Dhaka ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“খুলনার ডুমুরিয়ায়  বেগুন চাষ করে স্কুল শিক্ষক মিজানুরের  সফলতা”

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:২২:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২২
  • ৩৩৭ Time View
“খুলনার ডুমুরিয়ায়  বেগুন চাষ করে স্কুল শিক্ষক মিজানুরের  সফলতা”
খান আরিফুজ্জামান নয়ন, ডুমুরিয়া, খুলনা।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার গোনালী গ্রামের স্কুল শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান বিশ্বাস। খুলনা সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতোকোত্তর পাশ করে ডুমুরিয়ার টিপনা শেখ আমজাদ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করে আসছেন। কৃষি কাজে তাঁর কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলনা। গতবছর করোনা শুরু হলে তার স্কুল বন্ধ হয়ে যায় এবং লকডাউনে বাড়িতে বসে থাকতে তার খুব কষ্ট হয়।
অবশেষে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি নেমে যান কৃষি কাজে। প্রথম বছর উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে তিনি তার বসতবাড়ি সংলগ্ন ৩৬ শতাংশ জমিতে থাই এরিনা নামক বেগুনের আবাদ করেন এবং প্রথম বছরেই বাজিমাত। তিনি, তার ৩৬ শতাংশ জমিতে ‌চলতি বছরে ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেন। তিনি এবছর তার ঐ জমিতে থাই এরিনা জাতের বেগুনের সাথে সাথী ফসল হিসাবে পুইশাক লাগান এবং ইতোমধ্যে পুইশাক‌বিক্রয় করেছেন। বর্তমানে, তার জমিতে শোভা পাচ্ছে রকমারি সাজের বিভিন্ন সাইজের বেগুন। দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়, সাথে আছে বল্টু জাতের মরিচ। ইতোমধ্যে তার বেগুন বিক্রয় শুরু হয়ে  হয়ে গেছে এবং তিনি ১লক্ষ৫০হাজার টাকার বেগুন বিক্রয় করেছেন। তিনি, আশা করছেন তিনি তার এ জমি থেকে আরও ১ লক্ষ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন।
তার এ সাফল্যে অনেক বেকার যুবক এবং স্কুলগামী ছেলে মেয়েরা উৎসাহিত হচ্ছে। অনেকেই নতুন করে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এ নতুন জাতের বেগুনের আবাদ করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, করোনা কালিন সময়ে যখন লকডাউন ছিল, আসলে বাড়িতে বসে থাকতে অনেক কষ্ট হত, তখন ভাবলাম এই সময়টা যদি আমি আমার নিজ জমিতে শ্রম দিয়ে কিছু একটা করতে পারি, তাহলে সময় ও কাটবে, পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরন হবে এবং কিছু বেকার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারব। যে চিন্তা সেই কাজ। অবশেষে উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে থাই এরিনা জাতের বেগুনের আবাদ করলাম। প্রথম বছরেই আমার ৩৬ শতাংশ জমিতে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা লাভ করেছিলাম। এবছর বেগুনের সাথে সাথী ফসল হিসাবে প্রথমে পুইশাক ছিল। বর্তমানে বল্টু মরিচ আছে। ইতোমধ্যে   পুইশাক এবং বেগুন বিক্রি করেছি। বর্তমানে বাজার মূল্য ও খুব ভাল, প্রতিকেজি বেগুন মাঠ থেকে ৫০ -৬০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি, আরও ১লক্ষ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারব। জমিতে কাজ করে বর্তমানে আমার ভালো ভাবে সময় চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ২-৩ জন লোক আমার ক্ষেতে নিয়মিত শ্রম দিচ্ছে। ভাবছি, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও শিক্ষকতার পাশাপাশি আমি কৃষি কাজ চালিয়ে যাব।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ  ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন মোঃ মিজানুর রহমান একজন শিক্ষক হলেও তিনি আর পাঁচ জন কৃষকের মত আধুনিক পদ্ধতিতে বেগুনের চাষ করছেন। তিনি যে কাজটি করছেন, আসলে অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি বর্তমানে কৃষিতে এলাকার আইডল। তার এ সাফল্যে অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছে, অনেকেই আমার সাথে যোগাযোগ করছেন। আমার উপজেলাতে আরও কয়েক জন শিক্ষক বর্তমানে এ কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। আমরা এ সমস্ত কৃষি উদ্যোক্তা গণকে নিয়মিত প্রশিক্ষন এবং পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এ ধরনের শিক্ষিত লোকজন কৃষিতে যুক্ত হলে কৃষি আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে এবং আমরা সেই লক্ষে কাজ করছি। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার‌ মোঃ ওয়ালিদ হোসেন বলেন ভালো জাতের বেগুন চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের বেশি বেগুন চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে। এ বেগুন খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় উপজেলাজুড়ে এর চাহিদাও বেশ। কম জমিতে অধিক ফলনে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। দেশের মধ্যে ভালো  জাতের বেগুন চাষ হয়েছে বলে জানা গেছে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

শেরপুর হাইও‌য়ে পু‌লিশ ক‌্যাম্প প‌রিদর্শন কর‌লেন পু‌লিশ সুপার!

“খুলনার ডুমুরিয়ায়  বেগুন চাষ করে স্কুল শিক্ষক মিজানুরের  সফলতা”

Update Time : ০৫:২২:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২২
“খুলনার ডুমুরিয়ায়  বেগুন চাষ করে স্কুল শিক্ষক মিজানুরের  সফলতা”
খান আরিফুজ্জামান নয়ন, ডুমুরিয়া, খুলনা।
খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার গোনালী গ্রামের স্কুল শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান বিশ্বাস। খুলনা সরকারি বিএল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতোকোত্তর পাশ করে ডুমুরিয়ার টিপনা শেখ আমজাদ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করে আসছেন। কৃষি কাজে তাঁর কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলনা। গতবছর করোনা শুরু হলে তার স্কুল বন্ধ হয়ে যায় এবং লকডাউনে বাড়িতে বসে থাকতে তার খুব কষ্ট হয়।
অবশেষে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি নেমে যান কৃষি কাজে। প্রথম বছর উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে তিনি তার বসতবাড়ি সংলগ্ন ৩৬ শতাংশ জমিতে থাই এরিনা নামক বেগুনের আবাদ করেন এবং প্রথম বছরেই বাজিমাত। তিনি, তার ৩৬ শতাংশ জমিতে ‌চলতি বছরে ৭৫ হাজার টাকা খরচ করে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করেন। তিনি এবছর তার ঐ জমিতে থাই এরিনা জাতের বেগুনের সাথে সাথী ফসল হিসাবে পুইশাক লাগান এবং ইতোমধ্যে পুইশাক‌বিক্রয় করেছেন। বর্তমানে, তার জমিতে শোভা পাচ্ছে রকমারি সাজের বিভিন্ন সাইজের বেগুন। দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়, সাথে আছে বল্টু জাতের মরিচ। ইতোমধ্যে তার বেগুন বিক্রয় শুরু হয়ে  হয়ে গেছে এবং তিনি ১লক্ষ৫০হাজার টাকার বেগুন বিক্রয় করেছেন। তিনি, আশা করছেন তিনি তার এ জমি থেকে আরও ১ লক্ষ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারবেন।
তার এ সাফল্যে অনেক বেকার যুবক এবং স্কুলগামী ছেলে মেয়েরা উৎসাহিত হচ্ছে। অনেকেই নতুন করে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে এ নতুন জাতের বেগুনের আবাদ করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, করোনা কালিন সময়ে যখন লকডাউন ছিল, আসলে বাড়িতে বসে থাকতে অনেক কষ্ট হত, তখন ভাবলাম এই সময়টা যদি আমি আমার নিজ জমিতে শ্রম দিয়ে কিছু একটা করতে পারি, তাহলে সময় ও কাটবে, পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরন হবে এবং কিছু বেকার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারব। যে চিন্তা সেই কাজ। অবশেষে উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শে থাই এরিনা জাতের বেগুনের আবাদ করলাম। প্রথম বছরেই আমার ৩৬ শতাংশ জমিতে ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা লাভ করেছিলাম। এবছর বেগুনের সাথে সাথী ফসল হিসাবে প্রথমে পুইশাক ছিল। বর্তমানে বল্টু মরিচ আছে। ইতোমধ্যে   পুইশাক এবং বেগুন বিক্রি করেছি। বর্তমানে বাজার মূল্য ও খুব ভাল, প্রতিকেজি বেগুন মাঠ থেকে ৫০ -৬০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আশা করছি, আরও ১লক্ষ টাকার বেগুন বিক্রি করতে পারব। জমিতে কাজ করে বর্তমানে আমার ভালো ভাবে সময় চলে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ২-৩ জন লোক আমার ক্ষেতে নিয়মিত শ্রম দিচ্ছে। ভাবছি, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও শিক্ষকতার পাশাপাশি আমি কৃষি কাজ চালিয়ে যাব।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ  ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন মোঃ মিজানুর রহমান একজন শিক্ষক হলেও তিনি আর পাঁচ জন কৃষকের মত আধুনিক পদ্ধতিতে বেগুনের চাষ করছেন। তিনি যে কাজটি করছেন, আসলে অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি বর্তমানে কৃষিতে এলাকার আইডল। তার এ সাফল্যে অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছে, অনেকেই আমার সাথে যোগাযোগ করছেন। আমার উপজেলাতে আরও কয়েক জন শিক্ষক বর্তমানে এ কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। আমরা এ সমস্ত কৃষি উদ্যোক্তা গণকে নিয়মিত প্রশিক্ষন এবং পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এ ধরনের শিক্ষিত লোকজন কৃষিতে যুক্ত হলে কৃষি আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে এবং আমরা সেই লক্ষে কাজ করছি। ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার‌ মোঃ ওয়ালিদ হোসেন বলেন ভালো জাতের বেগুন চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের বেশি বেগুন চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে। এ বেগুন খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় উপজেলাজুড়ে এর চাহিদাও বেশ। কম জমিতে অধিক ফলনে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। দেশের মধ্যে ভালো  জাতের বেগুন চাষ হয়েছে বলে জানা গেছে।