অসময়ে কালাইয়ের কৃষকের ফসলের মাঠে মই দিল সিত্রাং…


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২৬, ২০২২, ৩:২৪ অপরাহ্ন / ৩০২
অসময়ে কালাইয়ের কৃষকের ফসলের মাঠে মই দিল সিত্রাং…
অসময়ে কালাইয়ের কৃষকের ফসলের মাঠে মই দিল সিত্রাং…
মোঃ জাহিদুল ইসলাম ,কালাই (জয়পুরহাট) –
অসময়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জয়পুরহাটের কালাইয়ে আমন ধান ও শীতকালীন আগাম সবজির ব্যাপক ক্ষতির হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেল থেকে মধ্যরাতের পর্যন্ত দমকা হাওয়ার সঙ্গে মাঝারি থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি অব্যাহত ছিলো। এতে উপজেলার কৃষকের পাকা ধানে মই দিল ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এ সিত্রাংয়ের কারণে বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় এলাকার বহু স্থানে কাঁচা-পাকা ধান কাদামাটির সঙ্গে লেপ্টে গেছে। মাঝারি বৃষ্টি এবং দমকা বাতাসে পাকা ও কাঁচা ধানসহ শীতকালীন আগাম সবজির গাছগুলো ক্ষেতে হেলে পড়ে পানির নিচে ডুবে আছে। ঘাম ঝরানো স্বপ্নের ফসলের এমন দৃশ্যে নির্বাক উপজেলার কৃষকরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের করণে উপজেলার বেশির ভাগ বাসগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে রওনা দিতে পারেনি, গাড়ির সংখ্যাও কমে যায়। সেই সঙ্গে এই এলাকায় বিদ্যুৎ–সংযোগ ছিল না। ফলে উপজেলা এলাকাজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ ও আতঙ্ক তৈরি হয়। এদিকে, অসময়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে মাঝারি বা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির কারণে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। এসময় খেটে খাওয়া মানুষদের বেকায়দায় পড়তে হয়েছে। অপরদিকে বিকেল থেকে মধ্যরাতের পর্যন্ত দমকা হাওয়ার সঙ্গে মাঝারি থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির ফলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে শীতকালীন আগাম সবজির ও আমন ধানের চাষিরা। অধিকাংশ মাঠের ধানের গাছ জমিতে পড়ে গেছে। পড়ে যাওয়া ধানের গাছগুলো নষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষার জন্য কৃষকেরা মাঠে নেমে তাদের ধানের চারাগুলো রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। কৃষকদের স্বপ্নের পাকা ও কাঁচা ধান ক্ষেতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অভাবনীয় ক্ষতি হয়েছে। এতে করে উপজেলার হাজার হাজার কৃষকেরা বর্তমান দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
উপজেলার রোড়াই গ্রামের কৃষক আব্দুল রউফ বলেন, এবার ৭ বিঘা জমিতে কাটারী জাতের ধান রোপন করেছি। ধানগাছে যে শীষ এসেছিল তাতে ফলনও খুব ভালো হবে। আগামী সপ্তাহে ধানও কাটার উপযোগী হবে। কিন্তুঅসময়ে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বৃষ্টি ও বাতাসে আমার বেশির ভাগ ধানগাছ মাটিতে পড়ে গেছে। এর ফলে আমার ধানের ফলন অনেক কমে যাবে।
একই উপজেলার ঝামুটপুর গ্রামের মোতালেব নামে এক কৃষক বলেন, আর কয়েক দিন পর ৫০শতক সুগন্ধি আতব ধান কাটবো। অনেক কষ্ট করে ৫০শতক সুগন্ধি আতব ধান চাষ করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। মাঠে এবার যে ধান হয়েছে, তাতে বিঘাপ্রতি ২২ থেকে ২৪ মণ ধান হবে। হিসাব অনুযায়ী এই ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচসহ লাভ হবে। বর্তমান ধানগাছগুলো মাটিতে হেলে পড়ায় অনেক ক্ষতি হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
উপজেলার বহুতী গ্রামের শীতকালীন আগাম সবজি চাষী মোজাহার ও আজাহার জানান, ৪০ শতক জমিতে লাল, পুই, কলমি শাকসহ চিচিংগা, সীম, বেগুন ও করলা রোপন করেছেন। রোপনকৃত গাছগুলো অনেক ভালো হয়েছে। এরমধ্যে চিচিংগা, বেগুল ও করলা কিছু বিক্রি করেছেন। হঠাৎ মাঝারি থেকে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির পানি জমিতে জমে গেছে আর দমকা হাওয়ার কারণে অনেক সবজির গাছ ছিড়ে গেছে। এমন অবস্থায় খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে তাদের।
কালাই উপজেলা কৃষি অফিসার অরুন চন্দ্র রায় বলেন, কালাই উপজেলায় এবার আমন মৌসুমে ১১ হাজার ৮শ ৩০ হেক্টর জমিতে আমন-ধান চাষাবাদ হয়েছে এবং ৫৫ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্য কৃষকেরা প্রায় ২০ হেক্টর জমির ধান কর্তন করেছেন। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কিছু কিছু স্থানে প্রায় ১ হাজার ৬০শ হেক্টর জমির পাকা ও কাঁচা ধানের গাছগুলো হেলে পড়েছে। তবে ধানের তেমন ক্ষতি হবেনা। আর কৃসকদের চিন্তার কোন কারন নেই। আবহাওয়া ভালো হলেই জমি থেকে পানি নেমে যাবে। তখন ওই জমির ধানসহ সবজিগুলো আগের মতোই ভালো হবে। তাছাড়া উপজেলার সকল কৃষদের সু-পরামর্শসহ সব ধরণের সহযোগীতা করে আসছি। তাই আশা করছি এবারেও আমন ধানসহ সবজি বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মোঃ জাহিদুল ইসলাম
 কালাই (জয়পুরহাট)
তাং-২৫-১০-২০২২খ্রিঃ
মোবাঃ০১৭৮৫৩৫২৫৫৮