কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্প, ৫৭৩ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি চলছে। 


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৭, ২০২৩, ৭:৩৬ অপরাহ্ন / ৪৮৮
কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্প, ৫৭৩ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি চলছে। 
কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্প, ৫৭৩ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে দুর্নীতি চলছে। 
স্বপন রবি দাশ,নবীগঞ্জ, (হবিগঞ্জ) থেকেঃ
হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতায় জেলার কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্প নির্মান কাজ নিয়ে নয়ছয় শুরু হয়েছে। ৫৭৩ কোটি টাকার মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি চলছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকিও চলছে কোন রখম দায় সারা ভাবে। কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা প্রকল্পের ব্লক দেবে গেছে। প্রকল্প কাজে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে সচেতন মহলে। নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের ফলে কাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই ৫৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীণ নদীর তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পের বেশকিছু স্থান দেবে ফাটল দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জোগ সাজসেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি করছে বলে অভিযোগ তীরবর্তী মানুষের। প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মামলার ভয়ে অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলছেনা এলাকাবাসী। ব্লক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ ও ব্লক দেবে যাওয়ার বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পাউবো।
জানা যায়- হবিগঞ্জের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ “কুশিয়ারা ডাইক” প্রতি বছর বর্ষায় ভেঙে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, সিলেটের ওসমানী নগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামসহ ভাটি ও হওরাঞ্চলের বাড়িঘর ও কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে যায় পানির নীচে। নদীর উভয় তীরের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী ছিল বর্তমান প্রযুক্তিতে নতুন ভাবে কুশিয়ারা উভয়পাশে বাঁধ নির্মাণের জন্য। প্রতি বছরে এমন বিধ্বংসী ভাঙন রোধে ও অকাল বন্যা থেকে রক্ষা পেতে জাতীয় সংসদে কুশিয়ারা উভয় তীর রক্ষায় জিও ব্যাগ ও ব্লক দিয়ে প্রতিরক্ষা প্রকল্প নির্মাণের জোর দাবী জানান হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ। সংসদ সদস্যের দেয়া বক্তব্য দৃষ্টিগোচর হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর রক্ষায় প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার এলাকায়জুড়ে প্রতিরক্ষা প্রকল্প নির্মানে ৫৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকের সভায় অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দরপত্র আহবানের কাজ পায় ৫টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান, সে গুলো হলো, গোলাম রব্বানী কন্টাকশন,৷ এএইচ ট্রেডিং কোং,আরএফএল,নেশন ট্রেক কমিশন ও আবুল কালাম কোং। তারা ১১টি প্যাকেজে কাজ শুরু করেন। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় হবিগঞ্জ জেলার বিবিয়ানা বিদ্যুৎ কেন্দ্রেসমূহের সম্মুখে কুশিয়ারা নদীর উভয় তীরের প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ।