Dhaka ১১:৪২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কবরের জীবনটা সহজ হবে না!

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:৪২:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৭৩ Time View

কবরের জীবনটা সহজ হবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কবরের আজাব দেখানো হয়েছিলো। ফলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কখনও কবরের চেয়ে ভয়াবহ (অন্য কোনো) দৃশ্য দেখিনি। কবরের ভয়াবহ দৃশ্য দেখার পর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। পরকালের জন্য নিজেদের প্রস্তুতে কিছু হাদিস ও দোয়া উল্লেখ করেছেন। তাহলো-
১. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমরা মৃতদের দাফন করা বর্জন করে দেবে, এ ভয় না থাকলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম; যেন তিনি তোমাদের কবরের কিছু আজাব শুনিয়ে (দেখিয়ে) দেন।’ (মুসলিম ৭১০৬)
২. এজন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরের আজাব এবং ফেতনা থেকে বারবার পানাহ চাইতেন। তাই মুসলিম উম্মাহও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভাষায় এভাবে দোয়া করতে পারেন। তাহলো-

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি, ৮৩২)
৩. হজরত যায়দ ইবনু সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হজরত আবু সাঈদ আল-খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলাম না, বরং আমাকে যায়দ ইবনু সাবিত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাজ্জার গোত্রের একটি প্রাচীর ঘেরা বাগানে তার একটি খচ্চরের উপর আরোহী ছিলেন। এ সময় আমরা তার সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ তা লাফিয়ে উঠলো এবং তাঁকে ফেলে দেওয়ার উপক্রম করলো। দেখা গেলো, সেখানে ছয়টি কিংবা পাঁচটি অথবা চারটি কবর রয়েছে।
বর্ণনাকারী বলেন, জুরাইরি এমনটিই বর্ণনা করতেন। এরপর তিনি প্রশ্ন করলেন, এ কবরবাসীদেরকে কেউ চিনে কী? তখন এক ব্যক্তি বললেন, আমি চিনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কখন মৃত্যুবরণ করেছে? তিনি বললেন, তারা শিরকের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ উম্মাতকে তাদের কবরের মধ্যে পরীক্ষা করা হবে। তোমরা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা বর্জন করবে, এ আশঙ্কা না হলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম যেন তিনি তোমাদেরকেও কবরের আজাব শুনান যা আমি শুনতে পাঁচ্ছি।
তারপর তিনি আমাদের প্রতি মনোনিবেশ করে বললেন, তোমরা সবাই জাহান্নামের আজাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। সাহাবাগণ বললেন, আমরা জাহান্নামের শাস্তি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।
তারপর তিনি বললেন, তোমরা সকলে কবরের শাস্তি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। সাহাবাগণ বললেন, আমরা আল্লাহর কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই।
এরপর তিনি বললেন, তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন সব প্রকার ফেতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। তারা বললেন, আমরা প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার ফেতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। তিনি আবারও বললেন, তোমরা দাজ্জালের ফেতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। সাহাবাগণ বললেন, আমরা দাজ্জালের ফেতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।’ (মুসলিম ৭১০৫)
সুতরাং কবরের আজাব থেকে বাঁচতে আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি সাহায্য প্রার্থনা করা। হাদিসের ওপর আমল করা মুমিন মুসলমানের একান্ত কাজ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কবরের আজাব থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব, সাবেক ইমাম ও খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

ঝিকরগাছার শংকরপুরে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প আওতায় মাঠ দিবসের কারিগরি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত।

কবরের জীবনটা সহজ হবে না!

Update Time : ০৭:৪২:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৪

কবরের জীবনটা সহজ হবে না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কবরের আজাব দেখানো হয়েছিলো। ফলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি কখনও কবরের চেয়ে ভয়াবহ (অন্য কোনো) দৃশ্য দেখিনি। কবরের ভয়াবহ দৃশ্য দেখার পর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। পরকালের জন্য নিজেদের প্রস্তুতে কিছু হাদিস ও দোয়া উল্লেখ করেছেন। তাহলো-
১. হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমরা মৃতদের দাফন করা বর্জন করে দেবে, এ ভয় না থাকলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম; যেন তিনি তোমাদের কবরের কিছু আজাব শুনিয়ে (দেখিয়ে) দেন।’ (মুসলিম ৭১০৬)
২. এজন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরের আজাব এবং ফেতনা থেকে বারবার পানাহ চাইতেন। তাই মুসলিম উম্মাহও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভাষায় এভাবে দোয়া করতে পারেন। তাহলো-

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই।’ (বুখারি, ৮৩২)
৩. হজরত যায়দ ইবনু সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হজরত আবু সাঈদ আল-খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলাম না, বরং আমাকে যায়দ ইবনু সাবিত বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নাজ্জার গোত্রের একটি প্রাচীর ঘেরা বাগানে তার একটি খচ্চরের উপর আরোহী ছিলেন। এ সময় আমরা তার সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ তা লাফিয়ে উঠলো এবং তাঁকে ফেলে দেওয়ার উপক্রম করলো। দেখা গেলো, সেখানে ছয়টি কিংবা পাঁচটি অথবা চারটি কবর রয়েছে।
বর্ণনাকারী বলেন, জুরাইরি এমনটিই বর্ণনা করতেন। এরপর তিনি প্রশ্ন করলেন, এ কবরবাসীদেরকে কেউ চিনে কী? তখন এক ব্যক্তি বললেন, আমি চিনি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কখন মৃত্যুবরণ করেছে? তিনি বললেন, তারা শিরকের অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ উম্মাতকে তাদের কবরের মধ্যে পরীক্ষা করা হবে। তোমরা মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা বর্জন করবে, এ আশঙ্কা না হলে আমি আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম যেন তিনি তোমাদেরকেও কবরের আজাব শুনান যা আমি শুনতে পাঁচ্ছি।
তারপর তিনি আমাদের প্রতি মনোনিবেশ করে বললেন, তোমরা সবাই জাহান্নামের আজাব থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। সাহাবাগণ বললেন, আমরা জাহান্নামের শাস্তি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।
তারপর তিনি বললেন, তোমরা সকলে কবরের শাস্তি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। সাহাবাগণ বললেন, আমরা আল্লাহর কাছে কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই।
এরপর তিনি বললেন, তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন সব প্রকার ফেতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করো। তারা বললেন, আমরা প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার ফেতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই। তিনি আবারও বললেন, তোমরা দাজ্জালের ফেতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও। সাহাবাগণ বললেন, আমরা দাজ্জালের ফেতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।’ (মুসলিম ৭১০৫)
সুতরাং কবরের আজাব থেকে বাঁচতে আল্লাহর সাহায্যের বিকল্প নেই। আল্লাহর কাছে বেশি বেশি সাহায্য প্রার্থনা করা। হাদিসের ওপর আমল করা মুমিন মুসলমানের একান্ত কাজ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কবরের আজাব থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব, সাবেক ইমাম ও খতিব কদমতলী মাজার জামে মসজিদ সিলেট।