(ছবির ক্যাপশন;)
পিএমখালীর ছনখোলা রোডে অকেজো হয়ে পড়া আরসিসি কালভার্ট। ছবি: আশ্রয় প্রতিদিন।
এম এ সাত্তার: কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজার সদর পিএমখালী ইউনিয়নে ব্যবহারের আগে নতুনভাবে নির্মীত একটি আরসিসি কালভার্ট পানির স্রোতে উপড়ে পড়ে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় সুবিধাভোগীরা। তাদের অভিযোগ, ফন্ডিশনে অসংগতি, এলজিইডি অফিসের দায়িত্বশীলদের অবহেলার কারণে এমনটা ঘটেছে। আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হয়ে কালভার্টটি (চুক্তি ভিত্তিক) নির্মাণ কাজ করছেন স্থানীয় এক রাজমিস্ত্রী।
সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার পিএমখালী-খুরুশকুল খুলিয়া পাড়া হয়ে কক্সবাজার যাওয়া-আসার সংযোগ সড়ক প্রকল্প ‘ ছনখোলা রোড নির্মাণের কাজ শুরু করা হয় চলিত বছরের শুরুতেই। এই প্রকল্পের আওতাধীন ৫/৬টি আরসিসি কালভার্ট ও ১টি আরসিসি গার্ডার ব্রীজের
নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ওই সংখ্যাক কালভার্টের মধ্যে পূর্ব থেকেই ছিলো বদি আলম ডিয়া নামক স্থানের একটি কালভার্ট। উক্ত স্থানের পুরনো বক্স কালভার্ট ভেঙে নতুনভাবে আযরসিসি কালভার্ট তৈরির কাজ চলমান অবস্থায় ছিলেন। তার সাথে কালভার্ট তৈরির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। এরমধ্যে জানান দেয় ঘূর্ণিঝড় রিমল। উল্টে যায় ‘গণেষ’। গত মাসের ঘূর্ণিঝড় রিমেল দেখিয়ে দেন, ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে এই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কালভার্ট গুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। তার জ্যান্ত উদাহরণ পানিতে অকেজো হয়ে পড়া আরসিসি ঢালাইয়ের এই কালভার্ট।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় কয়েকজন জানান, জোয়ারের প্রভাবে সৃষ্ট পানি এই কালভার্ট দিয়ে ঢুকে পড়ে। পরে ঢুকিয়ে পড়া পানি ভাটার টানে বেরিয়ে আসার পথে কাল হয়ে দাঁড়ায় অপরিপক্ক এই কালভার্ট। পানি বের হতে না পেরে কালভার্টের সিসি ঢালাইয়ের ভেতর- বাহির ও তলদেশ দিয়ে বেরিয়ে গেছে পানি। এমনকি কালভার্টের দুই পাশ থেকে ৪০-৫০ ফুটের মতো জায়গার সব মাটি পানির সাথে ভেসে গেছে। তখন কালভার্ট টি একদিকে হেলে পড়েন। কালভার্ট টি নড়বড় গিয়ে মূল ফন্ডিশন থেকে ছিটকে গিয়ে ২/৩ ফুটের ব্যবধানে একদিকে হেলিয়ে গিয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে। এতে কেউ হতাহত না হলেও নিদারুণ মর্মাহত হয়েছেন সুবিধাভোগীরা।
এ ব্যাপারে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন বলে জানিয়ে স্থানীয়রা বলেন, উপজেলা প্রকৌশলীর অবহেলা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের সামগ্রী (স্থানীয় নদীর লবনাক্ত বালু) দিয়ে কালভার্টটি তৈরি করার কারণে এটির বেহাল দশা। এমনকি কাজের শুরু থেকেই নানা অনিয়মের মধ্যে রাস্তা ও একাধিক কালভার্ট নির্মাণ করে যাচ্ছেন প্রকল্পের ঠিকাদার আকরাম সিকদার নামের এক ব্যক্তি। অথচ এই প্রকল্পের কাজ চলাকালে তদারকির অনেক ঘাটতি দেখতে পায় তারা।