এর মধ্যে এ এই্চ ট্রেডিং কোং, আরএফএল ও নেশন ট্রেক কমিশনের কাজে ফাটল দেখা দিয়েছে। আরএফএল এ পরিচালক রাসেল আহমদ জানান, তাদের কাজের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়নি সবার কাজেই ফাটল দেখা দিয়ে নীচে দিয়ে দেবে গেছে। তারা সবাই কাজের সংশোধন করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজ শুরুর পর থেকে কুশিয়ারা নদীর তীর প্রতিরক্ষায় ব্লক নির্মাণে মাটি যুক্ত বালু, নুরি পাথর, ছোট পাথরের জায়গায় বড় পাথর, গোটা পাথর, মরা পাথর ও পাথরের সাথে ধুলোবালিযুক্ত অবস্থায় ঢালাই, ইটের খোয়া মিশ্রন, অধিকাংস্থানে সিমেন্টের তুলনায় অতিরিক্ত বালি ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের মধ্য দিয়ে ব্লক নির্মাণ করে আসছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তদারকির দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জোগসাজসেই এমন অনিয়ম হয়ে আসছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নবীগঞ্জের পাহাড়পুর অংশে এ এইচ ট্রেডিং করপারেশন নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা ব্লক নির্মান করছেন। সেখানে গুণগত মানের সিমেন্ট ব্যবহার করা হলেও সিমেন্টের তুলনায় মরা পাথর, অতিরিক্ত বালি ব্যবহার করতে দেখা যায়। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্ট কর্মকর্তা আরাফাত খান কথা বলতে রাজি হননি।এছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ন্যাশন টেক ট্রেডিং, আরএফএল ট্রেডিং করপোরেশন নিম্নমানের মালামাল দিয়ে ব্লক নির্মানের ফলে লামা তাজপুর এলাকার খোয়াজ উল্লাহ, জিলু মিয়া ও বাছিত মিয়ার বাড়ির সামনেসহ বেশ কিছু স্থানে কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা প্রকল্পের ব্লক দেবে গেছে। প্রকল্প কাজে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। শেরপুর এলাকার জুয়েল আহমদ বলেন- বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রতিরক্ষা প্রকল্প নির্মাণ ছিল সরকারের প্রশংসনীয় উদ্যোগ কিন্তু নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করার ফলে প্রতিরক্ষা প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পূর্বেই ব্লক দেবে যাচ্ছে। তাজপুর এলাকার তফুর আলী জানান- নিম্নমানের বালি ও মরা পাথর দিয়ে শুরু থেকেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্লক নির্মাণ করে আসছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আসেন সবকিছুই দেখেন কিন্তু কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও অফিসাররা মিলেমিশেই দুর্নীতি করে আসতেছে তাই এলাকার মানুষ মামলার ভয়ে প্রতিবাদ করে না। লামা তাজপুরের খোয়াজ উল্লাহ ব্লক নির্মাণে অনিয়মের কথা জানিয়ে তিনি বলেন- প্রতিবাদ কে করবে, কোথায় করবে কেনই বা করবে, ৫শ-৬শ কোটি টাকার প্রকল্প আমরা প্রতিবাদ করলে অল্পকিছু টাকা খরচ করলেই আমাদের মামলা দিয়ে হয়রানী করবে। এছাড়া অফিসাররা সবকিছু জানেন কিন্তু চুপ হয়ে আছেন, কেন আছেন সেটা তো আপনারাও বুঝতেছেন।ওই এলাকার জিলু মিয়া বলেন- নিম্নমানের পাথর ব্লক তৈরি করা হচ্ছে। কাজে বালু-পাথর ও সিমেন্ট মিশ্রণের সঠিক অনুপাত মানা হচ্ছে না।নবীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক চৌধুরী সেলিম বলেন- ব্লক নির্মাণে অনিয়ম দুর্র্নীতির বিষয়ে তড়িৎগতি কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানাই।হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ বলেন- এত কষ্ট করে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় প্রকল্প নিয়ে আসলাম, কিন্তু ব্লক নির্মাণে বিভিন্ন অভিযোগ ওঠছে, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হউক।এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন- কুশিয়ারা নদীর উভয় তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ ১১টি প্যাকেজের মাধ্যমে কাজ চলমান রয়েছে। এ কাজগুলো মূলত নদী ভাঙনরোধে করা হচ্ছে। কিছুস্থানে ব্লক নির্মাণে নিম্নমানের পাথর ও বালি ব্যবহারের অভিযোগ এবং কিছুস্থানে নরম মাটি থাকার কারণে ব্লক দেবে গেছে বলে জেনেছি। এরপর আমরা সরেজমিনে ওইসব স্থান পরিদর্শন করেছি এবং ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দেবে যাওয়া ব্লক তোলে পুনরায় বালি ও জিও টিউব দিয়ে ব্লক বসানোর নির্দেশনা দিয়েছি। চলমান কাজে আমরা নিয়মিত তদারকি করছি।
প্রেরক
স্বপন রবি দাশ
নবীগঞ্জ, (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি
মোবাইলঃ০১৭০৩-৫৬৮৮৯৭
তারিখঃ১৫-০১-২০২৩ইং