Dhaka ০২:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিদ্যালয় ভবন যখন গেস্ট হাউজ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:৫০:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুলাই ২০২৩
  • ১৮২ Time View

মোঃ যুবরাজ মৃধা পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ-

 

 

 

 

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবনের বেশ কয়েকটি ক্লাস রুমকে গেস্ট হাউজ বানিয়ে নিয়মিত পর্যটকদের কাছে ভাড়া দিচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর সেই গেস্ট হাউজের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কুয়াকাটা বি.বি গেস্টে হাউজ’। দীর্ঘদিন যাবত এ বাণিজ্য চললেও জানে না উপজেলা প্রশাসন কিংবা শিক্ষা বিভাগ। এছাড়া বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক থাকে ওই গেস্ট হাউজে।

 

খোঁজ নিয়ে জান যায়, কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি স্থানীয়ভাবে বেশ সুনামের সঙ্গেই শিক্ষা দিয়ে আসছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই বিদ্যালয়ের দুটি ভবনের একটিকে গেস্ট হাউজ বানিয়ে নিয়মিত পর্যটকদের কাছে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। আর পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর কুয়াকাটায় পর্যটকদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাড়াও হচ্ছে নিয়মিত। তবে এ গেস্ট হাউজের ভাড়া কোথায় যাচ্ছে কিংবা কে কি খাতে ব্যয় করছেন এর সঠিক কোনো হিসাব নেই। বিষয়টি নিয়ে রোববার (৯ জুলাই) রাতে কুয়াকাটা পৌর ছাত্রলীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ কাওছার তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বেশ কয়েকটি ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন।

 

তিনি লিখেন, কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয় কুয়াকাটা পৌরসভার একটি মাত্র হাই স্কুল। ঈদের ছুটির পর আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। কিন্তু বিকেলে খেলা দেখার উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়ে দেখলাম কিছু পর্যটক ধূমপান করছেন এবং শিক্ষার্থীদের সামনে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন- আমরা ঘুরতে আসছি ভাড়া নিয়ে থাকছি এটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। অনেক দিন আগে থেকেই স্কুলের একটি ভবনকে কর্তৃপক্ষ আবাসিক হোটেল বানিয়েছে। প্রতিদিন ভাড়া দিচ্ছে। এখানে খারাপ লাগার বিষয় হচ্ছে একটা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন বহিরাগত লোক আসছে এবং শিক্ষার্থীরা বিব্রত হচ্ছে।

 

এ ছাত্রলীগ নেতা আরও লিখেন, বুঝলাম টাকা স্কুলের খাতেই ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গেস্ট ভাড়া দেয় না বলে কি চলে না? কিংবা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কী স্কুল চলতো না? এটা আমার ব্যক্তিগত মত। কোনো স্যারদের উদ্দেশ্যে করে নয়, একজন সচেতন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে খারাপ লাগাটা প্রকাশ করলাম।

 

এদিকে ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পর্যটকদের সঙ্গে এক যুবক কথা বলছেন, এতে পর্যটকরাও কিছুটা বিব্রত। তাদের সঙ্গে কথপোকথনের জানা যায় স্কুলের একজন স্টাফ পর্যটকদের ডেকে এন ভাড়া দিয়েছেন। তাদের রুমের চাবি রিংয়ে কুয়াকাটা বি.বি গেস্ট হাউজ লেখা আছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান বলেন, মূলত বিভিন্ন সময় শিক্ষা বিভাগ থেকে অনেক কর্মকর্তারা কুয়াকাটায় আসেন, তাদের জন্য অনেক সময় রুম পাওয়া যায় না। তাই গেস্ট হাউজ হিসেবে কয়েকটি রুম করা হয়েছে। এগুলো কখনো সাধারণ মানুষের কাছে ভাড়া দেওয়া হয় না।

 

তার দাবি, বিদ্যালয়টির মোট চারটি কক্ষকে গেস্ট হাউজ বানানো হয়েছে। যার দুটি কক্ষের একটিতে গণিত শিক্ষক এবং একটিতে ইংরেজি শিক্ষক নিয়মিত থাকছেন এবং দুটি কক্ষ অতিথিরা এলে থাকেন।

 

বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমকে গেস্ট হাউজ করার আইনগত ভিত্তি আছে কি না জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

 

গেস্ট রুমে থাকার বিষয়ে কুয়াকাটা বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শামিম মিয়া বলেন, আমার বাড়ি বালিয়াতলীতে, আমি নিজে একজন বি ভাইরাসের রোগী এবং আমার স্ত্রী ও মেয়ে থ্যালাসেমিয়ার রোগী। এতদূর থেকে আশা যাওয়া করা তো সম্ভব হয় না, এ কারণে মানবিক দিক বিবেচনা করে আমাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে।

 

কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লা বলেন, স্কুলের ক্লাস রুমে কেন গেস্ট হাউজ বানাবে। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আপনাকে জানাচ্ছি।

 

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়টি গতকাল জানতে পেরেছি। স্কুলটি সম্পর্কে আমাদের খুব পজিটিভ একটা ধারণা আছে এবং স্কুলের পরিবেশটাও বেশ ভালো। তবে এখন আমি ওই স্কুলে যাচ্ছি এবং পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে বিস্তারিত বলতে পারবো।

 

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, কোনো অবস্থাতেই বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমকে গেস্ট হাউজ করার সুযোগ নেই। এমনটি হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বাসদ ময়মনসিংহ মহানগর শাখার আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

বিদ্যালয় ভবন যখন গেস্ট হাউজ

Update Time : ০৭:৫০:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুলাই ২০২৩

