Dhaka ০২:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রক্ষার জন্য সৈকত থেকেই বালু কাটা হচ্ছে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:৫৬:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩
  • ১৬৯ Time View

মোঃ যুবরাজ মৃধা পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ-

 

 

 

 

 

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে সাগরের অব্যাহত ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য আবারও কাজ শুরু হয়েছে। তবে সৈকত রক্ষার জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, তা নিয়ে স্থানীয় মানুষসহ পর্যটকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ, এ জন্য সৈকত থেকেই বালু তুলে জিও ব্যাগে ভরা হচ্ছে। এর আগে দুই দফায় এমন কাজ হলেও সেগুলো সাগরের প্রবল জোয়ার আর ঢেউয়ের তাণ্ডবে বিলীন হয়ে যায়। সম্প্রতি তৃতীয় দফায় একই পদ্ধতিতে কাজ শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈকত রক্ষার জন্য সৈকত থেকে বালু তুলে তা জিও ব্যাগ ও জিও টিউবে ঢোকানো হচ্ছে। এরপর এসব বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও টিউব সৈকতের ভাঙন রক্ষার জন্য ফেলা হবে। কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে দুই দিকে ১ হাজার ১০০ মিটার সৈকত এলাকায় এভাবে জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলে সুরক্ষা দেওয়া হবে। এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি টাকা। লিটন সাউগার ও আবদুল হান্নান মিয়া নামের স্থানীয় দুজন ঠিকাদার কাজটির বাস্তবায়ন করছেন।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, এর আগে দুই দফায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার জন্য উদ্যোগ নেয়। এতে শুধু অর্থেরই অপচয় হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এবারও এসব পরিকল্পনা টেকসই হবে না বলে সন্দেহ তাঁর। তিনি বলেন, ‘আসলে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার জন্য এ রকম যেনতেন কাজ নয়, উচিত হবে বিজ্ঞানসম্মত যথাযথ ও টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা। যার জন্য আগে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জরিপ করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামত যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হলে তা কার্যকর হবে বলে আমরা আশা করি।’
এর আগে দুই দফায় এমন কাজ হলেও সেগুলো সাগরের প্রবল জোয়ার আর ঢেউয়ের তাণ্ডবে বিলীন হয়ে যায়। সম্প্রতি তৃতীয় দফায় একই পদ্ধতিতে কাজ শুরু হয়েছে
এর আগে দুই দফায় এমন কাজ হলেও সেগুলো সাগরের প্রবল জোয়ার আর ঢেউয়ের তাণ্ডবে বিলীন হয়ে যায়। সম্প্রতি তৃতীয় দফায় একই পদ্ধতিতে কাজ শুরু হয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সর্বশেষ গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে দেড় কিলোমিটার এবং পূর্ব দিকে আধা কিলোমিটার এলাকায় বালু ভর্তি করে জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এ জন্য তখন ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়। অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতের (এনডিআর) অর্থ ব্যয় করে এ কাজ বাস্তবায়িত হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কে কে এন্টারপ্রাইজ তখন কাজটি বাস্তবায়ন করে।

এর আগে ২০১৯ সালে কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট-সংলগ্ন দুদিকে ১ হাজার ৫৬০ মিটার তীরভূমির ভাঙন রোধে একইভাবে বালু ভর্তি জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। তখন পূর্ব দিকে ৫৬০ মিটার ও পশ্চিম দিকে ১ হাজার মিটার এলাকা সুরক্ষা করা হয়। এ কাজে তখন ব্যয় হয় ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সাগরের প্রবল জোয়ার আর ঢেউয়ের তাণ্ডবে দুই দফায় করা এসব কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিলীন হয়ে যায়।

এবারের সৈকত রক্ষার কাজটি স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নয় বলে দাবি করেন কলাপাড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন ওয়ালিদ। তিনি বলেন, ‘এটি জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় করা হচ্ছে। এ কাজের জন্য স্থানীয় পর্যায় থেকে বালু কিনে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এতে সর্বোচ্চ পাঁচ ভাগ বালু ঢেউয়ের ঝাপটায় বের হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর জিও ব্যাগ ও জিও টিউব এমনিতেই দুই থেকে তিন বছরের বেশি টিকবে না।’

সৈকতের বেলাভূমি থেকে কোনো বালু সংগ্রহ করার বিষয়টি অস্বীকার করেন খালিদ বিন ওয়ালিদ। তিনি বলেন, ‘কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প নামে ৭৫০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে আমরা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে স্থায়ীভাবে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার কাজ শুরু হবে।

আলী হোসেন জোমাদ্দার, মো. জহিরুল ইসলামসহ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, সৈকত থেকে বালু তুলে তা জিও ব্যাগ ও টিউবে ঢুকিয়ে সৈকত রক্ষার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে মারাত্মকভাবে সৈকত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে সৈকত রক্ষার চেষ্টায় কোনো সুফল হবে না।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বাসদ ময়মনসিংহ মহানগর শাখার আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত রক্ষার জন্য সৈকত থেকেই বালু কাটা হচ্ছে

