মোঃনাজমুল মোরেলগঞ্জঃ
মোরেলগঞ্জে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে বরণ করে নিতে অনুষ্ঠিত হলো এক মনোমুগ্ধকর ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় উপজেলা পরিষদের সবুজ চত্বর থেকে এই শোভাযাত্রার শুভ সূচনা হয়। উৎসবমুখর এই আয়োজনে অংশ নেন উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
সকাল থেকেই সবুজ চত্বর ছিল উৎসবের আমেজে মুখর। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জমায়েত হতে শুরু করে। রঙ-বেরঙের পোশাকে সজ্জিত শিক্ষার্থীদের পদচারণায় এলাকা হয়ে ওঠে প্রাণবন্ত।
শোভাযাত্রায় অংশ নেয় মোরেলগঞ্জ এসিলাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, মোরেলগঞ্জ মডেল একাডেমি, জে কে একাডেমি, লাইসিয়াম একাডেমি, বারইখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোরেলগঞ্জ মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোরেলগঞ্জ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আব্দুল আজিজ মেমোরিয়াল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, রওশনারা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, লতিফিয়া ফাজিল মাদ্রাসাসহ উপজেলার অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষক-শিক্ষিকা, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তারাও এ আয়োজনে ছিলেন অংশগ্রহণকারী।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ’র নেতৃত্বে সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শোভাযাত্রায় যোগ দেন। মুখোশ, পাপেট, বাঁশের তৈরি বিশালাকৃতির বাঘ, পাখি, মাছসহ নানা শিল্পকর্মে ফুটিয়ে তোলা হয় গ্রামীণ জীবনের ছোঁয়া ও প্রকৃতির প্রতি মানুষের নির্ভরতার গল্প।
সবার পরনে ছিল উজ্জ্বল হলুদ, লাল, সবুজ ও কমলা রঙের পোশাক। নারীদের মাথায় ফুলের মালা, হাতে রঙিন চুড়ি আর শিশুদের মুখে ছিল উচ্ছ্বাসের ঝলক। কেউ ছোট মুখোশ পরে, কেউ হাতে পতাকা নিয়ে এই আনন্দের মিছিলে অংশ নেয়।
শোভাযাত্রা শেষে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আরিফুল ইসলামের পরিচালনায় এক প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা বক্তৃতা, আবৃত্তি, একক ও দলীয় নৃত্য, অভিনয়সহ নানা প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশনায় অংশ নেয়।
এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে প্রত্যন্ত গ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পৃথকভাবে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সরকারি সিরাজ উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ চত্বরে বাঙালির ঐতিহ্যকে ধারণ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পালন করা হয় পহেলা বৈশাখ। সকাল ১০টায় মোরেলগঞ্জ পুরাতন কৃষি ব্যাংক রোডস্থ উদীচী কার্যালয় থেকেও এক বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়।
শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া এক দর্শনার্থী বলেন, “প্রতি বছর এই আয়োজনের জন্য অপেক্ষা করি। এটি আমাদের সংস্কৃতি ও ঐক্যের প্রতীক।”
শারমিন আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “এত মানুষ একসঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠা—এই অনুভূতিই সবচেয়ে অসাধারণ। আমাদের ঐতিহ্যকে এভাবে রাঙিয়ে তোলা সত্যিই অন্যরকম আনন্দ দেয়।”