Dhaka ১২:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তারাগঞ্জে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থী শূন্যের পথে

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:৫৭:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩
  • ৪৮৬ Time View

 

 

 

মমিনুর সরকার, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি :

 

দীর্ঘ ৬ মাস থেকে প্রধান শিক্ষক ছুটিতে থাকায় শিক্ষার্থী শূন্য হতে চলেছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বাছুরবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রধান শিক্ষক না থাকায় ঠিকমতো পাঠদান হচ্ছে না বলে দাবী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের। ফলে শিক্ষার্থীরা অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে বলে অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও প্রতিদিন শিক্ষার্খী উপস্থিতি থাকে ১৪ থেকে ১৫ জন।

 

সরেজমিনে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণীতে ৫জন, চতুর্থ শ্রেণীতে ২জন ও পঞ্চম শ্রেণীতে উপস্থিত শিক্ষার্থী মাত্র ৭জন। বিদ্যালয়ের শ্রেণী হাজিরা খাতায় তৃতীয় শ্রেণীতে রয়েছে মোট শিক্ষার্থী ২৯, চতুর্থ শ্রেণীতে রয়েছে মোট ৩৩ জন ও পঞ্চম শ্রেণীতে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ২১ জন। শিক্ষার্থীদের খুব উপস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠদানকারী বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছাঃ মিসকে জান্নাত বলেন, রমজানের কারনে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসছে না। বিদ্যালয়ের পাশেই যাদের বাড়ি সেই সব শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে ডেকে এনে ক্লাস করাতে হচ্ছে। অপরদিকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে পাঠদানকারী দুই শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়ে ঝামেলা থাকায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসছে না। অনেক শিক্ষার্থী আমাদের প্রতিষ্ঠান ছেড়ে বাইরের প্রতিষ্ঠানেও ভর্তি হচ্ছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়াতে হলে নতুন একজন প্রধান শিক্ষককে স্থায়ীভাবে এই স্কুলের দায়িত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরী।

 

বিদ্যায়ের পঞ্চম শ্রেণীর শ্রেণী শিক্ষক প্রদীপ রায়ের কাছে জানা যায়, ইতোমধ্যে পঞ্চম শ্রেণীর কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ প্রতিটি শ্রেণী থেকেই অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেন স্কুলে ভর্তি হয়ে যাওয়া শুরু করেছে। তেমনই অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া পঞ্চম শ্রেণীর দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক জগন্নাথ ও কালীরঞ্জনের সাথে কথা হয়ে। তারা বলেন বিদ্যালয়ের অভিভাবক হচ্ছে প্রধান শিক্ষক। এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক না থাকায় ঠিকমতো ক্লাস নেওয়া হয়। স্যারেরা সময়মতো স্কুলে আসলেও স্কুল ছুটি দিয়ে বাড়িতে চলে যায় তারাতারি। স্কুলে উপস্থিত হয়ে অফিস রুমে সবাই বসে গল্পগুজব করে সময় কাটায়। বর্তমানে এই স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ নাই। তাই হামরা ছাওয়াক অন্য স্কুলে ভর্তি করাছি।

 

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ে শৌচাগার না থাকলেও শিক্ষার্থীদের দিয়ে শৌচাগার পরিস্কার করে নেওয়ার অভিযোগ তুলে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক নাজমুন লায়েলের উপর হামলা করে স্থানীয়রা। পরে অফিস সিদ্ধান্তে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে এপর্যন্ত চিকিৎসা জনিত ছুটিতে রাখা হয়েছে প্রধান শিক্ষককে। বর্তমানে বিদ্যালয়টি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে।

 

এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষক নাজমুল লায়েলের বদলীর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কাগজপত্র ডিডি স্যারের বরাবরে পাঠানো হয়েছে। আমি যোগাযোগ রাখছি বিষয়টি সমাধানের। ডিডি স্যারের নির্দেশনা পেলেই ওই প্রধান শিক্ষককে বদলী করে অন্য প্রধান শিক্ষককে দায়িত্বে পাঠানো হবে। হয়তো এই সপ্তাহের যেকোন সময় ডিডি স্যারের নির্দেশনা আসতে পারে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

ঝিকরগাছার শংকরপুরে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প আওতায় মাঠ দিবসের কারিগরি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।

