিভারসহ দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিকল হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। পাইকগাছা উপজেলার বাতিখালী বনায়ন সমিতির অধ্যাপক জিএমএম আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘পাখিরা রাতের চেয়ে দিনের বেলায় বেশি নিরাপত্তাহীন থাকে। বিশেষ করে রাতের নিরাপদ আশ্রয়স্থল থেকে সকালে যখন খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে তখন তাদের শিকারিদের কবলে পড়তে হয়।’ পাখি শিকার বন্ধে প্রশাসনের মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির দাবি জানান তিনি। পাখি বিশেষজ্ঞ শরীফ খান বলেন, পাখি শিকারের জন্য দেওয়া বিষযুক্ত মাছ অন্যান্য মাছ এবং মাংসাশী প্রাণিরাও খেয়ে থাকে। এছাড়া বিষযুক্ত মাছ খেয়ে সব পাখি সঙ্গে সঙ্গে অসুস্থ হয় না, অনেক পাখি আছে যারা কিছুদিন যন্ত্রণা ভোগের পর মারা যায়। বিষ খাওয়া পাখি শিকারিদের হাতে ধরা না পড়ালেও বিপদজনক। ওই পাখি যখন মারা যায় তখন, সাপ, ইঁদুর, শেয়াল, চিল, কাকসহ মাংসাশী প্রাণিরা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এক কথায়, বিষযুক্ত মাছ দিয়ে পাখি শিকারের ফলে শুধু অতিথি পাখি বা দেশি পাখি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা নয়; পুরো জীব বৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার ফলে পরিবেশের উপর একটি বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন এলাকায় যারা পাখি শিকার করে তাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। সেই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের সচেতন করতে হবে পাখি রক্ষায়। সব শ্রেণির নাগরিকদের সচেতন করলে পাখি শিকার বন্ধ হবে। আর এতে প্রকৃতিতে আগের মতোই পাখির দেখা মিলবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। নড়াইলের পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েস এর প্রধান সমন্বয়ক আলমগীর কবির বলেন, শিকারিদের ভয়াবহ ছোবল থেকে মুক্ত হতে পারছে না পাখিগুলো। এসব পাখি নিধনের কারণে একদিকে জীব-বৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ফসলি জমিতে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ বাড়ছে। পাখিরা শুধু প্রকৃতির শোভা বর্ধন করে না, ভারসাম্যও রক্ষা করে। পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে জানিয়ে দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাস জানান, গত ৬ নভেম্বর তিলডাঙ্গা ইউনিয়নে বটবুনিয়া গ্রামের শহিদুল বিশ্বাসের ছেলে রায়হান বিশ্বাস (২৬) কামিনিবাসিয়া পুলিশ ফাঁড়ির কাছে বিলের ভেতর বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে পাখি শিকারে যায়। বেলা ১১টার দিকে ফাঁড়ির এএসআই মো. রতন হোসেন অভিযান চালিয়ে একটি অতিথি পাখি (কালাতিতি) ও পাখি ধরার সরঞ্জামসহ রায়হানকে বিলের ভেতর থেকে হাতেনাতে আটক করে। বিকালে তার আদালত তাকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। এছাড়াও অতিথি পাখি খাওয়ার উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ ও বহনের দায়ে গত ৭ নভেম্বর সুতারখালী ইউনিয়নের একজনকে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম বলেন, পাখি শিকারের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের সঙ্গে কথা বলেছি। বিভিন্ন এলাকার শিকারিদের তালিকা করা হচ্ছে। খুব দ্রুত শিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এছাড়াও বিভিন্ন ভাবে পাখি শিকার বন্ধে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।
নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিরাপত্তা ২০১২ আইনের ৩৮ (১) ধারা মোতাবেক অতিথি পাখি শিকার দণ্ডনীয় অপরাধ। শিকারিদের শনাক্ত করতে পারলে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
“খুলনার ফুলতলা উপজেলা হাসপাতালে রোগীর খাবার নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।”
