Dhaka ০৯:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাকসামে তীব্র গরমে মরছে মাছ, লোকসানে চাষিরা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৯:৪৪:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ জুন ২০২৩
  • ১৪১ Time View
রিয়াদ ভূঁইয়া,  লাকসাম (কুমিল্লা)প্রতিনিধি
তীব্র দাবদাহে খাল, বিল, পুকুর শুকিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে বাড়ছে পানির তাপমাত্রা। এতে করে বিপাকে পড়েছেন লাকসাম উপজেলার মাছচাষিরা। এই তীব্র গরমে উপজেলায় জলাশয়ের মাছ মরে যাচ্ছে। এতে করে লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষিরা।
উপজেলার বিভিন্ন পুকুরে গেলে দেখা যায়, মাছ চাষিরা তাদের মাছ বাঁচানোর পানি সেচসহ নানাভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তারপরও অতিরিক্ত তাপে মরে যাচ্ছে মাছ।
 উপজেলার মামিশ্বর গ্রামের জাকারিয়া মৎস্য খামারের শহীদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ৩ শত ৯৫ শতক জলাশয় লিজ নিয়ে মাছ চাষ করি কয়েক দিনের টানা তীব্র গরমে প্রায় ৪০ মণ মাছ মারা গেছে। দুইদিন আগে তিনি শ্রমিক দিয়ে সেই মাছ পুকুর থেকে তুলে মাটির নিছে পুঁতেছি। এছাড়াও উত্তরদা ইউনিয়ন ঠেঙ্গারপাড়া গ্রামের মোজাম্মেল হক মামুনের কয়েকটি পুকুরে ২০/৩০ মন মাছ মরে গেছে, অপরদিকে মনপাল গ্রামের মান্নানের পুকুরের ২০/২৫ মন  মাছ মরে গেছে সব মিলিয়ে
আমাদের প্রায় ২/৩ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
উওরধা হালাখাল এলাকার মা এগো কমপ্লেক্স হুমায়ন কবির মিয়াজি জানান,গরমের কারণে আমার প্রায় ৮০/৯০ মণ মাছ মরে গেছে। প্রায় ৬ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এই গরমে মাছ তো দূরের কথা, মানুষেরও জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি হলে আবহাওয়া ঠান্ডা হতো। তবে আজ সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে। আর যদি ঠিকমতো বিদ্যুৎ থাকতো, তাহলে সমস্যা এত তীব্র হতো না। উপজেলার অন্য চাষিদেরও আমার মতো অবস্থা।
এরশাদ মিয়া ফেরি করে গ্রামে গ্রামে মাছ বিক্রি করেন। তিনি লাকসাম সবচেয়ে বড় পাইকারি মাছের বাজার শহরের মাছপট্টিতে এসেছেন মাছ কিনতে। তিনি বলেন ‘মাছ মইরে যাইছে, মাছ পাওয়া যাইছে না। গরমে পুকুরের পানির অবস্থা ভালো না, পানি নাই। আবার দাম বেশি।’
বাজারে আসা এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, পুকুরে জাল দিয়েও গরমের কারণে মাছ উঠছে না। সব মাছ গভীরে চলে যাচ্ছে। বৃষ্টি হবে তারপর মাছ ভাসবে। এখন মাছ ভাসছে না, একদম গভীরে চলে যাচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ আজ সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে যদি সৃষ্টিকর্তা মাছ  ব্যবসায়ীদের  রক্ষা করে।
মাছচাষি মিজান বলেন, আমার দুটি পুকুর আছে। গরমে মাছ ছটফট করছে। মাছ বাঁচাতে স্যালোমেশিন দিয়ে পুকুরে পানি দিচ্ছি। সময় না হলেও কিছু মাছ তুলে বিক্রিও করে দিয়েছি।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১ হাজার ৫ শত বেশি পুকুর রয়েছে।
আর ২ হাজার ৪ হেক্টরের বেশি জলাধার রয়েছে। এতে ছোট বড় মাঝারি খামার রয়েছে ৩শত ৫০টি। এছাড়া এ উপজেলায় নদী ১টি ও খাল রয়েছে  ৮টি। যেখানে চাষ ছাড়াও প্রাকৃতিকভাবেই মাছ পাওয়া যায়। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার মেট্রিক টন। তবে এবার গরমের কারণে উৎপাদন কম হতে পারে।
লাকসাম উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শওকত আলী  বলেন, প্রচণ্ড উত্তাপের হাত থেকে মাছ বাঁচাতে পুকুরে চুন মিশিয়ে দেওয়া ও সেচযন্ত্র দিয়ে পানি দেওয়া এবং পুকুরের পানি টানা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাহলে পানিতে অক্সিজেনের জোগান বাড়বে। তখন মাছ স্বস্তি পাবে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বাসদ ময়মনসিংহ মহানগর শাখার আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