তারাগঞ্জে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থী শূন্যের পথে

Update Time : ১২:৫৭:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩

 

 

 

মমিনুর সরকার, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি :

 

দীর্ঘ ৬ মাস থেকে প্রধান শিক্ষক ছুটিতে থাকায় শিক্ষার্থী শূন্য হতে চলেছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার বাছুরবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রধান শিক্ষক না থাকায় ঠিকমতো পাঠদান হচ্ছে না বলে দাবী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের। ফলে শিক্ষার্থীরা অন্য প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হচ্ছে বলে অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষক কর্মরত থাকলেও প্রতিদিন শিক্ষার্খী উপস্থিতি থাকে ১৪ থেকে ১৫ জন।

 

সরেজমিনে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, তৃতীয় শ্রেণীতে ৫জন, চতুর্থ শ্রেণীতে ২জন ও পঞ্চম শ্রেণীতে উপস্থিত শিক্ষার্থী মাত্র ৭জন। বিদ্যালয়ের শ্রেণী হাজিরা খাতায় তৃতীয় শ্রেণীতে রয়েছে মোট শিক্ষার্থী ২৯, চতুর্থ শ্রেণীতে রয়েছে মোট ৩৩ জন ও পঞ্চম শ্রেণীতে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ২১ জন। শিক্ষার্থীদের খুব উপস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে চতুর্থ শ্রেণীতে পাঠদানকারী বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছাঃ মিসকে জান্নাত বলেন, রমজানের কারনে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসছে না। বিদ্যালয়ের পাশেই যাদের বাড়ি সেই সব শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে ডেকে এনে ক্লাস করাতে হচ্ছে। অপরদিকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীতে পাঠদানকারী দুই শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রধান শিক্ষক নিয়ে ঝামেলা থাকায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসছে না। অনেক শিক্ষার্থী আমাদের প্রতিষ্ঠান ছেড়ে বাইরের প্রতিষ্ঠানেও ভর্তি হচ্ছে। বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে এনে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়াতে হলে নতুন একজন প্রধান শিক্ষককে স্থায়ীভাবে এই স্কুলের দায়িত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরী।

 

বিদ্যায়ের পঞ্চম শ্রেণীর শ্রেণী শিক্ষক প্রদীপ রায়ের কাছে জানা যায়, ইতোমধ্যে পঞ্চম শ্রেণীর কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ প্রতিটি শ্রেণী থেকেই অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেন স্কুলে ভর্তি হয়ে যাওয়া শুরু করেছে। তেমনই অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া পঞ্চম শ্রেণীর দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক জগন্নাথ ও কালীরঞ্জনের সাথে কথা হয়ে। তারা বলেন বিদ্যালয়ের অভিভাবক হচ্ছে প্রধান শিক্ষক। এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক না থাকায় ঠিকমতো ক্লাস নেওয়া হয়। স্যারেরা সময়মতো স্কুলে আসলেও স্কুল ছুটি দিয়ে বাড়িতে চলে যায় তারাতারি। স্কুলে উপস্থিত হয়ে অফিস রুমে সবাই বসে গল্পগুজব করে সময় কাটায়। বর্তমানে এই স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ নাই। তাই হামরা ছাওয়াক অন্য স্কুলে ভর্তি করাছি।

 

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ে শৌচাগার না থাকলেও শিক্ষার্থীদের দিয়ে শৌচাগার পরিস্কার করে নেওয়ার অভিযোগ তুলে গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক নাজমুন লায়েলের উপর হামলা করে স্থানীয়রা। পরে অফিস সিদ্ধান্তে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে এপর্যন্ত চিকিৎসা জনিত ছুটিতে রাখা হয়েছে প্রধান শিক্ষককে। বর্তমানে বিদ্যালয়টি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে।

 

এবিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, প্রধান শিক্ষক নাজমুল লায়েলের বদলীর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কাগজপত্র ডিডি স্যারের বরাবরে পাঠানো হয়েছে। আমি যোগাযোগ রাখছি বিষয়টি সমাধানের। ডিডি স্যারের নির্দেশনা পেলেই ওই প্রধান শিক্ষককে বদলী করে অন্য প্রধান শিক্ষককে দায়িত্বে পাঠানো হবে। হয়তো এই সপ্তাহের যেকোন সময় ডিডি স্যারের নির্দেশনা আসতে পারে।