মোঃ শামীম হোসেন – খুলনা
খুলনার ফুলতলা উপজেলা হাসপাতালে রোগীর খাদ্য সরবরাহে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। নির্ধারিত পরিমাণের কম এবং নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ করেছেন রোগীরা। হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, রোগীর জন্য সপ্তাহে মুরগী ৩ দিন ও মাছ তিন দু বেলা (দুপুর ও রাত) সরবরাহ করার নির্দেশনা রয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর হাসপাতালে মোট ৪৭ জন রোগী ভর্তি ছিলো সে অনুযায়ি ৪ কেজি ৭শ” গ্রাম মুরগী মাংস দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে ২ কেজি ১শ” গ্রাম । এছাড়া চাউল কম ছিলো ১ কেজি ১শ” গ্রাম, জনপ্রতি ৩ গ্রাম করে জিরা সরবরাহ করার কথা থাকলে ৪৭ জন রোগীর জন্য ১৪১ গ্রাম জিরা বদলে মাত্র ৫০ গ্রাম জিরা দেওয়া হয়। গত ১ ডিসেম্ভর বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ৪৯ জন রোগী ভর্তি ছিলো এদিন রোগিদের মুরগীর মাংস দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে সিলভার কার্প, এমনকি সিডিউল অনুযায়ি বাজারের তাজা মাছ দেওয়ার কথা থাকলেও ফ্রিজে রাখা পচা ওদুর্গন্ধযুক্ত মাছ দেওয়া হয়, এবং মাছের মাথা ও লেছ সিডিউল অনুযায়ি সরবরাহ করা যাবেনা উল্লেখ করা থাকলেও সেটা করা হয়েছে। সপ্তাহে ১ দিন ২ বেলা খাসির মাংস দেয়ার কথা থাকলেও গত ২ ডিসেম্ভর শুক্রবার দুপুরে ৫০ গ্রাম খাসির মাংস দেওয়া হলেও রাতের বেলাতে সিলভার কার্প মাছ সরবরাহ করা হয়েছে। এ সব বিষয় অপকটে স্বীকার করেছেন হাসপাতালের বাবুর্চি । হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বীথি খাতুনসহ একাধিক রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরবরাহকৃত খাবারের রান্নার মান এতই খারাপ যে, রোগীরা তো দূরের কথা, স্বজনরাও মুখে দিতে পারেন না। রোগীর স্বজন ফয়সাল ,জেসমিন সহ অনেকেই বলেন, খাদ্যের মান অত্যন্ত নিম্ন হওয়ায় অনেকেই এ খাবার নেন না। বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে খান। তাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হাসপাতালে গতকয়েকদিন ধরে যাওয়া-আসা করে এমন চিত্রের প্রমাণও মিলেছে। একজন খাবার পরিবেশনকারী অকপটে বলেন, আমাদের যা এনে দেয়া হয়, তাই রান্না করে পরিবেশন করে থাকি। তবে খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলমগীর ট্রেডার্সের পরিচালক জাফর ইকবাল বলেন রোগীপ্রতি খাবারের স্কেল তৈরি করে নেয়া হয়। ওই টাকার মধ্যেই পরিমাণমতো রোগীদের সরবরাহ করা হয়। তবে তার দাবি, তার নামে লাইসেন্স থাকলেও মুলত মিঠু ভুইয়া নামে এক ব্যক্তি হাসপাতালে খাবার সরবরাহ করে এ দায় আমি নিতে পারিনা তারপরও খোজখবর নিয়ে দেখবেন বলে তিনি জানান। এছাড়া ২০২২ -২৩ অর্থবছরে উপজেলা স্বাস্থ্যকম্লেক্স্ ফুলতলা এর রুগীদের পণ্য সামগ্রী ও অন্যান্য মনহরী ধোলাই এর দরপত্রের দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিকারের জন্য ফুলতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নিকট গত ১ ডিসেম্ভর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মেসার্স বিশ্বাস কনষ্টোকশন এর স্বত্তাধীকারী মোঃ আবু তাহের রিপন। এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ জেসমিন আরা খানম বলেন, আগে রোগী প্রতি ১২৫ টাকা বরাদ্দ থাকলেও বর্তমানে ১৭৫ টাকা হয়েছে সে হিসাবে খাবারের মান আরো ভালো হওয়ার কথা, খাবারের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিন বলেন এমন অভিযোগ আমিও পেয়েছি ইতিমধ্যে এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে , রোগিদের খাবারে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই , যদি প্রমান মেলে তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে । আর রোগীদের মাঝে উন্নত মানের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যাপারে জোরালো পদক্ষেপ নেব বলেও তিনি জানান।