Dhaka ১০:৪০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ মার্চ ২০২৫, ১৩ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কবরের জন্য সাড়ে তিন হাত মাটি ভিক্ষা চান তারা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৫:৩৭:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০২৩
  • ১৭৮ Time View
মোঃ যুবরাজ মৃধা পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ-
নদীতে জন্ম, নদীতেই বেড়ে ওঠা। নদীকে ঘিরেই তাদের জীবন ও জীবিকা। তারা হলেন মান্তা সম্প্রদায়ের মানুষ। যুগের পর যুগ অবহেলিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে একটি করে ঘর উপহার দিয়েছেন। কিন্তু এই সম্প্রদায়ের মানুষের ভাগ্যে মৃত্যুর পরে জোটে না সাড়ে তিন হাত মাটি। স্বজনদের মরদেহ দাফনের জন্য কবরের জায়গা পান না মান্তারা।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বুড়াগৌরাঙ্গ দারছিরা ও তেঁতুলিয়াসহ কয়েকটি নদীতে এ সম্প্রদায়ের মানুষের দেখা মেলে। রাঙ্গাবালীর চর মোন্তাজ ইউনিয়নে ১৫০টি মান্তা পরিবারের ৫শ মানুষের বাস। ভাসমান নৌকায় তারা ঘর বাঁধে, সংসার করে, জীবিকার সন্ধান করে। নিজস্ব কোনো ভূমি নেই তাদের। জোয়ার ভাটার সঙ্গে চলে তাদের জীবনের গল্প। ঘাটে ঘাটে নোঙ্গর ফেলা আবার নোঙ্গর তুলে নিয়ে অন্যত্র ছুটে চলে মান্তা সম্প্রদায়ের জীবন চক্র।
এখন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে মাথার ওপর যেমন স্থায়ী ছাদ হওয়ায় জীবন বদলানোর নতুন স্বপ্ন দেখেন তারা। তবে এখন তাদের চিন্তা শুধু একটাই, মরার পর যেন সাড়ে তিন হাত মাটিতে শরীরটা ঢাকার জন্য যেন একটু জায়গা পান।
ময়না বেগম বলেন, আমার সন্তান মারা যায় ৫ বছর আগে। সন্তান মারা যাওয়ার পরে কান্নাকাটি করেও কারো কাছে কবরের জন্য সাড়ে তিন হাত মাটি ভিক্ষা পাইনি। এখন সরকার যদি আমাদের দিকে তাকায় তাহলে মরে একটু শান্তি পাব।
আব্দুস সত্তার বলেন, আমার বাবা যখন মারা যান তখন আমি লাশ নৌকায় করে এই চর থেকে ওই চরে ঘুরেছি। আমার বাবার লাশ দাফন করার জন্য সাড়ে তিন হাত মাটি কেউও দেয়নি। পরে নদীর পারে লাশ দাফন করি। সরকার আমাদের থাকার জায়গা দিয়েছে, ভাসমান স্কুল দিয়েছে। কবরের জন্য একটু জায়গা নির্ধারণ করে দিলে খুব উপকার হত।
হারুন সরদার বলেন, কাইন্দা কাইন্দা চোহের পানি দিয়া যদি গাং বানাই তারপরও আমাগো মরার পর জায়গা দেয় না। কতো মানষের হাত পাও ধরি তারপরও আমাগো কোনো জায়গা দেয় নাহ।
ভাসমান মান্তা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব খান বলেন, এখানকার মানুষ নৌকায় করে বড় হয়ে থাকে। আমি অনেক দেখেছি এখানকার মানুষের মৃত্যুর পরে মরদেহ দাফন নিয়ে কত কষ্ট করতে হয়। স্থানীয়দের যে জায়গা রয়েছে তাদের কাছে অনুরোধ করতে হয়। মৃত্যুর পরে তাদের যে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সেটা সত্যিই খুব কষ্টের। অনেক সময় জায়গা না পেয়ে তারা আপনজনকে নদীর পাড়ে দাফন করে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভারপ্রাপ্ত মোহাম্মদ সালেক মূহিদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না, আপনার মাধ্যমে জানলাম। অবশ্যই এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করব। এই ইউনিয়নের জন্য সরকারিভাবে কবরস্থানের জায়গা করা হবে। আমাদের যে সরকারি খাস জমি রয়েছে সেখানে ব্যবস্থা করা হবে।
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

আলোচিত

বাসদ ময়মনসিংহ মহানগর শাখার আয়োজনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত

কবরের জন্য সাড়ে তিন হাত মাটি ভিক্ষা চান তারা

Update Time : ০৫:৩৭:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুলাই ২০২৩
মোঃ যুবরাজ মৃধা পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধিঃ-
নদীতে জন্ম, নদীতেই বেড়ে ওঠা। নদীকে ঘিরেই তাদের জীবন ও জীবিকা। তারা হলেন মান্তা সম্প্রদায়ের মানুষ। যুগের পর যুগ অবহেলিত থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদেরকে স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে একটি করে ঘর উপহার দিয়েছেন। কিন্তু এই সম্প্রদায়ের মানুষের ভাগ্যে মৃত্যুর পরে জোটে না সাড়ে তিন হাত মাটি। স্বজনদের মরদেহ দাফনের জন্য কবরের জায়গা পান না মান্তারা।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বুড়াগৌরাঙ্গ দারছিরা ও তেঁতুলিয়াসহ কয়েকটি নদীতে এ সম্প্রদায়ের মানুষের দেখা মেলে। রাঙ্গাবালীর চর মোন্তাজ ইউনিয়নে ১৫০টি মান্তা পরিবারের ৫শ মানুষের বাস। ভাসমান নৌকায় তারা ঘর বাঁধে, সংসার করে, জীবিকার সন্ধান করে। নিজস্ব কোনো ভূমি নেই তাদের। জোয়ার ভাটার সঙ্গে চলে তাদের জীবনের গল্প। ঘাটে ঘাটে নোঙ্গর ফেলা আবার নোঙ্গর তুলে নিয়ে অন্যত্র ছুটে চলে মান্তা সম্প্রদায়ের জীবন চক্র।
এখন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে মাথার ওপর যেমন স্থায়ী ছাদ হওয়ায় জীবন বদলানোর নতুন স্বপ্ন দেখেন তারা। তবে এখন তাদের চিন্তা শুধু একটাই, মরার পর যেন সাড়ে তিন হাত মাটিতে শরীরটা ঢাকার জন্য যেন একটু জায়গা পান।
ময়না বেগম বলেন, আমার সন্তান মারা যায় ৫ বছর আগে। সন্তান মারা যাওয়ার পরে কান্নাকাটি করেও কারো কাছে কবরের জন্য সাড়ে তিন হাত মাটি ভিক্ষা পাইনি। এখন সরকার যদি আমাদের দিকে তাকায় তাহলে মরে একটু শান্তি পাব।
আব্দুস সত্তার বলেন, আমার বাবা যখন মারা যান তখন আমি লাশ নৌকায় করে এই চর থেকে ওই চরে ঘুরেছি। আমার বাবার লাশ দাফন করার জন্য সাড়ে তিন হাত মাটি কেউও দেয়নি। পরে নদীর পারে লাশ দাফন করি। সরকার আমাদের থাকার জায়গা দিয়েছে, ভাসমান স্কুল দিয়েছে। কবরের জন্য একটু জায়গা নির্ধারণ করে দিলে খুব উপকার হত।
হারুন সরদার বলেন, কাইন্দা কাইন্দা চোহের পানি দিয়া যদি গাং বানাই তারপরও আমাগো মরার পর জায়গা দেয় না। কতো মানষের হাত পাও ধরি তারপরও আমাগো কোনো জায়গা দেয় নাহ।
ভাসমান মান্তা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব খান বলেন, এখানকার মানুষ নৌকায় করে বড় হয়ে থাকে। আমি অনেক দেখেছি এখানকার মানুষের মৃত্যুর পরে মরদেহ দাফন নিয়ে কত কষ্ট করতে হয়। স্থানীয়দের যে জায়গা রয়েছে তাদের কাছে অনুরোধ করতে হয়। মৃত্যুর পরে তাদের যে ভোগান্তিতে পড়তে হয় সেটা সত্যিই খুব কষ্টের। অনেক সময় জায়গা না পেয়ে তারা আপনজনকে নদীর পাড়ে দাফন করে।
রাঙ্গাবালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভারপ্রাপ্ত মোহাম্মদ সালেক মূহিদ বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না, আপনার মাধ্যমে জানলাম। অবশ্যই এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করব। এই ইউনিয়নের জন্য সরকারিভাবে কবরস্থানের জায়গা করা হবে। আমাদের যে সরকারি খাস জমি রয়েছে সেখানে ব্যবস্থা করা হবে।