Update Time : ০৮:৫৬:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুন ২০২৩

মোঃ যুবরাজ মৃধা পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ-

 

 

 

 

 

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে সাগরের অব্যাহত ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য আবারও কাজ শুরু হয়েছে। তবে সৈকত রক্ষার জন্য যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, তা নিয়ে স্থানীয় মানুষসহ পর্যটকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ, এ জন্য সৈকত থেকেই বালু তুলে জিও ব্যাগে ভরা হচ্ছে। এর আগে দুই দফায় এমন কাজ হলেও সেগুলো সাগরের প্রবল জোয়ার আর ঢেউয়ের তাণ্ডবে বিলীন হয়ে যায়। সম্প্রতি তৃতীয় দফায় একই পদ্ধতিতে কাজ শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈকত রক্ষার জন্য সৈকত থেকে বালু তুলে তা জিও ব্যাগ ও জিও টিউবে ঢোকানো হচ্ছে। এরপর এসব বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও টিউব সৈকতের ভাঙন রক্ষার জন্য ফেলা হবে। কুয়াকাটার জিরো পয়েন্ট থেকে দুই দিকে ১ হাজার ১০০ মিটার সৈকত এলাকায় এভাবে জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলে সুরক্ষা দেওয়া হবে। এ কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই কোটি টাকা। লিটন সাউগার ও আবদুল হান্নান মিয়া নামের স্থানীয় দুজন ঠিকাদার কাজটির বাস্তবায়ন করছেন।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র মো. আনোয়ার হাওলাদার বলেন, এর আগে দুই দফায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার জন্য উদ্যোগ নেয়। এতে শুধু অর্থেরই অপচয় হয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এবারও এসব পরিকল্পনা টেকসই হবে না বলে সন্দেহ তাঁর। তিনি বলেন, ‘আসলে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার জন্য এ রকম যেনতেন কাজ নয়, উচিত হবে বিজ্ঞানসম্মত যথাযথ ও টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করা। যার জন্য আগে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জরিপ করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতামত যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ সাপেক্ষে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হলে তা কার্যকর হবে বলে আমরা আশা করি।’
এর আগে দুই দফায় এমন কাজ হলেও সেগুলো সাগরের প্রবল জোয়ার আর ঢেউয়ের তাণ্ডবে বিলীন হয়ে যায়। সম্প্রতি তৃতীয় দফায় একই পদ্ধতিতে কাজ শুরু হয়েছে
এর আগে দুই দফায় এমন কাজ হলেও সেগুলো সাগরের প্রবল জোয়ার আর ঢেউয়ের তাণ্ডবে বিলীন হয়ে যায়। সম্প্রতি তৃতীয় দফায় একই পদ্ধতিতে কাজ শুরু হয়েছে।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সর্বশেষ গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে দেড় কিলোমিটার এবং পূর্ব দিকে আধা কিলোমিটার এলাকায় বালু ভর্তি করে জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এ জন্য তখন ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়। অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতের (এনডিআর) অর্থ ব্যয় করে এ কাজ বাস্তবায়িত হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কে কে এন্টারপ্রাইজ তখন কাজটি বাস্তবায়ন করে।

এর আগে ২০১৯ সালে কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট-সংলগ্ন দুদিকে ১ হাজার ৫৬০ মিটার তীরভূমির ভাঙন রোধে একইভাবে বালু ভর্তি জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। তখন পূর্ব দিকে ৫৬০ মিটার ও পশ্চিম দিকে ১ হাজার মিটার এলাকা সুরক্ষা করা হয়। এ কাজে তখন ব্যয় হয় ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। সাগরের প্রবল জোয়ার আর ঢেউয়ের তাণ্ডবে দুই দফায় করা এসব কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিলীন হয়ে যায়।

এবারের সৈকত রক্ষার কাজটি স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা নয় বলে দাবি করেন কলাপাড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ বিন ওয়ালিদ। তিনি বলেন, ‘এটি জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় করা হচ্ছে। এ কাজের জন্য স্থানীয় পর্যায় থেকে বালু কিনে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, এতে সর্বোচ্চ পাঁচ ভাগ বালু ঢেউয়ের ঝাপটায় বের হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর জিও ব্যাগ ও জিও টিউব এমনিতেই দুই থেকে তিন বছরের বেশি টিকবে না।’

সৈকতের বেলাভূমি থেকে কোনো বালু সংগ্রহ করার বিষয়টি অস্বীকার করেন খালিদ বিন ওয়ালিদ। তিনি বলেন, ‘কুয়াকাটা সৈকত রক্ষা ও উন্নয়ন প্রকল্প নামে ৭৫০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে আমরা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে স্থায়ীভাবে কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার কাজ শুরু হবে।

আলী হোসেন জোমাদ্দার, মো. জহিরুল ইসলামসহ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, সৈকত থেকে বালু তুলে তা জিও ব্যাগ ও টিউবে ঢুকিয়ে সৈকত রক্ষার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে মারাত্মকভাবে সৈকত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ পদ্ধতিতে সৈকত রক্ষার চেষ্টায় কোনো সুফল হবে না।