Dhaka ০১:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাদকের একাধিক শক্তিশালী চক্র সক্রিয় পটুয়াখালীতে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:১২:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ জুন ২০২৩
  • ১৯৯ Time View

মোঃ যুবরাজ মৃধা পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ-

 

 

 

 

 

পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিন (২৯) ও তার ছোট ভাই মো. সাইফুল ইসলাম (২৮) প্রভাবশালী মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। তারা ইতঃপূর্বে ইয়াবা ও গাঁজার বড় চালানসহ বহুবার পটুয়াখালী ডিবি পুলিশের অভিযানে আটক হয়েছেন। এই দুই ভাইয়ের পেছনে কাজ করছে শক্তিশালী মাদক চক্র। যে কারণে আটক হওয়ার ১০-১৫ দিন না যেতেই জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের মাদক ব্যবসায় জড়ান। পুলিশ পিসিপিআরেও এমন তথ্য রয়েছে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। জসিম ও সাইফুল আঙ্গরিয়া ইউনিয়নের দেলোয়ার ফকিরের ছেলে।

 

সূত্র বলছে, মাদক অভিযানে পুলিশ যত কঠোর হচ্ছে, তারচেয়ে বেশি কৌশলী ও রুট বদল করে ব্যবসা টেকাতে প্রতিযোগী হয়ে উঠছে তারা। মাদকের এই ভয়ংকর ছোবলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের তরুণ সমাজ। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে খুন-খারাবিও।

 

পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, মাদক নির্মূলে জেলার সবকটি থানায় বিশেষ টিম গঠন করেছি। বিশেষ করে ডিবিকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। যে কারণে মাদকের বেশকিছু বড় চালান জব্দ হয়েছে। তবে পুলিশের প্রতি জনগণের আন্তরিকতা এবং সামাজিক-পারিবারিক দায়িত্ববোধ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের সংস্কৃতিক চর্চায় উৎসাহী করতে হবে। এতে মাদক পুরোপুরি বন্ধ না হলেও সচেতনতা বাড়বে। পটুয়াখালী জেলা শহরের আরেক মাদক ব্যবসায়ীর নাম শাহ আলম মাদবর (৬০)। নব্বইয়ের দশকে চোলাই মদের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরে চোলাই মদ বিলুপ্ত হলে প্রচলিত মাদকে জড়িয়ে অবৈধ এই পেশাকে টিকিয়ে রেখেছেন তিনি। শুধু শাহ আলম নয়, তার স্ত্রী, সন্তান, নাতি-নাতনিরাও এ ব্যবসায় লিপ্ত। পুলিশ রেকর্ডেই শাহ আলমের বিরুদ্ধে অন্তত এক থেকে দেড় ডজন মামলা রয়েছে। এরপর অন্যান্য সংস্থার রেকর্ডেও রয়েছে শাহ আলম ও তার পরিবারের নাম।

 

পটুয়াখালী ডিবি পুলিশের ওসি একেএম আজমল হুদা বলেন, শাহ আলমের স্ত্রী নিলুফা বেগমের বিরুদ্ধে ৮টি, মেয়ে সালমা ও রুপার বিরুদ্ধে অন্তত দেড় ডজন এবং ছেলে সোহেল মাদবরের বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তত ২ ডজন মামলা। এছাড়াও শাহ আলমের ছেলে সোহেলের স্ত্রী শিল্পীর বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তত ৬টি মামলা। শাহ আলমের মেয়ে জামাই জলিলের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, শাহ আলমের শিশু বয়সি নাতি-নাতনিও মাদকের সঙ্গে জড়িত। পুলিশ ছাড়াও র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকায় এই পরিবারের নাম রয়েছে। অনুসন্ধানে এ পর্যন্ত পরিবারটির নামে অন্তত শতাধিক মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে। তিন দশক ধরে মাদক কারবারে জড়িত থাকলেও পরিবারটি অঢেল সম্পদের মালিক হয়নি।

 

সূত্র বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আইন-আদালতসহ নানা মহলকে ম্যানেজ করতেই ব্যয় করেছেন মাদক কারবার থেকে অর্জিত বিপুল পরিমাণে অবৈধ অর্থ। সম্পদের ভেতর পটুয়াখালীর পরিত্যক্ত এয়ারপোর্টসংলগ্ন এলাকায় অর্ধকোটি টাকার জমি রয়েছে তাদের। ব্যবসার পাশাপাশি পরিবারটির সদস্যরা নিজেরাও মাদকাসক্ত।

 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) আহমাদ মাঈনুল হাসান বলেন, ২০২১ সালে ৭১২টি মামলায় ৮৭৪ জন আটক হয়। এর পরে বছরে ৬২৫টি মামলায় ৮১৮ এবং চলতি বছরের মে পর্যন্ত প্রায় পৌনে ২০০ মামলায় ২৮৩ জন নারী-পুরুষ আটক হয়েছেন। এসব অভিযানে ইয়াবা, দেশি-বিদেশি মদ, গাঁজা, হিরোইন, ফেনসিডিলের বড় চালান উদ্ধার হয়েছে। এর সিংহভাগ অভিযান ডিবি পুলিশের।

 

ডিবির ওসি একেএম আজমল হুদা বলেন, ২০২২ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ৮৩ মামলায় নারী-পুরুষ এবং পুলিশ সদস্যসহ অন্তত শতাধিক আটক হয়েছে। আটক এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ইয়াবা-গাঁজার বড় চালান। এসব অভিযানের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো পটুয়াখালী-ঢাকা রুটের লেবুখালী ফেরিঘাটের পায়রা সেতুর টোলপ্লাজা। আজমল হুদা আরও বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। তাই ক্রমাগত অভিযান চলছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বাসদ ময়মনসিংহ মহানগর শাখার আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

মাদকের একাধিক শক্তিশালী চক্র সক্রিয় পটুয়াখালীতে

Update Time : ০১:১২:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ জুন ২০২৩

মোঃ যুবরাজ মৃধা পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ-

 

 

 

 

 

পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিন (২৯) ও তার ছোট ভাই মো. সাইফুল ইসলাম (২৮) প্রভাবশালী মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। তারা ইতঃপূর্বে ইয়াবা ও গাঁজার বড় চালানসহ বহুবার পটুয়াখালী ডিবি পুলিশের অভিযানে আটক হয়েছেন। এই দুই ভাইয়ের পেছনে কাজ করছে শক্তিশালী মাদক চক্র। যে কারণে আটক হওয়ার ১০-১৫ দিন না যেতেই জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের মাদক ব্যবসায় জড়ান। পুলিশ পিসিপিআরেও এমন তথ্য রয়েছে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে। জসিম ও সাইফুল আঙ্গরিয়া ইউনিয়নের দেলোয়ার ফকিরের ছেলে।

 

সূত্র বলছে, মাদক অভিযানে পুলিশ যত কঠোর হচ্ছে, তারচেয়ে বেশি কৌশলী ও রুট বদল করে ব্যবসা টেকাতে প্রতিযোগী হয়ে উঠছে তারা। মাদকের এই ভয়ংকর ছোবলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের তরুণ সমাজ। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে খুন-খারাবিও।

 

পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, মাদক নির্মূলে জেলার সবকটি থানায় বিশেষ টিম গঠন করেছি। বিশেষ করে ডিবিকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। যে কারণে মাদকের বেশকিছু বড় চালান জব্দ হয়েছে। তবে পুলিশের প্রতি জনগণের আন্তরিকতা এবং সামাজিক-পারিবারিক দায়িত্ববোধ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি শিশু-কিশোরদের সংস্কৃতিক চর্চায় উৎসাহী করতে হবে। এতে মাদক পুরোপুরি বন্ধ না হলেও সচেতনতা বাড়বে। পটুয়াখালী জেলা শহরের আরেক মাদক ব্যবসায়ীর নাম শাহ আলম মাদবর (৬০)। নব্বইয়ের দশকে চোলাই মদের ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। পরে চোলাই মদ বিলুপ্ত হলে প্রচলিত মাদকে জড়িয়ে অবৈধ এই পেশাকে টিকিয়ে রেখেছেন তিনি। শুধু শাহ আলম নয়, তার স্ত্রী, সন্তান, নাতি-নাতনিরাও এ ব্যবসায় লিপ্ত। পুলিশ রেকর্ডেই শাহ আলমের বিরুদ্ধে অন্তত এক থেকে দেড় ডজন মামলা রয়েছে। এরপর অন্যান্য সংস্থার রেকর্ডেও রয়েছে শাহ আলম ও তার পরিবারের নাম।

 

পটুয়াখালী ডিবি পুলিশের ওসি একেএম আজমল হুদা বলেন, শাহ আলমের স্ত্রী নিলুফা বেগমের বিরুদ্ধে ৮টি, মেয়ে সালমা ও রুপার বিরুদ্ধে অন্তত দেড় ডজন এবং ছেলে সোহেল মাদবরের বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তত ২ ডজন মামলা। এছাড়াও শাহ আলমের ছেলে সোহেলের স্ত্রী শিল্পীর বিরুদ্ধে রয়েছে অন্তত ৬টি মামলা। শাহ আলমের মেয়ে জামাই জলিলের বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, শাহ আলমের শিশু বয়সি নাতি-নাতনিও মাদকের সঙ্গে জড়িত। পুলিশ ছাড়াও র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকায় এই পরিবারের নাম রয়েছে। অনুসন্ধানে এ পর্যন্ত পরিবারটির নামে অন্তত শতাধিক মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে। তিন দশক ধরে মাদক কারবারে জড়িত থাকলেও পরিবারটি অঢেল সম্পদের মালিক হয়নি।

 

সূত্র বলছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আইন-আদালতসহ নানা মহলকে ম্যানেজ করতেই ব্যয় করেছেন মাদক কারবার থেকে অর্জিত বিপুল পরিমাণে অবৈধ অর্থ। সম্পদের ভেতর পটুয়াখালীর পরিত্যক্ত এয়ারপোর্টসংলগ্ন এলাকায় অর্ধকোটি টাকার জমি রয়েছে তাদের। ব্যবসার পাশাপাশি পরিবারটির সদস্যরা নিজেরাও মাদকাসক্ত।

 

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) আহমাদ মাঈনুল হাসান বলেন, ২০২১ সালে ৭১২টি মামলায় ৮৭৪ জন আটক হয়। এর পরে বছরে ৬২৫টি মামলায় ৮১৮ এবং চলতি বছরের মে পর্যন্ত প্রায় পৌনে ২০০ মামলায় ২৮৩ জন নারী-পুরুষ আটক হয়েছেন। এসব অভিযানে ইয়াবা, দেশি-বিদেশি মদ, গাঁজা, হিরোইন, ফেনসিডিলের বড় চালান উদ্ধার হয়েছে। এর সিংহভাগ অভিযান ডিবি পুলিশের।

 

ডিবির ওসি একেএম আজমল হুদা বলেন, ২০২২ সালের মার্চ থেকে এ পর্যন্ত ৮৩ মামলায় নারী-পুরুষ এবং পুলিশ সদস্যসহ অন্তত শতাধিক আটক হয়েছে। আটক এসব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দেওয়া হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে ইয়াবা-গাঁজার বড় চালান। এসব অভিযানের মূল কেন্দ্রবিন্দু হলো পটুয়াখালী-ঢাকা রুটের লেবুখালী ফেরিঘাটের পায়রা সেতুর টোলপ্লাজা। আজমল হুদা আরও বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। তাই ক্রমাগত অভিযান চলছে।