সুবিধাভোগীদের অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিধ্বস্ত কালভার্টটির উভয় পাশে ও রাস্তায় এস্কেভেটর দিয়ে তড়িঘড়ি করে মাটি ভরাট করে দিচ্ছে ঠিকাদারের লোকজন। যাতে করে নষ্ট কালভার্টটির বিষয়ে কিছুই বুঝতে না পারেন গণমাধ্যম সহ সংশ্লিষ্ট তদারকি
প্রতিষ্ঠানের লোকজন। এ সময় প্রকল্প কাজে জড়িত দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।
অকেজো হয়ে পড়া কালভার্টের বিষয়ে নালা পরিস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক শহীদুল্লাহ, রমজান আলী, একেলাছ প্রতিবেদককে জানান, যৎসামান্য পানির চাপে কালভার্টটি উল্টে গিয়ে এ অবস্থা হয়েছে। কালভার্টটি কতোদিন টিকবে (স্থায়িত্ব) তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন তারা। ঠিকাদারের ইচ্ছামতো কাজ করছে যাচ্ছে এই রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো। প্রকল্পের কাজ চললেও দায়িত্বশীল কাউকে দেখা যায়না। মাঝেমধ্যে আগন্তুক কারো দেখা মিললেও রাস্তার একপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে তাদের। এই দূর্নীতি দেখার কেউ নেই।
আব্দুস শুকুর নামের এক শ্রমিক জানান, কালভার্টি ছড়ার ভরাট বালুতে করা হয়েছে। আর সিসিও ঢালাই দিয়ে নাম মাত্র। খালের লবনাক্ত বালু ব্যবহার করা হয় আর সিসি ঢালাই কাজে। এ কারণেই সামান্য পানিতে কালভার্টি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এ ঘটনার পর দৌড়ের ওপর আছেন ঠিকাদারের লোকজন।। ফন্ডিশন থেকে উপড়ে গিয়ে ২/৩ ফুট ব্যবধানে ব্যবহার অনুপযোগী কালভার্টি এস্কেভেটর দিয়ে সঠিক পজিশনে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা ব্যর্থ তাদের । ২/৩ ফুট ব্যবধানে( উঁচু-নিচু) হেলিয়ে পড়ে আছে কালভার্ট। এই অবস্থাতেই মাটি চাপা দেয়া হয়েছে কালভার্টের উভয় পাশে। যেমনটি- শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা মাত্র।
গোপন সূত্রে জানা যায়, বিধ্বস্ত, নড়বড়ে, অকেজো কালভার্টটি প্রকল্পভুক্ত করতে এলজিইডি অফিসের লোকজনকে মোটা অংকের মাধ্যমে ম্যানেজ করতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে ঠিকাদার। যদি এমনটি হয় তাহলে এলাকার মানুষকে এক সময় চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে।
এলজিইডির অফিস সূত্রে জানা যায়, পিএমখালীর ছনখোলা রোডের নির্মাণের কার্যাদেশ পান মি. ইন্টারন্যাশনাল নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আকরাম সিকদার। এ বছরের শুরুতে রোডের কাজ আরম্ভ করলেও এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তাতে কর্ণপাত করেনি সংশ্লিষ্ট এলজিইডি অফিস।
প্রকল্প ঠিকাদারের সাথে কয়েক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে কথা হয় সদর উপজেলা এলজিইডি অফিসের উপ সহকারী প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে এর আগে কিছু জানতেনা, এখন জেনেছেন। এমন যদি হয়ে থাকে, তাহলে অকেজো হয়ে পড়া কালভার্টটি আদৌ ব্যবহার করা যাবে, কি যানেনা তা সরাসরি দেখে তার সিদ্ধান্ত নিবেন।