মোঃ যুবরাজ মৃধা পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ-

 

 

 

 

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি ভবনের বেশ কয়েকটি ক্লাস রুমকে গেস্ট হাউজ বানিয়ে নিয়মিত পর্যটকদের কাছে ভাড়া দিচ্ছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আর সেই গেস্ট হাউজের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কুয়াকাটা বি.বি গেস্টে হাউজ’। দীর্ঘদিন যাবত এ বাণিজ্য চললেও জানে না উপজেলা প্রশাসন কিংবা শিক্ষা বিভাগ। এছাড়া বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক থাকে ওই গেস্ট হাউজে।

 

খোঁজ নিয়ে জান যায়, কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি স্থানীয়ভাবে বেশ সুনামের সঙ্গেই শিক্ষা দিয়ে আসছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে নিয়মনীতি অনুসরণ না করেই বিদ্যালয়ের দুটি ভবনের একটিকে গেস্ট হাউজ বানিয়ে নিয়মিত পর্যটকদের কাছে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। আর পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর কুয়াকাটায় পর্যটকদের উপস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাড়াও হচ্ছে নিয়মিত। তবে এ গেস্ট হাউজের ভাড়া কোথায় যাচ্ছে কিংবা কে কি খাতে ব্যয় করছেন এর সঠিক কোনো হিসাব নেই। বিষয়টি নিয়ে রোববার (৯ জুলাই) রাতে কুয়াকাটা পৌর ছাত্রলীগের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ কাওছার তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে বেশ কয়েকটি ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেছেন।

 

তিনি লিখেন, কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয় কুয়াকাটা পৌরসভার একটি মাত্র হাই স্কুল। ঈদের ছুটির পর আজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলেছে। কিন্তু বিকেলে খেলা দেখার উদ্দেশ্যে সেখানে গিয়ে দেখলাম কিছু পর্যটক ধূমপান করছেন এবং শিক্ষার্থীদের সামনে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন- আমরা ঘুরতে আসছি ভাড়া নিয়ে থাকছি এটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। অনেক দিন আগে থেকেই স্কুলের একটি ভবনকে কর্তৃপক্ষ আবাসিক হোটেল বানিয়েছে। প্রতিদিন ভাড়া দিচ্ছে। এখানে খারাপ লাগার বিষয় হচ্ছে একটা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন বহিরাগত লোক আসছে এবং শিক্ষার্থীরা বিব্রত হচ্ছে।

 

এ ছাত্রলীগ নেতা আরও লিখেন, বুঝলাম টাকা স্কুলের খাতেই ব্যয় হচ্ছে। কিন্তু অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে গেস্ট ভাড়া দেয় না বলে কি চলে না? কিংবা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কী স্কুল চলতো না? এটা আমার ব্যক্তিগত মত। কোনো স্যারদের উদ্দেশ্যে করে নয়, একজন সচেতন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে খারাপ লাগাটা প্রকাশ করলাম।

 

এদিকে ফেসবুকে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, পর্যটকদের সঙ্গে এক যুবক কথা বলছেন, এতে পর্যটকরাও কিছুটা বিব্রত। তাদের সঙ্গে কথপোকথনের জানা যায় স্কুলের একজন স্টাফ পর্যটকদের ডেকে এন ভাড়া দিয়েছেন। তাদের রুমের চাবি রিংয়ে কুয়াকাটা বি.বি গেস্ট হাউজ লেখা আছে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান বলেন, মূলত বিভিন্ন সময় শিক্ষা বিভাগ থেকে অনেক কর্মকর্তারা কুয়াকাটায় আসেন, তাদের জন্য অনেক সময় রুম পাওয়া যায় না। তাই গেস্ট হাউজ হিসেবে কয়েকটি রুম করা হয়েছে। এগুলো কখনো সাধারণ মানুষের কাছে ভাড়া দেওয়া হয় না।

 

তার দাবি, বিদ্যালয়টির মোট চারটি কক্ষকে গেস্ট হাউজ বানানো হয়েছে। যার দুটি কক্ষের একটিতে গণিত শিক্ষক এবং একটিতে ইংরেজি শিক্ষক নিয়মিত থাকছেন এবং দুটি কক্ষ অতিথিরা এলে থাকেন।

 

বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমকে গেস্ট হাউজ করার আইনগত ভিত্তি আছে কি না জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

 

গেস্ট রুমে থাকার বিষয়ে কুয়াকাটা বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শামিম মিয়া বলেন, আমার বাড়ি বালিয়াতলীতে, আমি নিজে একজন বি ভাইরাসের রোগী এবং আমার স্ত্রী ও মেয়ে থ্যালাসেমিয়ার রোগী। এতদূর থেকে আশা যাওয়া করা তো সম্ভব হয় না, এ কারণে মানবিক দিক বিবেচনা করে আমাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে।

 

কুয়াকাটা বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল বারেক মোল্লা বলেন, স্কুলের ক্লাস রুমে কেন গেস্ট হাউজ বানাবে। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আপনাকে জানাচ্ছি।

 

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়টি গতকাল জানতে পেরেছি। স্কুলটি সম্পর্কে আমাদের খুব পজিটিভ একটা ধারণা আছে এবং স্কুলের পরিবেশটাও বেশ ভালো। তবে এখন আমি ওই স্কুলে যাচ্ছি এবং পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে বিস্তারিত বলতে পারবো।

 

এ বিষয়ে পটুয়াখালী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, কোনো অবস্থাতেই বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমকে গেস্ট হাউজ করার সুযোগ নেই। এমনটি হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবো।