মোঃ যুবরাজ মৃধা পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ-
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবী ইউনিয়নের সংরক্ষিত বনে কর্মকর্তাদের যোগসাজোশে অবৈধভাবে মধু সংগ্রহের উৎসব চলছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এ বিষয়ে তোয়াক্কা করছে না কেউ।
ইলিয়াস নামে এক মৌয়ালের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা মেইলের সাংবাদিকের। তার মতে, ‘বনের রক্ষকই ভক্ষক’। বন বিভাগের স্থানীয় বিট কর্মকর্তা স্বয়ং জড়িত থাকার অভিযোগ করেন তিনি।
ইলিয়াস ঢাকা মেইলকে জানান, মৌডুবী ফরেস্ট বিট কর্মকর্তা শোয়েব খানকে তিনের একাংশ মধু দিতে হয়। আর এর বিনিময়ই মৌখিকভাবে অনুমতি দেন তিনি। অন্যথায় রয়েছে মামলার হুমকি।
এদিকে মৌডুবী ইউনিয়নের বিট কর্মকর্তা শোয়েব খান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কাউকে বাগানে মধু সংগ্রহের জন্য অনুমতি দেইনি। তবে আমি জানতে পারছি যে, দুই দল ইলিয়াছের দল ও ১১ নম্বর এলাকার আরো একটি দল বাগানে মধু সংগ্রহ করতে গিয়েছে। তবে নিয়মিত গাছ কাটা ও মধু সংগ্রহকারীদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না তা জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
বিট কর্মকর্তার মধু বাণিজ্যের বিষয়টি এলাকাবাসীর কাছে অনেকটা ‘ওপেন সিক্রেট’ বিষয়। লেনদেন, বাণিজ্য এবং মৌখিক অনুমতি থাকলেও নেই কোনো দালিলিক প্রমাণ।
একাদিক স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সংরক্ষিত বনের মধু সংগ্রহে বিট কর্মকর্তা নিজেই জড়িত। এখানে অন্যরা প্রতিবাদ করে আর কী হবে।
অন্যদিকে, সাধারণ জনগণের প্রতি রয়েছে মামলার ভয়। লিজ নেওয়া লোকজনকে মধু কিংবা গাছ কাটতে বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে উল্টো হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয় বলেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
অভিযুক্ত বিট কর্মকর্তার অনুসারী ইলিয়াসের মামলার ভয়ে কেউ বাসা বাড়ির মধুও কাটতে পারেন না। তাই আমাদের এলাকার সকল জনগনের দাবি, তাদেরকে যেন এই বিট কর্মকর্তা সংরক্ষিত বনের মধুর লিজ না দেয়।’ একইসাথে অবৈধভাবে মধু সংগ্রহ এবং এলাকার মানুষকে মামলার ভয় দেখায় তার শাস্তি চান তারা।
নাম না প্রকাশের শর্তে এক জেলে বলেন, আমরা আপনাদের কাছে যদি কিছু বলি তাহলে শোয়েব খান আমাদেরকে খাল লিজ, বাগানের মধু লিজ, আমরা যে বাগানের গাছ কাডি জানতে পারলে আর কোনো দিন দিবে না। তাই আপনাদের কাছে কিছুই বলতে পারবো না। সাংবাদিকরা যখন বাগানে যাবে তখন বিট কর্মকর্তা যারা মধু কাটতে যায় তখন তাদের কে ফোনে বলে দেয় তোরমা চলে আসো সাংবাদকিরা বাগানের দিকে যাচ্ছে। এরকম অনেক দেখছি। গাই বাছুরের মিল থাকলে বাগানে গিয়েও দুধ দেয় অর্থাৎ সাংবাদিকরা দিনে আসলে ওরা রাতে বাগানে মধু কাটবে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার মৌডুবী ফরেস্ট ক্যাম্পের আওতাধীন ১১ নম্বর গ্রামের আব্দুর রব ও সবুজ আকন বাঁধঘাট এলাকায় (আশাবাড়িয়া) সংরক্ষিত বনে মধু সংগ্রহে গেলে সেখানে আগে থেকে অবস্থান নেওয়া একই ইউনিয়নের ভূইয়াকান্দা এলাকার হাসেম পাটোয়ারীর ছেলে ইলিয়াছ পাটোয়ারীর লোকজন বনের ভিতরে পিছন থেকে সবুজ আকনের ওপর হামলা চালায়।
সবুজ আকন জানান, আমি বনের ভিতর দিয়ে একা হাঁটতেছিলাম। এমন সময় পেছন থেকে এসে একজন আমাকে লাঠি দিয়ে মার শুরু করে। পরে ইলিয়াসের সঙ্গে থাকা দুলাল আমাকে দা দিয়ে কোপ দিতে চাইলে আমি হাত দিয়ে বাধা দিই। এসময় দায়ের কোপ আমার হাতে পরে হাত কেটে যায়। তার পরে আমাকে ইলিয়াসের দল উঠিয়ে ফরেস্ট অফিসে নিয়ে আসে। আমি এর বিচার চাই। আমি এখনো পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি। বিট কর্মকর্তা বলেছে আমি পটুয়াখালীতে আছি। আমি এসে বসে সবার কথা শুনে একটা ফয়সালা করে দিবো। আমি এখোনো তার ফয়সালার আশায় আছি।
উপজেলা রেঞ্জ অফিসার অমিতাভ বসু বলেন, অবৈধভাবে মধু সংগ্রহ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। বনবিভাগ থেকে এ ধরনের লিজ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। বনবিভাগের কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিভাগীয় বনকর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারি বনে মধু সংগ্রহ ও গাছ কাটা সম্পূর্ণ অবৈধ। বন বিভাগের কোনো কর্মকর্তা অবৈধভাবে লিজ দিয়ে থাকলে বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।