লাকসামে তীব্র গরমে মরছে মাছ, লোকসানে চাষিরা

Update Time : ০৯:৪৪:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ জুন ২০২৩
রিয়াদ ভূঁইয়া,  লাকসাম (কুমিল্লা)প্রতিনিধি
তীব্র দাবদাহে খাল, বিল, পুকুর শুকিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির দেখা নেই। ফলে বাড়ছে পানির তাপমাত্রা। এতে করে বিপাকে পড়েছেন লাকসাম উপজেলার মাছচাষিরা। এই তীব্র গরমে উপজেলায় জলাশয়ের মাছ মরে যাচ্ছে। এতে করে লোকসানের মুখে পড়ছেন চাষিরা।
উপজেলার বিভিন্ন পুকুরে গেলে দেখা যায়, মাছ চাষিরা তাদের মাছ বাঁচানোর পানি সেচসহ নানাভাবে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। তারপরও অতিরিক্ত তাপে মরে যাচ্ছে মাছ।
 উপজেলার মামিশ্বর গ্রামের জাকারিয়া মৎস্য খামারের শহীদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ৩ শত ৯৫ শতক জলাশয় লিজ নিয়ে মাছ চাষ করি কয়েক দিনের টানা তীব্র গরমে প্রায় ৪০ মণ মাছ মারা গেছে। দুইদিন আগে তিনি শ্রমিক দিয়ে সেই মাছ পুকুর থেকে তুলে মাটির নিছে পুঁতেছি। এছাড়াও উত্তরদা ইউনিয়ন ঠেঙ্গারপাড়া গ্রামের মোজাম্মেল হক মামুনের কয়েকটি পুকুরে ২০/৩০ মন মাছ মরে গেছে, অপরদিকে মনপাল গ্রামের মান্নানের পুকুরের ২০/২৫ মন  মাছ মরে গেছে সব মিলিয়ে
আমাদের প্রায় ২/৩ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।
উওরধা হালাখাল এলাকার মা এগো কমপ্লেক্স হুমায়ন কবির মিয়াজি জানান,গরমের কারণে আমার প্রায় ৮০/৯০ মণ মাছ মরে গেছে। প্রায় ৬ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এই গরমে মাছ তো দূরের কথা, মানুষেরও জীবনযাপন কষ্টকর হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি হলে আবহাওয়া ঠান্ডা হতো। তবে আজ সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে। আর যদি ঠিকমতো বিদ্যুৎ থাকতো, তাহলে সমস্যা এত তীব্র হতো না। উপজেলার অন্য চাষিদেরও আমার মতো অবস্থা।
এরশাদ মিয়া ফেরি করে গ্রামে গ্রামে মাছ বিক্রি করেন। তিনি লাকসাম সবচেয়ে বড় পাইকারি মাছের বাজার শহরের মাছপট্টিতে এসেছেন মাছ কিনতে। তিনি বলেন ‘মাছ মইরে যাইছে, মাছ পাওয়া যাইছে না। গরমে পুকুরের পানির অবস্থা ভালো না, পানি নাই। আবার দাম বেশি।’
বাজারে আসা এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, পুকুরে জাল দিয়েও গরমের কারণে মাছ উঠছে না। সব মাছ গভীরে চলে যাচ্ছে। বৃষ্টি হবে তারপর মাছ ভাসবে। এখন মাছ ভাসছে না, একদম গভীরে চলে যাচ্ছে। আলহামদুলিল্লাহ আজ সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে যদি সৃষ্টিকর্তা মাছ  ব্যবসায়ীদের  রক্ষা করে।
মাছচাষি মিজান বলেন, আমার দুটি পুকুর আছে। গরমে মাছ ছটফট করছে। মাছ বাঁচাতে স্যালোমেশিন দিয়ে পুকুরে পানি দিচ্ছি। সময় না হলেও কিছু মাছ তুলে বিক্রিও করে দিয়েছি।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১ হাজার ৫ শত বেশি পুকুর রয়েছে।
আর ২ হাজার ৪ হেক্টরের বেশি জলাধার রয়েছে। এতে ছোট বড় মাঝারি খামার রয়েছে ৩শত ৫০টি। এছাড়া এ উপজেলায় নদী ১টি ও খাল রয়েছে  ৮টি। যেখানে চাষ ছাড়াও প্রাকৃতিকভাবেই মাছ পাওয়া যায়। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার মেট্রিক টন। তবে এবার গরমের কারণে উৎপাদন কম হতে পারে।
লাকসাম উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শওকত আলী  বলেন, প্রচণ্ড উত্তাপের হাত থেকে মাছ বাঁচাতে পুকুরে চুন মিশিয়ে দেওয়া ও সেচযন্ত্র দিয়ে পানি দেওয়া এবং পুকুরের পানি টানা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাহলে পানিতে অক্সিজেনের জোগান বাড়বে। তখন মাছ স্বস্তি পাবে।